TV9 Bangla Conclave: উত্তরবঙ্গ ভাগই কি একমাত্র সমাধান? ‘উত্তরের খোঁজে’ উত্তরে TV9 বাংলা

North Bengal: বঞ্চনার অভিযোগ হোক, বা উন্নয়নের স্বার্থেই হোক... সত্যিই কি এই উত্তরবঙ্গ ভাগই সমাধানের একমাত্র রাস্তা? সেই 'উত্তরের খোঁজে' আজ উত্তরবঙ্গে টিভি নাইন বাংলার বিশেষ কনক্লেভ।

TV9 Bangla Conclave: উত্তরবঙ্গ ভাগই কি একমাত্র সমাধান? 'উত্তরের খোঁজে' উত্তরে TV9 বাংলা
টিভি নাইন বাংলার কনক্লেভ
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 29, 2023 | 10:35 AM

শিলিগুড়ি: উত্তরবঙ্গ ভাগের দাবি সাম্প্রতিক অতীতে বার বার শোনা গিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে উত্তরবঙ্গের প্রতি বঞ্চনার। বঞ্চনার অভিযোগ হোক, বা উন্নয়নের স্বার্থেই হোক… সত্যিই কি এই উত্তরবঙ্গ ভাগই সমাধানের একমাত্র রাস্তা? সেই ‘উত্তরের খোঁজে’ আজ উত্তরবঙ্গে টিভি নাইন বাংলার বিশেষ কনক্লেভ। কনক্লেভে উপস্থিত ছিলেন শিলিগুড়ির প্রাক্তন মেয়র অশোক ভট্টাচার্য, তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, বিজেপি নেতা তথা শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ বিপ্লব সেনগুপ্ত। তাঁদের থেকে উত্তরের মানুষের ভাবনার কথা জেনে নিলেন টিভি নাইন বাংলার ম্যানেজিং এডিটর অমৃতাংশু ভট্টাচার্য ও কনসাল্টিং এডিটর অনির্বাণ চৌধুরী।

রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের অবশ্য সাফ কথা, উত্তরবঙ্গের মানুষ কখনোই চায় না উত্তরবঙ্গ ভাগ হয়ে যাক। নিজের বক্তব্যের সমর্থনে, শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের ভোট বা শিলিগুড়ি পুরনিগমের ভোটের কথা তুলে ধরেন তিনি। তুলে ধরেন রাজ্যের বাকি পুরভোটের কথাও। রবীন্দ্রনাথবাবুর কথায়, বঙ্গভঙ্গের জিগিরকে সামনে রেখে এই নির্বাচন হয়েছিল। তাতে দেখা গিয়েছে, যারা বঙ্গভঙ্গের সুড়সুড়ি দিয়েছে, তাদের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি বলেন, ‘মানুষের রায়ই শেষ কথা। মানুষের রায় আমরা ভোটের মাধ্যমেই বুঝতে পারি।’ উল্টে একুশের নির্বাচনে জিততে না পেরে বিজেপি ‘পিছনের দরজা দিয়ে বাংলাকে দখল করতে’ বাংলা ভাগের চক্রান্ত করছে বলেই মত তাঁর।

যদিও রবীন্দ্রনাথ ঘোষ মানুষের রায়ের যে কথা বলছেন, তার সঙ্গে পুরোপুরি সহমত নন বিজেপি নেতা শঙ্কর ঘোষ। বিজেপি বিধায়কের বক্তব্য, ‘জণগনের রায় বা নির্বাচনের রায় পরিবর্তনশীল। সেই চোখ দিয়ে বিষয়টিকে বিচার করা হলে, তা আসলে উপর থেকে গোটা বিষয়টি দেখা হবে।’ উত্তরবঙ্গের মানুষের বঞ্চনার কথা বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেন, দার্জিলিঙের কুয়াশা, ঘুমের রেলস্টেশন, ডুয়ার্সের চা বাগানের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে উত্তরবঙ্গকে উপভোগ করা এক বিষয়। আর আলিপুরদুয়ার বা কোচবিহার থেকে একজন অসুস্থ রোগী বা একজন পরীক্ষার্থীকে দেড়-দুই দিন ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে বাংলার প্রাণকেন্দ্র কলকাতায় পৌঁছাতে যে যন্ত্রণা হয়, তা সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেই যন্ত্রণা ও বেদনার সঙ্গে সৌন্দর্যকে মিলিয়ে দিয়ে যে কথাগুলি বার বার বলার চেষ্টা হয়, তা ঠিক নয় বলেই মত শঙ্কর ঘোষের।

তাঁর সোজাসাপ্টা প্রশ্ন, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর উত্তরবঙ্গ কী পেল? উত্তরবঙ্গ কেন এইমস পেল না? কেন উত্তরকন্যায় সচিবদের বদলে মাকড়সা ঘুরে বেড়ায়? সেই প্রশ্নই এদিন তুলে ধরেন তিনি। শঙ্কর ঘোষের কথা, ‘রাজ্যভাগের প্রসঙ্গ পরে আসুক। আগে আমাদের বেদনাকে কেউ স্পর্শ করে দেখার চেষ্টা করুক।’ দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রিক রাজ্য ব্যবস্থা উত্তরবঙ্গের মানুষ চান না বলেও মত শঙ্কর ঘোষের।

শিলিগুড়ির প্রাক্তন মেয়র অশোক ভট্টাচার্যও উত্তরবঙ্গের মানুষের মধ্যে বঞ্চনা বোধের কথা অস্বীকার করছেন না। বললেন, ‘অনেকেই বলেন উত্তরবঙ্গকে নিয়ে আলাদা রাজ্যের কথা। কেউ বলেন দার্জিলিংকে নিয়ে আলাদা রাজ্যের কথা, কেউ বলেন কোচবিহারকে নিয়ে আলাদা রাজ্যের কথা। এই নিয়ে আবেগ নিশ্চয়ই রয়েছে। তাঁদের মধ্যে বঞ্চনা বোধও রয়েছে।’ দক্ষিণবঙ্গের মানুষের একাংশের সম্পর্কে নিজের ধারণার কথা তুলে ধরে অশোকবাবু বলেন, ‘কলকাতা বা দক্ষিণবঙ্গের অনেকেই মনে করেন, আমরা বোধ হয় ওদের মতো সাজিয়ে গুছিয়ে কথা বলতে পারি না। এরকম একটি বিষয় আছে, এটিকে অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু তার মানে কি আলাদা হয়ে যেতে হবে? তা নয়।’

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ বিপ্লব সেনগুপ্ত আবার মনে করছেন, উত্তরবঙ্গ ভাগ করতে চাওয়া ও না চাওয়ার মাঝামাঝি অনেকগুলি চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। তিনি বলছেন, ‘মানুষের অভিমানের থেকে বিচ্ছিন্নতার জন্ম নেয়। তেমনই রাজনৈতিক দলের দূরদর্শিতার অভাবেও বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়।’ তাঁর ব্যাখ্যা, যিনি সাংসদ, তিনি তাঁর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সবগুলি বিধানসভা এলাকারই সাংসদ। সেই বিষয়টির দিকেও নজর দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন তিনি।