Bengal Flood: বৃষ্টিতে পচে গিয়েছে জমি, ঘর ভরেছে জলে, ‘লক্ষ্মীলাভের’ আশা ছেড়েছেন চাষিরা!
Price Hike: দামোদরের নিম্ন উপত্যকা ও নদ সংলগ্ন এলাকায় চাষের জন্য মরসুমি সবজির বীজ বুনতে শুরু করেছিলেন চাষিরা। কিন্তু জল জমে পচতে শুরু করেছে গোটা জমি। নষ্ট হয়েছে সমস্ত সবজি
হুগলি: বঙ্গ শিয়রে জোড়া ঘূর্ণাবর্ত ও বন্যার জোড়াফলার বিপদ কাটাতে না কাটাতেই ফের নিম্নচাপের (Depression) জেরে বৃষ্টিপাত ও বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বন্যার ক্ষত সরিয়ে যখন নতুন উদ্যমে চাষাবাদ শুরু করলেন কৃষকেরা তখনই ফের বর্ষা। নতুন করে জল ঢোকায় দামোদরের নিম্ন উপত্যকা-সহ একাধিক এলাকায় বিঘার পর বিঘা জমি। অন্যদিকে, শ্রীরামপুর-সহ একাধিক এলাকা চলে গিয়েছে জলের তলায়।
দামোদরের নিম্ন উপত্যকা ও নদ সংলগ্ন এলাকায় চাষের জন্য মরসুমি সবজির বীজ বুনতে শুরু করেছিলেন চাষিরা। কিন্তু জল জমে পচতে শুরু করেছে গোটা জমি। নষ্ট হয়েছে সমস্ত সবজি। ক্ষেতের ফসল পচে গিয়েছে ক্ষেতেই। বিশেষ করে তারকেশ্বর ,ধনিয়াখালি,জাঙ্গিপাড়া-সহ বিভিন্ন ব্লকে যে সব চাষিরা সবজি চাষের উপরেই নির্ভরশীল সেখানে এভাবে ফসল নষ্ট হওয়ায় মাথায় হাত তাঁদের। নতুন করে ধারদেনা করে যে চাষাবাদ শুরু করবেন সে সময়ও আর নেই। শুধু তাই নয়, চাষাবাদ শুরু করলেও ফলন যে হবেই তারও নিশ্চয়তা নেই। এই পরিস্থিতিতে কী করেই বা পেটের ভাত জুটবে তা নিয়েও সন্দিহান সকলে।
এক কৃষকের কথায়, “ঝাড়খণ্ডের প্রভাবে যে বন্যা হল, তাতে সব ধূলিসাত্ হয়ে গেল। আবার কাঁচা আনাজের চাষ করছিলাম। এখন সর্বস্বান্ত। সব পচে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। খাবারটাও জুটবে না এবছর। টুকিটাকি মরসুমি চাষ শুরু করেছিলাম। ফুলকুপি, বাঁধাকপি, শুঁটি, সবই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এ বছর আমাদের সব শেষ।” ওই কৃষক আরও বলেন, “সবজিতে এরপর হাত দেওয়া যাবে না। মানুষ কী খাবে কী করে চলবে বলতে পারব না। কারণ যা পরিস্থিতি তাতে আমরা দাম বাড়াতে বাধ্য। লাভের টাকা তো দূর অন্তত খরচটুকু তুলতে পারলেই চলবে।”
একদিকে যখন আনাজ সঙ্কট, তখন টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে শ্রীরামপুর-সহ একাধিক এলাকা চলে গিয়েছে জলের তলায়। বাড়িতেও ঢুকেছে জল। এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুরসভাকে বারবার জানানো সত্ত্বেও কোনও পদক্ষেপ করেনি। জমা জল থেকে পচা দুর্গন্ধ বেরতে শুরু করেছে। তবুও হুঁশ ফেরেনি পুরসভার। যদিও পুরপ্রশাসক গৌরমোহন দে জানিয়েছেন, পাম্প খারাপ হওয়ায় এই বিপত্তি। কিছু এলাকায় ভারী বর্ষণের জন্য জল জমেছে। তবে নিকাশি ব্যবস্থায় নজর দেওয়া হচ্ছে। মূলত গঙ্গার নাব্যতা কমে যাওয়ায় এই বিপত্তি।
শুধু, শ্রীরামপুর নয়, জলমগ্ন হয়েছে একাধিক এলাকা। বাঁকুড়ায় ভেঙে পড়েছে একাধিক সেতু। ওদিকে উত্তরবঙ্গেও দাপাচ্ছে বৃষ্টি। রাতভর অবিরাম বৃষ্টি (Weather Update) হয়েছে কলকাতা-সহ উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গায়। বাংলা এবং ওড়িশার উত্তর অংশে নিম্নচাপের জেরে মঙ্গলবারও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা-সহ দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায়।
হাওয়া অফিস বলছে, লক্ষ্মীপুজো অর্থাৎ বুধবার অবধি এমনটাই থাকবে আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি। কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, ঝাড়গ্রাম ও দুই মেদিনীপুরে ভারী বৃষ্টি হতে পারে মঙ্গলবার। এই জেলাগুলিতে হলুদ সতর্কতা জারি রয়েছে।
অন্যদিকে মঙ্গলবার কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারের বেশ কিছু জায়গায়। কমলা সতর্কতার অর্থ ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস। অন্যদিকে হলুদ সতর্কতা রয়েছে মালদহ, উত্তর দিনাজপুর ও দক্ষিণ দিনাজপুরে। হলুদ সতর্কতা মানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা।
হাওয়া অফিস মনে করছে, বুধবারের পর থেকে নিম্নচাপের প্রভাব কমতে শুরু করবে। ফলে টানা বৃষ্টি থেকে মুক্তি মিলতে পারে। তবে কোনও ভাবেই পুরোপুরি দুর্যোগ কেটে রোদ ঝলমলে আকাশ দেখা যাবে, এমন পূর্বাভাস এখনও হাওয়া অফিসের তরফে দেওয়া হয়নি। বিক্ষিপ্ত ভাবে বৃষ্টি চলবেই।