Teacher’s Day: ‘অবসর’ শব্দই হয়ত নেই তাঁর অভিধানে, ৪ বছর পরও রোজ পড়াতে আসেন প্রাক্তন শিক্ষিকা

Medinipur: অবসর গ্রহণের পর আজও শিক্ষাব্রতে অবিচল তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের বাড়খোষখানার বাসিন্দা বছর ৬৪-এর তৃপ্তি বক্সি।

Teacher's Day: 'অবসর' শব্দই হয়ত নেই তাঁর অভিধানে, ৪ বছর পরও রোজ পড়াতে আসেন প্রাক্তন শিক্ষিকা
অবসরের পরও ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষিকা (নিজস্ব ছবি)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 05, 2022 | 1:38 PM

কনিষ্ক মাইতি

কথায় বলে অধ্যায়ন হল নেশার মতো, আর জ্ঞান বণ্টন একটা আলাদা অভিপ্রায়। বর্তমান সামাজিক পরিস্থিতি অগ্রাসনে যাতে এই সমাজের ভবিষ্যত কোনও ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তার দেখার গুরু দায়িত্ব বাড়িতে মা বাবা ও বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকাদের। সেই কারণে বিদ্যালয়ে এমন ছবি সকলের নজরে এড়িয়ে প্রচারেই আলোর ওপাড়েই হয়ত রয়ে গিয়েছে।

অবসর বলে কোনও শব্দ নেই তাঁর অভিধানে। তাই সরকারিভাবে অবসর গ্রহণের পর আজও শিক্ষাব্রতে অবিচল তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের বাড়খোষখানার বাসিন্দা বছর ৬৪-এর তৃপ্তি বক্সি। স্থানীয় খোষ্টিকরী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন তিনি। সেখান থেকে ২০১৮ সালে অবসর গ্রহণ করেন। সরকারি নিয়ম মতে ও বয়সের কারণে তিনি বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষিকা। তাঁর মেধা বণ্টনের অবসর হয়ত জীবনের শেষ বিন্দু পর্যন্ত চলবে।

অবসরের পরও ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষিকা(নিজস্ব চিত্র)

কিন্তু এরপরও তিনি এখনও ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অবসর হয় না, এই বিশ্বাস থেকেই বিদায় সংবর্ধনা গ্রহণ করলেও কথা দিয়েছিলেন, অবসর নেওয়ার পরেও পড়ুয়াদের টানে বিদ্যালয়ে আসবেন। যেমন কথা তেমন কাজ। তার ঠিক পর দিন থেকেই এখনও পর্যন্ত নিয়ম করে রোজ বিদ্যালয়ে আসেন তৃপ্তিদেবী। তিনি বলেন, ‘বাড়িতে বসে থাকতে ইচ্ছে হয় না। শিক্ষকতা নেশার মতো। পড়ুয়াদের সঙ্গে থাকতে ভাল লাগে। শরীর সুস্থ থাকলে এভাবেই নিয়ম করে বিদ্যালয়ে আসব।’ নিয়মাফিক রোজ সাড়ে ১০ টার মধ্যে বিদ্যালয়ে পৌঁছে যান তিনি। তারপর সারাদিন ক্লাস নিয়ে বিকেলে ফিরে যান বাড়ি।আজও সেই নিয়মের কোনও পরিবর্তন হয়নি। তৃপ্তিদেবীকে ধরে বিদ্যালয়ে এখন পাঁচ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন। শিশুশ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরা লেখাপড়া করে বিদ্যালয়ে। পড়ুয়ারা জানিয়েছে, অবসর নিলেও পড়ানোতে কোনও ঢিলেমি নেই তাঁর। বিদ্যালয়ের ছাত্র সুদীপ মান্না, তমাল মাইতি ও ছাত্রী সুদীপ্তা বক্সি, সুদিপা পাত্ররা বলেন, ‘দিদিমণি আমাদের ভীষণ ভালবাসেন। খেলাচ্ছলে পড়ান। বুঝতে অসুবিধা হয় না আমাদের।’

অবসরের পর বিদ্যালয়ে পড়ানোর জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ সাম্মানিক অর্থ দিতে চাইলেও কোনও টাকা নেন না তৃপ্তিদেবী। এতে শ্রদ্ধা ও ভালবাসার সঙ্গে যা মেনেও নিয়েছে বিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষ। অবিবাহিতা তৃপ্তিদেবীর বাড়িতে রয়েছে ছোট বোন ও ভাইয়ের পরিবার। তাঁকে বিদ্যালয়ে আসতে উৎসাহ দেন তাঁরা সকলেই।

বিদ্যালয়ের বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা সোমা সাঁতরা বলেন, ‘ তৃপ্তি ম্যাডামের এই নিঃস্বার্থ শিক্ষাদান আমাদের কাছে দৃষ্টান্ত। তিনি নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসায় আমরা মনে সাহস পাই।এখনও তিনি আমাদের প্রধান শিক্ষিকা।’ বিদ্যালয়ে অপর শিক্ষক সুমিত কুমার সামন্তের কথায়, ‘এমনটা সচরাচর দেখা যায় না। তৃপ্তিদি আমাদের সকলের কাছে অনুপ্রেরণা। তাঁর কাজ অনেককে উদ্বুদ্ধ করবে।’