Hooghly News: অধ্যাপক থেকে সাইকেল চোর! গণপিটুনির হাত থেকে ব্যক্তিকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা পুলিশ আধিকারিকের

TV9 Bangla Digital

TV9 Bangla Digital | Edited By: Sukla Bhattacharjee

Updated on: Mar 27, 2023 | 12:33 AM

সাইকেল চোর সন্দেহে এক ব্যক্তিকে বেঁধে রেখে গণপিটুনি দিচ্ছিলেন গোঘাটের নবাসন এলাকার বাসিন্দারা। এই সাইকেল চোরের আড়ালে রয়েছে এক অন্য মানুষ।

Hooghly News: অধ্যাপক থেকে সাইকেল চোর! গণপিটুনির হাত থেকে ব্যক্তিকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা পুলিশ আধিকারিকের
অধ্যাপক থেকে সাইকেল চোরের তকমা!

Follow us on

আরামবাগ: পুলিশের নাম শুনলে অনেকেরই ভ্রু কুঁচকে ওঠে। উৎকোচ নেওয়া থেকে শাসকদলের তোষামোদ করার মতো একাধিক অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। তবে এবার এক পুলিশ আধিকারিকের মানবিক কাজের দৃষ্টান্ত হল হুগলি জেলার গোঘাট। অধ্যাপক থেকে সাইকেল চোর তকমা পাওয়া এক অসহায় ব্যক্তিকে জনতার রোষানল থেকে কেবল উদ্ধার করা নয়, তাঁর নাম-পরিচয়-ঠিকানা খুঁজে বের করে চিকিৎসার বন্দোবস্ত করতে উদ্যত হলেন গোঘাট থানার ওসি (Goghat OC) শৈলেন্দ্র নাথ উপাধ্যায়। শুনতে সিনেমার কাহিনীর মতো মনে হলেও রবিবার বাস্তবে এমনই ঘটনার সাক্ষী থাকল গোঘাটের নবাসন এলাকা।

ঠিক কী ঘটেছিল? সাইকেল চোর সন্দেহে এক ব্যক্তিকে বেঁধে রেখে গণপিটুনি দিচ্ছিলেন গোঘাটের নবাসন এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, ওই ব্যক্তি একজনের বাড়িতে ঢুকে একটি সাইকেল চুরি করে নিয়ে পালান। কিছুক্ষণ পর আবার সাইকেলটি সেখানে ফিরিয়ে দিতে গিয়েই হাতেনাতে ধরা পড়ে যান। এরপরই তাঁরা ওই ব‍্যক্তিকে বেঁধে রেখে গণপিটুনি দেন। গোঘাট থানাতেও খবর দেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এর আগে এলাকায় বেশ কয়েকটি সাইকেল চুরি হয়েছে। সেই ঘটনার সঙ্গেও ওই ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারেন।

সাইকেল চোর সন্দেহে গণপিটুনির খবর পেয়েই গোঘাট থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে। তারপর সাইকেল চুরির তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, এই সাইকেল চোরের আড়ালে রয়েছে এক অন্য মানুষ। একটা করুণ কাহিনী আছে। এরপর গোঘাট থানার ওসি শৈলেন্দ্র নাথ উপাধ্যায় নিজে মাঝবয়সি ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, উদ্ধার হওয়া ওই ব্যক্তির নাম সঞ্জয় রায়। বয়স আনুমানিক ৪২ বছর। বাড়ি কামারপুকুরের শ্রীপুর এলাকায়। তিনি আদতে মানসিক ভারসাম্যহীন। তাই এখানে-সেখানে ঘুরে বেড়ান। দীর্ঘদিন স্নান নেই। মাথার চুলে জটা ধরেছে। খাওয়া-দাওয়া হয়তো ঠিকঠাক নেই। তবে বর্তমান সমাজ-রাজনীতি সম্পর্কে তাঁর সম্যক জ্ঞান রয়েছে। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে তাঁর বয়ানে উঠে আসে সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনাবলী। এমনকি রাহুল গান্ধীকে সাংসদ পথ থেকে বাদ দেওয়ার ঘটনার কথাও তিনি পুলিশকে জানান।

সঞ্জয় রায়ের বয়ান শুনেই ওসি শৈলেন্দ্র নাথ উপাধ্যায় বুঝতে পারেন, এই ব্যক্তি সাইকেল চোর হতে পারেন না। এরপর তিনি নিজে উদ্যত হয়ে তদন্তে নামেন। তারপরই এই সাইকেল চোরের প্রকৃত পরিচয় উদ্ঘাটিত হয়। যা শুনে পুলিশকর্মী থেকে সাধারণ মানুষ- সকলেরই চোখ কপালে উঠেছে!

আদতে কে সঞ্জয় রায়? তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, সঞ্জয়ের বাবা শ্যামল কুমার রায় কামারপুকুর শ্রীরামকৃষ্ণ সারদা বিদ্যামহাপীঠের কর্মী ছিলেন। আর এই মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি সঞ্জয় অত্যন্ত বুদ্ধিমান। তিনি কল্যানী জে.আই.এস ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যাপক ছিলেন। পরিবারেরও একটা ঐতিহ্য আছে। কিন্তু, কী ভাবে এই অধ্যাপক মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে গেলেন, তা কেউ জানেন না।

পুলিশ সঞ্জয় রায়ের কাছে জানতে চেয়েছিল, কেন তিনি সাইকেলটা নিয়েছিলেন? তার জবাবে সঞ্জয় বলেন, “আমি কেন হেঁটে যাব? তাই সাইকেলটা ছিল সেটাই চেপে পড়লাম। কী করব। আমি চুরি-টুরি করিনি।” সঞ্জয়ের এই জবাব শুনেই ওসি শৈলেন্দ্র নাথ উপাধ্যায় নিশ্চিত হয়ে যান, এই ব্যক্তি কখনও সাইকেল চুরি করতে পারেন না। এরপর তিনি নিজে উদ্যত হয়ে সঞ্জয়ের মাথার জটাধরা চুল কাটিয়ে, স্নান করিয়ে, নতুন জামা-কাপড় পরিয়ে দেন। দুপুরের মধ্যাহ্নভোজও করান। একজন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যাপকের এই করুণ অবস্থার চিকিৎসা করানো দরকার বলেই মনে করেন তিনি।

এলাকাবাসীর সঞ্জয়কে দেওয়া ‘সাইকেল চোর’ তকমা ঝেড়ে ফেলে ওসি উপাধ্যায় আরও বলেন, “একজন অধ্যাপককে আমি কী করে চোর বলব! উনি চোর নন।উনি উচ্চ শিক্ষিত। উনি অধ্যাপক। আজ মানসিক ভারসাম্যহীন। তাই ওঁনার চিকিৎসার প্রয়োজন। আমি ওঁনাকে নিয়ে এসেছি। যাতে ওঁনার চিকিৎসা করানো যায় সেটাই আমি দেখছি।”

Latest News Updates

Related Stories
Most Read Stories

Click on your DTH Provider to Add TV9 Bangla