Hooghly: দৃষ্টিনেই দুই চোখে, GRF পড়ে অধ্যাপনা বেছে নিতে চাইছেন অনুপ
Hooghly: অনুপের মা উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। স্বামী ছেড়ে চলে গিয়েছেন সেই কবে। তারপর ২০০১ সালে সন্তানদের হাত ধরে চলে আসেন হুগলিতে। বর্তমানে গৌরহাটিতে এক চিলতে টালির বাড়িতেই দুই সন্তানকে নিয়েই থাকে গীতা। যদিও তার দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে।
ভদ্রেশ্বর: দু’চোখে নেই দৃষ্টি। তবে হার মানতে শেখেননি তিনি। জীবনে যতই প্রতিকূলতা আসুক না কেন সবকিছুকেই জয় করে এগিয়ে চলেছেন নিজের লক্ষ্যে। হুগলির ভদ্রেশ্বরের গৌরহাটির বছর আঠাসের অনুপ সিং। মাত্র নয় মাস বয়সে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দু’টি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। প্রথমে বাঁ চোখ ও পরে ডান চোখের উপরে প্রভাব পড়ে। চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলেও তার দৃষ্টিশক্তি ফেরানো যায়নি। তবে তাতেও থেমে থাকেননি। নিজের লক্ষ্যে অবিচল থেকে পড়াশোনায় একের পর এক সাফল্য এনেছেন। বর্তমানে GRF অর্থাৎ জুনিয়র রিসার্চ ফেলোসিফ নিয়ে পড়াশোনা করছে। আগামী জানুয়ারি মাসের ১ থেকে ১৯ তারিখে পরীক্ষা। এখন চলছে তারই প্রস্তুতি।
অনুপের মা উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। স্বামী ছেড়ে চলে গিয়েছেন সেই কবে। তারপর ২০০১ সালে সন্তানদের হাত ধরে চলে আসেন হুগলিতে। বর্তমানে গৌরহাটিতে এক চিলতে টালির বাড়িতেই দুই সন্তানকে নিয়েই থাকে গীতা। যদিও তার দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছোট ছেলে কম্পিউটার নিয়ে পড়াশোনা করছে। বড় ছেলে অনুপ ছোট থেকেই দৃষ্টিহীন। তাঁকে পড়াশোনা শেখাতে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হয় তাঁকে।
হুগলিতে আসার পরে সেখানে সিদাম সাহার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তিনি শ্রীরামপুর সেবা কেন্দ্র ও আই ব্যাঙ্কের কর্মী। সেখানেই অনুপকে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসার তাঁকে দেখে জানিয়ে দেন তাঁর চোখের দৃষ্টি ফেরানো অসম্ভব। তখন সিদামবাবু অনুপকে উত্তরপাড়া ব্লাইন্ড স্কুলে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করেন। সেখানে অষ্টম শ্রেণি পাস করার পর ২০১৪ সালে ক্যালকাটা ব্লাইন্ড স্কুলে ভর্তি হয়। সেখান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পাশ করেন তিনি। ২০১৯ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান অধিকার করেন। তারপর স্নাতক। এরপর মাস্টার ডিগ্রি করেন। বিএড-এর জন্য রবীন্দ্রভারতীতে আবেদন করেছে অনুপ। বর্তমানে জিআরএফ অর্থাৎ জুনিয়র রিসার্চ ফেলোসিফা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে কম্পিউটার ও ক্যাসিও বাজাতেও পারদর্শী অনুপ।
অনুপ বলেন, “চোখের জন্য একবার হায়দরাবাদে অপারেশন করেছিলাম। কিন্তু ডাক্তার জানিয়ে দেয় নার্ভ শুকিয়ে গিয়েছে। তাই আর দৃষ্টি ফিরে পাওয়া যাবে না। তা নিয়েই পড়াশোনা চালিয়ে যাই। পলিটিক্যাল সাইন্স নিয়ে মাস্টার্স করেছি। ২০২৪ সালের নেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। বর্তমানে ভারতের বিদেশ নীতি নিয়ে পড়াশোনা করছি। জিআরএফ পেলে স্কলারশিপ পেতেও সুবিধা হবে। তবে আমার পড়াশোনার জন্য রেকর্ডিং মেশিন কিনতে হয়েছে। ২৩৮ পাতার বই ৩২ জিবি পেনড্রাইভে লোড করা আছে। এছাড়া পড়াশোনার জন্য অ্যাপ ব্যবহার করি ও মাঝেমধ্যে ইউটিউব দেখেও পড়াশোনা করি। মা আমাকে অনেক সাহায্য করে তার সঙ্গে সিদাম মামা তিনিও আমাকে অনেক সাহায্য করেন । আবার কখনো বন্ধুদের থেকেও সাহায্য নিই। ভবিষ্যতে অধ্যাপক হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে।”
অনুপের মা গীতার সিং বলেন, “রান্নার কাজ করে ছেলেকে পড়াশোনা শিখিয়েছি। ছেলেকে পড়ানোর জন্য ৮০ হাজার টাকা লোন নিয়েছি। এরপরেও আরও দরকার। তবে সিদামদাকে অনেক ধন্যবাদ জানাই তিনি যদি না থাকতেন আর ছেলে এই জায়গায় পৌঁছতে পারত না।” সিদাম সাহা বলেন, “ওকে আমি ব্লাইন্ড স্কুলে নিয়ে ভর্তি করেছিলাম। তবে ওর যে চোখের সমস্যা রয়েছে তাও অনেক জায়গায় দেখানো হয়েছিল। কিন্তু তার চোখের দৃষ্টি ফিরিয়ে দিতে পারেনি। এটা আমার একটা আক্ষেপ। পড়াশুনায় খুব ভালো, আগামী দিনে আরও বড় হোক।”