মালদা: দিব্যি হেঁটে চলে বেড়াচ্ছেন বৃ্দ্ধা। বছর আশি বয়স হলেও নাড়িজ্ঞান এখনও টনটনে। তবু, তিনি নাকি ‘মৃত’! অন্তত, এলাকার রেশন ডিলারের কথায় ওই বৃদ্ধা বেঁচে নেই! শুনতে আশ্চর্য লাগলেও এটাই সত্যি। হরিশচন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের অন্তর্গত মহেন্দ্রপুর গ্রামে এক রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে রেশন (Ration) না পাওয়ার কারণে অভিযোগ করলেন ওই গ্রামেরই বাসিন্দা জুলেখা বেওয়া।
জুলেখা বেওয়া ও তাঁর পরিবারের অভিযোগ, জুলেখা বেঁচে থাকা সত্ত্বেও তাঁর রেশন কার্ড দোকানে নিয়ে গেলে মিলছে না রেশন। অভিযোগ, রেশন (Ration) ডিলার জানিয়েছে জুলেখা বেওয়া নামের কোনও ব্যক্তিই রেশন ভোক্তা নন। তিনি অনেকদিন আগে মারা গিয়েছেন। এমনকী, বিগত দু সপ্তাহ ধরে বন্ধ হয়েছে জুলেখার পরিবারকে রেশন দেওয়া। ফলে, লকডাউনে বিস্তর সমস্যায় পড়েছেন জুলেখা ও তাঁর পরিবার। চাল-ডাল না পেলে খাবেন কী এই চিন্তায় জেরবার তাঁর পরিবার। অবশেষে, শুক্রবার ব্লক আধিকারিক ও ফুড ইনস্পেক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন জুলেখা বেওয়া।
আশি বছরের বৃদ্ধার কথায়, “আমি নাকি মরে গিয়েছি! কোথায় মরে গিয়েছি! দিব্য তো হেঁটে চলে বেড়াচ্ছি। বদমাশগুলো বদমায়েশি করে চাল-ডাল দেবে না। তাই জন্য এসব বলে বেড়াচ্ছে। ওদের ছেড়ে দেব না। আজ বিডিওকে জানিয়েছি। চাল-ডাল না পেলে খাব কী!” জুলেখার ছেলে জালালউদ্দিন বলেন, “আমার মা বেঁচে আছেন। কিন্তু, রেশনের দোকানে গেলেই ডিলার বলছে আমার মা নাকি মরে গিয়েছেন। প্রায় দুই সপ্তাহ হলে রেশন পাচ্ছি না। এভাবে কতদিন চলবে!”
জুলেখাদের আরেক প্রতিবেশী আলালউদ্দিন অভিযোগের সুরে বলেন, “জালালের মা বেঁচে আছে। তাও বলে রেশন ডিলার বলছে তিনি নাকি মৃত! যাতে চাল-ডাল নিজে জমিয়ে রাখতে পারে তাই এসব বলছে। আমরাও চাল-ডাল কম পাই। পরিমাণ মতো দেওয়া হয় না। প্রত্যেকবারই অত্যন্ত এক কেজি কম জিনিস তো থাকবেই।”
যদিও, সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে রেশন ডিলার জহুর খান। তিনি বলেছেন, “আমরা এইভাবে কাউকে মৃত বা জীবিত ঘোষণা করতে পারি না। জুলেখাবিবির কার্ড থাকলেও তাঁর নাম মেশিনে দেখাচ্ছিল না, সেইজন্য আমরা বলেছি একটু খতিয়ে মিলিয়ে দেখতে। কখনোই এমন কিছু বলা হয়নি। আর যেরকম মাল দেওয়া হচ্ছে তেমনই রেশন দেওয়া হচ্ছে। সার্কুলার মেনেই বন্টন চলছে। কোন জিনিস কম দেওয়ার ব্যাপার নেই।”
ঘটনায় খাদ্য সরবরাহ দফতরের পর্যবেক্ষক ও আধিকারিক রিঙ্কু বিশ্বাস বলেন, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি। গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনও রেশন ডিলারই এমন বলতে পারেন না। আমি নিজে ওই পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁদের সকলের আধার কার্ড-সহ অন্য়ান্য নথি খতিয়ে দেখছি। গোটা ঘটনাই তদন্ত করে দেখা হবে।”
আরও পড়ুন: ‘৩১৫ টাকায় সরকার টিকা বিক্রি করছে’, সরাসরি কেন্দ্রকে চিঠি বিজেপি বিধায়কের