AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

দুটো পয়সার জন্য রোববারও কাজ করতেন, উত্তরাখণ্ডের অভিশপ্ত দিনে নিখোঁজ বাংলার ৩ ছেলে

উত্তরাখণ্ডের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে এখনও পর্যন্ত নিখোঁজের সংখ্যা শতাধিক। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মহিষাদলের সুদীপ গুড়িয়া, লালু জানা ও বুলা জানা।

দুটো পয়সার জন্য রোববারও কাজ করতেন, উত্তরাখণ্ডের অভিশপ্ত দিনে নিখোঁজ বাংলার ৩ ছেলে
বুলা, লালু, সুদীপ (বাঁ দিক থেকে)
| Updated on: Feb 08, 2021 | 3:33 PM
Share

পূর্ব মেদিনীপুর: শেষ বার কথা হয়েছিল শনিবার। ফোনে কয়েক মিনিট। প্রত্যেক দিনই ছেলেদের সঙ্গে কেবলমাত্র ওইটুকুই কথা বলতে পারতেন বৃদ্ধ বাবা-মা। রাতে কথা বলার পর আর পাঁচ দিনের মতোই খাওয়া দাওয়া সেরে শুতে চলে গিয়েছিলেন। রবিবার সকালে কথা হয়নি। কিন্তু তাতে বিশেষ আমল দেননি তাঁরা। কারণ সারাদিনই ব্যস্ত থাকেন দুই ছেলে, সেটাই ভেবে নিয়েছিলেন তাঁরা। বিপর্যয়ের খবর প্রতিবেশীদের কাছ থেকে শুনেই ছুটে গিয়ে টিভি চালিয়েছিলেন। আর তারপর থেকে ফোনের পর ফোন! প্রত্যুত্তরে ‘নো নেটওয়ার্ক’ রেকর্ডিং। উত্তরাখণ্ডে কাজে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের তিন সন্তানের বৃদ্ধ দরিদ্র বাবা-মায়ের কাছে এখন গোটা পৃথিবীটাই যেন অন্ধকার। উত্তরাখণ্ডের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে (Uttarakhand Glacier Bursts) এখনও পর্যন্ত নিখোঁজের সংখ্যা শতাধিক। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মহিষাদলের সুদীপ গুড়িয়া, লালু জানা ও বুলা জানা।

উত্তরাখণ্ডের নির্মীয়মাণ ওই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে ‘ওম মেটাল’ নামে একটি সংস্থার ঠিকাদার হিসাবে কাজ করেন মহিষাদলের লক্ষ্যা গ্রামের বাসিন্দা লালু জানা। কাজে যোগ দেওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে ভাই বুূলাকেও সেখানে নিয়ে যান তিনি। তারপর প্রতিবেশী যুবক চক দ্বারিবেড়িয়ার সুদীপ গুড়িয়াকেও (২৭) কাজ দেন। তিন জনে একইসঙ্গে থাকতেন। কিন্তু শনিবারের পর থেকে তাঁদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।

লালু ও বুলার ভাই বলেন, “দাদারা গত বছর ফেব্রুয়ারিতে এসেছিল। লকডাউনে অনেক দিন কাজ বন্ধ ছিল। শনিবারই কথা হল। বুঝতে পারছি না কী হল! কোনও খবর পাচ্ছি না। কিছুতেই যোগাযোগ করতে পারছি না। বড্ড অসহায় লাগছে।” লালু, বুলার বৃদ্ধ বাবা তখন চেয়ারে বসে কাঁদছেন। মা-তো কথা বলার শক্তিই হারিয়েছেন। ঝাপসা চোখে তাকিয়ে রয়েছেন দরজার দিকে। লালু, বুলার বাড়িতে তখন প্রতিবেশীদের ভিড়।

একই ছবি সুদীপের বাড়িতেও। ঘরের একমাত্র রোজগেরে ছেলে। রাজ্যে কাজ জোটেনি। তাই কাজের টানেই চলে গিয়েছিলেন উত্তরাখণ্ডে। রবিবার সাধারণত ছুটিই থাকে। কিন্তু বাড়তি দুটো পয়সার জন্য কাজ করতেন রবিবারও। এমনটা হবে দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি তাঁরা। ছোট্ট এক চিলতে ঘরে প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজনদের ভিড়। কিন্তু সকলেই কার্যত নিশ্চুপ। বৃদ্ধ দম্পতিকে সান্ত্বনা দেওয়ার যে ভাষা নেই তাঁদের! আর বলবেনই বা কী?

আরও পড়ুন: দেব কি বিজেপিতে যাচ্ছেন? নেতার মামাবাড়ি থেকেই ফাঁস আসল খবর

কোনও অঘটন কী ঘটে গিয়েছে? নাকি তাঁদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে? সবই যে সেই কাদাগোলা জলেই ঝাপসা। মহিষাদলের ওই দুই বাড়ির পরিস্থিতি এখন উত্তরাখণ্ডের দুর্গতদের মতনই। ঘরের ছেলের ‘প্রাণ থাকার’ খবরটা শুধু পেতে চান তাঁরা। সুদীপের দাদা শুধু বলতে পারলেন, “মুখ্যমন্ত্রী আমার ভাইকে খুঁজে দিন।”