Adhir Chowdhury: একদিকে জনগণের ডাক্তার, অন্যদিকে বিশ্বকাপ জয়ী পাঠান, জীবনের কঠিনতম ভোট যুদ্ধে অধীর?
Adhir Chowdhury: কেউ বলছে বহরমপুরের এবারের লড়াই তিন পক্ষের। কেউ বলছে আসল লড়াই অধীর বনাম ডাক্তার নির্মল কুমার সাহার। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বহরমপুর লোকসভায় মুসলিম ভোট যদি অধীর এবং ইউসুফ পাঠানের মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যায় তাহলে পোয়া বারো বিজেপির।
বহরমপুর: বামেদের সঙ্গে কি শেষ পর্যন্ত ‘বোঝাপড়াটা’ হবে! প্রশ্নটা এই কিছুদিন আগেও ঘোরাফেরা করছিল বঙ্গ রাজনীতির আঙিনায়। আইএসএফ হাত না ধরলেও অধীর সেলিমকে অবশেষে একযোগে প্রচারে দেখা গিয়েছে। নয়ের দশকের গোড়ায় নবগ্রাম বিধানসভায় ভোটে সিপিএমের বাহিনী তাঁকে তাড়া করেছিল। সেই ঘটনার স্মৃতি মুশিদাবাদের রাজনীতিতে আজও ফিরে ফিরে আসে। সেই অধীরের পিছনে আজ সিপিএমের লাল ঝান্ডার মিছিল। বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী কি জীবনের কঠিনতম ভোট যুদ্ধে? চাপানউতোর চলছেই।
টানা ২৫ বছর সংসদের ভিতরে কাটিয়ে দিয়েছেন। সংসদীয় রাজনীতিতে ধারে ভারে অভিজ্ঞতায় তিনি ৪২ টি কেন্দ্রের যে কোনও দলের প্রার্থীর থেকে এগিয়ে। ডাবল হ্যাটট্রিকের সুযোগের সামনে দাঁড়িয়েও বাংলার কংগ্রেস সভাপতিকে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হচ্ছে। তাঁর ট্র্যাক রেকর্ড যেমন তাঁর পুঁজি ঠিক তেমনই প্রত্যাশার পাহাড় প্রমাণ চাপই অধীরের সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ।
সংঘ পরিবারের ঘনিষ্ঠ এবং বহরমপুরের নামকরা ডাক্তারবাবু নির্মল কুমার সাহার সঙ্গে টক্কর দিতে নেমেও প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে নেতিবাচক কিছুই বলার নেই অধীরের। কি করেই বা বলবেন? জনপ্রিয় নির্মল ডাক্তারের কাছে সুচিকিৎসা পায়নি এমন পরিবার বহরমপুর এবং সংলগ্ন অঞ্চলে আছে নাকি? অধীর নিজেও নির্মল ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করিয়েছেন একসময়! মুচকি হেসে ডাক্তার বাবু বলছেন “আমার কাছে যে আসে তারই চিকিৎসা করতে হয়।”
ভোট প্রচারের পথে বহরমপুর শহরের লাল দীঘির পারে চৌধুরীবাবু আর নির্মল বাবুর ক্রস কানেকশন। দারুন প্রতিপক্ষ হয়েও অধীরের দিকে সৌজন্যের ফুল ছুড়ে দিলেন ডাক্তারবাবু। যা দেখে অনেকেই বলছেন, নামকরা চিকিৎসক যেন হালফিলের অ-সৌজন্যের রাজনীতির চিকিৎসা করতে নেমেছেন। এমন উদার মনষ্ক শিক্ষিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়াই কি সহজ হতে পারে! উত্তরটা যদিও মিলবে ৪ জুন।
কেউ বলছে বহরমপুরের এবারের লড়াই তিন পক্ষের। কেউ বলছে আসল লড়াই অধীর বনাম ডাক্তার নির্মল কুমার সাহার। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বহরমপুর লোকসভায় মুসলিম ভোট যদি অধীর এবং ইউসুফ পাঠানের মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যায় তাহলে পোয়া বারো বিজেপির।
ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ূন কবিরের বিতর্কিত মন্তব্য (ওরা ৩০ শতাংশ আমরা ৭০ শতাংশ) এবারের ভোটে মেরুকরণের হাওয়াকে আরও জোরদার করেছে বলে জেলায় জোর জল্পনা। সংখ্যালঘু ভোট এককাট্টা করতে গিয়ে তৃণমূলের হুমায়ূন কী বিজেপির পালে হাওয়া জুগিয়ে ফেলেছেন? বিজেপির চিকিৎসক প্রার্থী অবশ্য বলছেন সারা জীবন সব সম্প্রদায় ধর্ম-বর্ণের মানুষের চিকিৎসা করার সুবাদে আলাদা করে মেরুকরণের প্রয়োজন নেই তাঁর।
জেলা বিজেপি সভাপতির দাবি, ডাক্তারবাবুকে ভোট দেবেন সংখ্যালঘুরাও। কারণ তিনি সারা জীবন ডাক্তার হিসেবেই মানুষের সেবা করে এসেছেন। এটাই ডিভিডেন্ড দেবে। জেলায় কংগ্রেসের চরম দুঃসময়েও অধীর চৌধুরীকে ছেড়ে যাননি বহরমপুরের প্রাক্তন বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী। তিনি বলছেন অধীরবাবুই মুর্শিদাবাদের উন্নয়নের রূপকার। মানুষ অধীরের অবদান কিছুতেই ভুলবে না। অন্যদিকে অধীরের একসময়ের ঘনিষ্ট অনুগামী কান্দির তৃণমূল বিধায়কের দাবি, ২০১৯ সালে তিনি তৃণমূলের প্রতীকে দাঁড়িয়ে চারটি বিধানসভায় অধীরকে হারিয়ে ছিলেন। বিখ্যাত ক্রিকেটের ইউসুফ তাই সহজেই অধীরকে হারাবেন। রাত পোহালেই ভোট বহরমপুরে। এখন দেখার শেষ হাসি কে হাসে।