লোকসভা নির্বাচনে আবহে রাজ্যে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ, শুক্রবার হুগলির আরামবাগে ছিল তাঁর সভা। দু দিনের সফরে রাজ্যে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী। শুক্রবার আরামবাগের পর শনিবার কৃষ্ণনগরেও সভা করবেন তিনি। লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলায় পরপর দুদিন সভা প্রধানমন্ত্রীর। বাংলায় আসার আগে বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত বৈঠক করেছেন মোদী। সেই বৈঠকে ছিলেন যোগী আদিত্যনাথ, দেবেন্দ্র ফড়ণবিস, পুষ্কর সিং ধামির মতো নেতারা।
আরামবাগের সভার পর সোজা কলকাতায় পৌঁছলেন রাজভবনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সোজা চলে রাজভবনের দিকে যায় তাঁর কনভয়। সেখানে রাজ্যপালের উপস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রীর।
জল প্রকল্প নিয়েও অভিযোগ মোদীর। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “চার বছরের মধ্য়ে গোটা দেশে ১১ হাজারের বেশি মানুষ পাইপ লাইনের মাধ্যমে জল পাচ্ছেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার কচ্ছপের গতিতে কাজ করছে। এটা কি ক্ষমা করে দেওয়া যায়? যে প্রকল্পে গরিব মানুষের ভাল হয়, তাতেই বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে তৃণমূল।”
প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, কয়েক হাজার কোটি টাকার প্রকল্প আটক আছে বাংলায়। তিনি বলেন, “ঝরিয়া আর রানিগঞ্জে ৬ বছর আগে কয়লা প্রকল্প শুরু করেছিলাম। বন্ধ আছে। ১৮০০০ কোটির প্রকল্পও ৪ বছর ধরে আটকে আছে। রাজ্য সরকারের সহযোগিতা না পাওয়ায় রেল প্রকল্পের কাজ আটকে আছে। মানুষের ঘরও তৈরি হতে দিচ্ছে না।”
শাসক দলকে আক্রমণ করে মোদী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী দুর্নীতিবাজদের বাঁচাতে ধরনায় বসে যান। কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্ত আটকাতে চায়। মোদী এগুলো সমর্থন করে না বলেই মোদীকে তৃণমূল এক নম্বর শত্রু বলে মনে করে তৃণমূল। এটা কি আমি হতে দিতে পারি?”
বিরোধী জোট সম্পর্কে মোদী বলেন, “কংগ্রেস সভাপতি কী বলেছে জানেন? আরে ছাড়, বাংলায় তো এসব হয়েই থাকে। এটা বাংলার অপমান নয়? বাংলার সংস্কৃতির অপমান নয়? এটাই কংগ্রেস আর বিরোধী জোটের সত্যি।” মোদী আরও বলেন, “তৃণমূল বাংলায় দুর্নীতি আর অপরাধের নতুন মডেল তৈরি করেছে। অপরাধীদের থেকে তৃণমূল নেতারা প্রচুর টাকা পান।”
আজ বাংলার মানুষ মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করছেন, কিছু মানুষের ভোট মহিলাদের যন্ত্রণার থেকে বড় হল? লজ্জা হওয়া উচিত।
বিরোধীদের সম্পর্কে মোদী বলেন, “আমার সবথেকে বেশি খারাপ লাগে ইন্ডি-জোটের বাকি নেতাদের দেখে। ওই জোটের বড় বড় নেতারা সন্দেশখালিতে চোখ-কান-মুখ বন্ধ করে রেখেছেন গান্ধীজির তিন বাঁদরের মতো। এরা বিভিন্ন জায়গায় বৈঠক করে। বাম ও কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেছেন?”
প্রধানমন্ত্রী বলেন,’দু মাস ধরে তৃণমূল নেতা পলাতক ছিলেন। কেউ তো নিশ্চয় ছিল, যে সাহায্য করছিল।’ সাধারণ মানুষের উদ্দেশে মোদী বলেন, সন্দেশখালিতে যা হয়েছে, তার বদলা নেবেন তো?
সন্দেশখালি প্রসঙ্গে মোদী বলেন, “সন্দেশখালির মহিলাদের সঙ্গে যা করা হয়েছে, তা দেখে গোটা দেশ ক্ষুব্ধ। রাজ রামমোহন রায়ের আত্মা আজ এই অবস্থা দেখে কাঁদছে। তৃণমূল নেতারা সন্দেশখালির মহিলাদের সঙ্গে যা করেছে, তাতে দুঃসাহসের সব সীমা পার হয়ে গিয়েছে। সন্দেশখালির মহিলারা মুখ খুলেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহায্য চেয়েছেন। বদলে কী পেয়েছেন? বিজেপি নেতারা মা-বোনেদে জন্য দিন-রাত লড়েছেন। মার খেয়েছেন। বিজেপি নেতাদের চাপে পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়েছে।”
৫০০ বছর পর শ্রীরাম নিজের মন্দিরে স্থান পেয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গে যেভাবে রামলালাকে স্বাগত জানানো হয়েছে, বাংলার মানুষের শ্রীরামের প্রতি যে আস্থা রয়েছে, তা গোটা দেশকে অনুপ্রেরণা দেয়: মোদী।
খানাকুলে জন্মেছিলেন রাজা রামমোহন রায়। নারীকে তিনি বিশেষ শক্তি দিয়েছিলেন। আমি ভারতে মাতৃশক্তির জন্য সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করব: প্রধানমন্ত্রী।
সন্দেশখালি প্রসঙ্গ তুলে সুকান্ত মজুমদার বলেন, “শেখ শাহজাহানকে পুলিশ গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়েছে। এটাই সময়। মহিলারা মুখ খুলুন, ঝাঁটা ধরুন, তৃণমূলকে উৎখাত করে ফেলে দিন। লজ্জা লাগে দেখে, শেখ শাহজাহান বুক ফুলিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যাচ্ছে। যেন পুলিশ শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করেনি, পুলিশকে শেখ শাহজাহান অদৃশ্য দড়ি দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যাচ্ছে।”
বিরোধী দলনেতা এদিন মঞ্চে উঠে বলেন, ‘২০২১ সালে নির্বাচনের পর হিংসায় ৫৭ জন বিজেপি কর্মী শহিদ হয়েছিলেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভয়াবহতা আমরা দেখেছি।’ কেন্দ্রীয় প্রকল্পের জন্য দেওয়া টাকা তৃণমূল লুঠ করেছে বলে মঞ্চ থেকে সরব হন শুভেন্দু। উল্লেখ করলেন দুর্নীতির অভিযোগের কথাও।
সকাল থেকে দর্শকের আসনে অপেক্ষা করছেন বহু মানুষ। মঞ্চ রয়েছেন বঙ্গ বিজেপি নেতারা। দুপুর সাড়ে ৩টেয় মঞ্চে উঠলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
নরেন্দ্র মোদী জানান, কেন্দ্রীয় সরকার এবার পশ্চিমবঙ্গে রেলের উন্নয়নের জন্য ১৩ হাজার কোটির বেশি বরাদ্দ করেছে। ২০১৪-র আগে যে বাজেট ছিল, এটা তার তিনগুণ। রেল লাইনের কাজ, যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা ও স্টেশনের আধুনিকীকরণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। অমৃত ভারত প্রকল্পে বাংলার ১০০টি স্টেশনের চেহারা বদলে যাবে। তারকেশ্বর স্টেশন তার মধ্যে অন্যতম। তিনি আরও উল্লেখ করেন, গত ১০ বছরে ১৫০-টির বেশি নতুন ট্রেনের পরিষেবা শুরু হয়েছে বাংলায়। চালু হয়েছে ৫টি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস।
পশ্চিম মেদিনীপুরে এলপিজি বটলিং প্লান্ট চালু করা হয়েছে। সাত জেলা এর জন্য উপকৃত হবে। আয়ের অনেক নতুন পথ তৈরি হতে চলেছে। হুগলিতেও একটি প্লান্ট চালু হচ্ছে, যার ফলে উপকৃত হবেন হাওড়া, কামারহাটি, বরানগরের লক্ষ লক্ষ মানুষ: নরেন্দ্র মোদী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পশ্চিমবঙ্গে রেলের ততটাই উন্নয়ন হোক, যেমনটা দেশের অন্য প্রান্তে হচ্ছে। এর ফলে পর্যটনের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। ট্রেন চলাচল যাতে আরও সুষ্ঠভাবে হয়, তার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শ্যামাপ্রসাদ বন্দরের জন্যও তিন যোজনার বিস্তার করছে ভারত। এর জন্য ১০০০ কোটি টাকার বেশি খরচ করছে কেন্দ্রীয় সরকার।
রাজ্যে এসে একাধিক প্রকল্পের সূচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী। রেল ও বন্দর মিলিয়ে প্রায় ৭২০০ কোটি টাকার প্রকল্পের সূচনা করেছেন মোদী।
দুপুর ৩ টের আগেই আরামবাগে পৌঁছয় প্রধানমন্ত্রীর হেলিকপ্টার। সরকারি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন তিনি। মঞ্চে উপস্থিত রয়েছেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রমুখ।
আরামবাগে পৌঁছে প্রথমে সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর বক্তব্য রাখবেন জনসভায়। শুক্রবার সকাল থেকেই ভিড় বেড়েছে মঞ্চের সামনে। উপস্থিত রয়েছেন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সহ বঙ্গ বিজেপির নেতারা।