South Dinajpur University: নামেই University, রাজ্যের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই কোনও উপাচার্য, নেই স্থায়ী অধ্যাপক, নেই নিজস্ব ভবন
South Dinajpur University: অন্ধকারে শতাধিক পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ। কিছু বছর আগে পথ চলা শুরু হলেও এখনও সেভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছুই গড়ে ওঠেনি। নিজস্ব ভবন তো নেই, এমনকি ভবন নির্মানের আর্থিক বরাদ্দও হয়নি বলে খবর।
বালুরঘাট: নামেই বিশ্ববিদ্যালয়। বছর চারেক আগে তৈরি হওয়া দক্ষিণ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের (South Dinajpur University) এখনও পর্যন্ত নেই নিজস্ব কোনও ভবন৷ বাড়ি ভাড়া করে চলছে অফিস৷ ক্লাস চলছে অন্য কলেজে। কোনও রকমে টেনেটুনে চলা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত দেড় মাস ধরে নেই উপাচার্য। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয় অভিভাবকহীন অবস্থায় রয়েছে। এমনকি সমস্ত ধরনের কাজ প্রায় বন্ধের মুখে৷ পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের (University) কোনও কর্মীরাই পাচ্ছেন না বেতন, অভিযোগ রয়েছে এমনটাও। কার্যত দক্ষিণ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয় তুলে দেওয়ার মতো প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে, বলছেন কেউ কেউ।
কিছু বছর আগে পথ চলা শুরু হলেও এখনও সেভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছুই গড়ে ওঠেনি। নিজস্ব ভবন তো নেই, এমনকি ভবন নির্মানের আর্থিক বরাদ্দ হয়নি বলে খবর। আপাতত বালুরঘাট মহিলা কলেজে এবং বালুরঘাট কলেজে ক্লাস চলছে। এমনকি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই নিজস্ব স্ট্যাটুট। এমনকি প্রাথমিভাবে যে কাউন্সিল গঠন করতে হয়, তাও করা হয়নি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। নেই স্থায়ী কর্মী, অধ্যাপক, কিছুই। থাকার মধ্যে ছিলেন শুধু মাত্র উপাচার্য। কিন্তু গত দেড় মাস আগে উপাচার্য পদে সঞ্চারী রায় মুখোপাধ্যায়ের পদত্যাগ করার পর থেকে উপাচার্যহীন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পড়ে রয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয়। আর তার ফলে প্রবল অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া প্রায় ১৫০ পড়ুয়ার বর্তমান ভবিষ্যত অন্ধকারে
এ দিকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া প্রায় ১৫০ পড়ুয়ার বর্তমান ভবিষ্যত অন্ধকারে। না মিলছে পরীক্ষার রেজাল্ট, না মিলছে শংসাপত্র। অভিভাবকহীন হয়ে পড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন থেকে শুরু করে কর্মরত অস্থায়ী কর্মী ও অতিথি অধ্যাপকদের বেতন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আগামী জুন মাসেই রাজ্যে স্নাতক স্তরের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হওয়ার কথা রয়েছে। তারপরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন করে কোনও পড়ুয়া ভর্তি হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ বাড়ছে। এক কথায়, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে যা পরিস্থিতি, তাতে করে আগামীতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ কার্যত অন্ধকারে বলেই মনে করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি মাসে ভাষা দিবসে গঙ্গারামপুরে এসে জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে কোথায় তৈরি হবে বিশ্ববিদ্যালয় তা নিয়ে তৈরি হয় জোর জল্পনা। গঙ্গারামপুর ও বালুরঘাটে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমি দেখে প্রশাসন। যদিও পরে বালুরঘাট ব্লকের ডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের মাহিনগর কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভেতরে থাকা ১১.০৭ একর জমি চিহ্নিত করা হয়। সেখানে ওই বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার প্রস্তুতি শুরু করে রাজ্য সরকার ও জেলা প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির কাজে রাজ্য সরকার প্রথম ধাপে প্রায় ২ কোটি ৬২ লক্ষ ৫৯ হাজার টাকা বরাদ্দ করে।
নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ এরও অনুমোদন হয়নি
পূর্ত দপ্তরের মাধ্যমে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে সেখানে অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে সীমানাপ্রাচীর নির্মানের কাজ। তবে ওই পর্যন্তই, অর্থের অভাবে যেমন সীমানা প্রাচীর, গেট নির্মাণের কাজ শেষ করা যায়নি এখনও, তেমনই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ এরও অনুমোদন হয়নি। তবে অর্থ অনুমোদন মিললেই যে ওই জমিতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ হবে তাও হলফ করে বলা যায় না। কারণ, চিহ্নিত জমিটিতে ভবন নির্মাণের ছাড়পত্র দেয়নি বালুরঘাট বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এই জটিলতা থাকলেও, বালুরঘাট শহরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে অস্থায়ী ক্যাম্পাস গড়ে কাজ শুরু করে দেন৷
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তে নিয়োগ হওয়া দক্ষিণ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হন সঞ্চারী রায় মুখার্জি। মূলত তারই ইচ্ছের জোরেই গত শিক্ষাবর্ষ থেকেই পঠন পাঠন শুরু হয়ে যায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। অঙ্ক, ইংরাজি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান এই তিনটি বিষয়ে প্রায় ১৫০ ছাত্রছাত্রী নিয়ে পঠনপাঠন শুরু হয়ে যায়। কর্মী ও স্থায়ী অধ্যাপক নিয়োগের পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারলেও, তার অনুরোধে বাইরের বিভিন্ন কলেজে অধ্যাপক ও অবসরপ্রাপ্ত বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপকরা ক্লাস নেন। ইতিমধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা চতুর্থ সেমেস্টারের পরিক্ষাও দিয়ে দিয়েছে।
কিন্তু চলতি বছরের গত ১৪ মার্চ থেকে হাইকোর্টের নির্দেশে উপাচার্যের পদ থেকে সঞ্চারি রায় মুখ্যোপাধ্যায় পদত্যাগ করেন। যার ফলে অচল অবস্থা তৈরি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৫ জন অস্থায়ী কর্মী ও ৪০ অতিথি অধ্যাপকদের বেতন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কারণ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিগনেচার অথরিটি একমাত্র উপাচার্য ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এহেন বেহাল দুর্দশায় ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও ক্ষোভ বাড়ছে। অনেক ছাত্রই এই বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে অন্যত্র যেতে শুরু করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অচল অবস্থার কথা গত মাসেই জানতে চেয়েছিলেন রাজ্যপাল তথা আচার্য। তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পুরো বিষয়টি জানানো হলেও, আজ পর্যন্ত উপাচার্য নিয়োগ হয়নি বলে জানালেন বালুরঘাট কলেজের অধ্যক্ষ তথা দক্ষিণ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী রেজিস্টার পঙ্কজ কুন্ডু। যদিও এনিয়ে সংবাদ মাধ্যমের সামনে কিছু বলতে চাননি কলেজের অস্থায়ী কর্মীরা।
পাশে থাকার আশ্বাস সুকান্তর
তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিনান্স, ভর্তি, ফলপ্রকাশ সংক্রান্ত সমস্ত বিষয় উপাচার্যের সই ছাড়া সম্ভব নয়। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীদের বেতন যেমন বন্ধ, তেমনি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা যাচ্ছে না। আগামী মাস থেকে যে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হবে, তাও কিভাবে হবে, বুঝতে পারছি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অচল অবস্থা কাটাতে হলে দ্রুত উপাচার্য নিয়োগ করতেই হবে।” এদিকে এবিষয়ে বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার জানান, এ নিয়ে তার কাছে কোনও সহযোগিতা চাইলে তিনি সবরকমভাবে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছেন। প্রয়োজনে রাজ্যপালের দ্বারস্থ হবেন বলেও জানিয়েছেন।