Purulia School: বাংলার এই স্কুলে নেই দরজা, নেই বেঞ্চ, নেই ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক অফিস খোলেন, বসে থেকে চলে যান
Purulia School: গ্রামবাসীরা জানান, ওই শিক্ষক তাঁর খেয়াল খুশি মতো স্কুলে যান, অফিস রুম খুলে বসেন, কিছুটা সময় কাটান। তারপর ফিরে যান। এইভাবেই চলছে ধারগ্রামের আপার প্রাইমারী স্কুল।
পুরুলিয়া: রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার। এবার সেই অবস্থার আরও এক উদাহরণ সামনে এল। সে যেন এক ভূতুড়ে ছবি! খাতায় কলমে চলছে স্কুল। শিক্ষকও আছেন। কিন্তু কোনও এক অদৃশ্য শক্তিবলে যেন উধাও হয়ে গিয়েছে ছাত্র-ছাত্রীরা। ক্লাসরুম খাঁ খাঁ করছে। ঘণ্টা দেওয়ার বালাই নেই, চক, ব্ল্যাকবোর্ডের কোনও ব্যবহার নেই। এ কেমন স্কুল!
পুরুলিয়ার বরাবাজার ব্লকের লটপদা অঞ্চলের ধারগ্রামে রয়েছে এই স্কুল। ২০১২সালে এই উচ্চ প্রাথমিক স্কুলটি তৈরি হয় ধারগ্রামে। ২০২২ সাল থেকে সেই স্কুল প্রায় বন্ধ বললেই চলে। কাগজে কলমে এই স্কুল এখনও চলছে। কিন্তু গত দু’বছর ধরে এই স্কুলে যায় না কোনও ছাত্র বা ছাত্রী। অথচ স্কুল চলছে।
রয়েছেন একজন মাত্র শিক্ষক। গ্রামবাসীরা জানান, ওই শিক্ষক তাঁর খেয়াল খুশি মতো স্কুলে যান, অফিস রুম খুলে বসেন, কিছুটা সময় কাটান। তারপর ফিরে যান। এইভাবেই চলছে ধারগ্রামের আপার প্রাইমারী স্কুল। এই গ্রামের অবস্থান বরাবাজার সদর থেকে প্রায় ২০কিলোমিটার দূরে ঝাড়খণ্ডের সীমানায়। এখানেই শেষ নয়। যে স্কুলঘরে ছাত্র-ছাত্রীদের পঠন-পাঠন চলার কথা, সেই ঘরে বর্ষার সময় আশ্রয় নেয় গরু, ছাগল।
এলাকার মানুষ চাইছেন স্কুলে পড়াশোনা চালু হোক আবার। বাধ্য হয়েই এলাকার পড়ুয়াদের তিন কিলোমিটার পথ পেরিয়ে সরবেড়িয়া হাইস্কুলে যেতে হচ্ছে। সরকারের গাফিলতিতেই যে স্কুল বন্ধ হয়েছে সেটাই মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দা থেকে স্থানীয় তৃণমূল নেতা।
অভিযোগ, ২০১২ সালে চালু হলেও এই স্কুলের ২টি ক্লাসরুমে ১০ বছরেও কোনও দরজা, জানালা লাগাতে পারেনি সরকার। নেই কোনও বেঞ্চ। অথচ শিক্ষকদের অফিসঘর রয়েছে, মিড ডে মিলের ব্যবস্থা রয়েছে। রান্নাঘরে দরজা আছে, পানীয় জলের জন্য ট্যাঙ্কও রয়েছে। রয়েছে শৌচাগার।
২০১৩ সালে তাপস কুমার সতপতি এই স্কুলে টিআইসি হিসেবে যোগদান করেন। তার আগে এই স্কুলে একজন অতিথি শিক্ষক ছিলেন শুধুমাত্র। সেই বছরের ডিসেম্বর মাসেই আরও একজন শিক্ষক যোগদান করেছিলেন। তারপরেই ‘উৎসশ্রী’ প্রকল্পে আবেদন করে সেই শিক্ষক মেদিনীপুরে বদলি হয়ে যান। বর্তমানে এই স্কুলে শিক্ষক তাপস সতপতি রয়েছেন। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ দু’বছর আগে শিক্ষকরাই অভিভাবকদের ডেকে বলেছিলেন দু’জন শিক্ষক দিয়ে স্কুল চালানো সম্ভব নয়। তাই ছাত্র-ছাত্রীদের অন্য স্কুলে নিয়ে যেতে বলা হয়।
তাপস সতপতি টেলিফোনে জানান, স্কুলের পরিকাঠামো না থাকায় ছাত্রছাত্রীরা অন্য স্কুলে চলে যায়। যদিও তাঁর দাবী পোর্টালের মাধ্যমে রিপোর্ট পাঠাতে হয় জেলা শিক্ষা দফতরকে, ফলে সবটাই জানে জেলা শিক্ষা দফতর।
জেলা শিক্ষা দফতরের পরিদর্শক গৌতম চন্দ্র মাল টেলিফোনে জানিয়েছেন, স্কুলছাত্রের অভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে স্কুল। যদিও স্কুলের দরজা জানালা কেন নেই, তা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমি এস আই-এর কাছে খোঁজখবর নিয়ে দেখছি।’