ভারী বৃষ্টিতে প্লাবন পরিস্থিতি। ফুঁসছে একের পর এক নদী। বাঁধের বিপত্তি জেলায় জেলায়। পুজোর মুখে ফের দুর্যোগের মেঘ। ভরা আশ্বিনেও ভরাডুবির আশঙ্কা। নবান্নে বৈঠক করলেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। জেলাশাসক ও পুলিশ সুুপারদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। বৈঠকে থাকেন বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর। ইতিমধ্যেই একাধিক জায়গায় দুর্গতদের উদ্ধারে পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী, নামানো হয়েছে এনডিআরএফ টিম।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টিভি নাইন বাংলাকে জানান, “ঝাড়খণ্ডে যেহেতু অনেক বৃষ্টি হয়েছে ওরা আমাদের না বলে রাত ৩টের সময় আসানসোলে জল ছেড়ে দেয়। এদিকে আসানসোলের বৃষ্টির পরিমাণটাও প্রায় ৩৪৫ মিলিমিটার ছিল। আগে কখনও এত বৃষ্টি হয়নি। ফলে আসানসোল পুরো ডুবে যায়। একই সঙ্গে বাঁকুড়া, পুরুলিয়াও। তার পর কাল আবার ডিভিসি ১ লক্ষ কিউসেকের উপর জল ছেড়ে দিয়েছে। সমস্যা হচ্ছে, ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টি হলে আমাদের ফেস করতে হচ্ছে, বিহারে বৃষ্টি হলে আমাদের ফেস করতে হচ্ছে।”
সবিস্তারে পড়ুন: CM Mamata Banerjee: প্লাবনে সেই ‘ম্যান মেড’ তত্ত্ব, সেই ডিভিসিকেই দুষলেন মমতা! পাল্টা অধীর, ‘সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছেন না কেন?’
ভারী বৃষ্টিতে প্লাবন পরিস্থিতি। ফুঁসছে একের পর এক নদী। বাঁধের বিপত্তি জেলায় জেলায়। পুজোর মুখে ফের দুর্যোগের মেঘ। ভরা আশ্বিনেও ভরাডুবির আশঙ্কা দক্ষিণের একাধিক জেলায়। তবে বাংলায় বন্যা পরিস্থিতির জন্য আবারও ডিভিসিকে (DVC) তোপ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। না জানিয়েই জল ছেড়েছে ডিভিসি, আবারও অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “ঝাড়খণ্ডের বোঝা বইতে হচ্ছে বাংলাকে।” বন্যা দুর্গত এলাকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে বেশ কয়েকজন মন্ত্রীকে। আগামিকাল, শনিবার বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শনে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিস্তারিত পড়ুন: ‘ঝাড়খণ্ডের বোঝা চাপছে ঘাড়ে’, শনিবার আকাশপথে বানভাসি এলাকা পরিদর্শনে মুখ্যমন্ত্রী
বানভাসি আরামবাগের অবস্থা খারাপ। সকালেই আরামবাগে যাচ্ছেন শ্রমমন্ত্রী বেচারাম মান্না। সকালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে ফোন করেন। দ্রুত আরামবাগের দুর্গত এলাকায় পৌঁছানোর নির্দেশ দেন। গোটা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবেন মন্ত্রী।
তিলপাড়া ব্যারাজ থেকে এক লক্ষ কিউসেকের উপরে জল হয়েছে। প্লাবিত কান্দি সালার রাজ্য সড়ক ও ভরতপুরের কিছু গ্রাম। জল বেড়েছে ভরতপুর ব্লকের যাকনা, ছত্রপুর, কোল্লা, চাঁদপুর সুলতানপুর , কাশিপুর, জলমগ্ন , চাঁদপুর, কোল্লা মানুষজন। জল আবারও ছাড়লে বিপদ বাড়বে, চিন্তিত প্রশাসনও।
ডিভিসি জল বাড়ায় বাড়তি চাপ কেলেঘাই নদীতে। ভাসছে আরও বহু নতুন গ্রাম। আগেই কেলেঘাই জল বেড়ে বাঁধ ভেঙে বিপাকে পড়েছে পটাসপুর, ভগবানপুর, এগরা, চন্ডিপুরের মানুষ। আজ আবার সকালে দেহাটি র কাছে কেলেঘাই নদীর জল ২ ফুট বেড়েছে। বাজকুল ,চন্ডিপুর-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা নতুন করে ভাসায়।
গোঘাটের ভাদুরে দারকেশ্বর নদীর বাঁধ ভেঙেছে ইতিমধ্যেই। রাতে হু হু করে জল ঢোকে আরামবাগ শহরে। রাতে বিদ্যুত্হীন হয়ে পড়ে এলাকা। গোটা শহর অন্ধকার। দ্বারকেশ্বর নদীর জল গ্রামে হু হু করে ঢুকতে শুরু করে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন গ্রামবাসীরা। ত্রাণ শিবিরে যাওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যায়।
রাজ্য সড়কের ওপর দিয়েই বইতে থাকে ৬-৭ ফুট জলের স্রোত। রাতেই আরামবাগ শহরে ৩ কোম্পানি সেনা নামানো হয় উদ্ধার কার্যের জন্য। বিপর্যয় বাড়ে আরও। খানাকুলের বন্দিপুরে দারকেশ্বরের নবনির্মিত বাঁধ ভেঙে এলাকায় হু হু করে জল ঢুকতে শুরু করে। এরপর আরামবাগ পেরিয়ে তারকেশ্বরে রাজ্য সড়কের ওপর দিয়ে জল বইতে শুরু করে।
আরামবাগ শহরে দুর্গতদের উদ্ধারে নামল এনডিআরএফ টিম। স্পিড বোটে করে বিভিন্ন জলমগ্ন ওয়ার্ডে গিয়ে দুর্গতদের ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। খাবার, প্রয়োজনীয় ওষুধ, জল পৌঁছে দিচ্ছেন তাঁরা। যদিও এখনও পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি। জনজীবন পুরোপুরি বিপর্যস্ত।
ঘাটালের মনসুকা চড়কতলা এলাকায় নদী গর্ভে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে দোতলা পাকা দোকান বাড়ি।বাড়ির মালিকের নাম রতন মন্ডল। ওই বাড়ির নীচেই রয়েছে একাধিক দোকান। শুক্রবার সকালে নতুন করে ঝুমি নদীর জলস্তর বাড়তে শুরু করে। জল উপচে দোকান লাগোয়া রাস্তায় ঢুকে পড়ে আর তখনই জলে তোড়ে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে ওই পাকা বাড়িটি। যদিও সেসময় বাড়ির ভিতর কেউ ছিলেন না। তাই প্রানহানির ঘটনা এড়ানো গিয়েছে।
ঘাটালে বাড়ির মধ্যেই জল ডুবে মৃত্যু হল চার বছরের শিশুর। মর্মান্তিক ঘটনা বানভাসি ঘাটালের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের গম্ভীরনগর এলাকায়।
বিস্তারিত পড়ুন: মা-বাবা তখনও ঘুমোচ্ছিলেন! ঘরের হাঁটু সমান জলে ভাসছে চার বছরের ছেলের শরীরটা
দামোদর ও অজয় নদের জল বিপদ সীমার ওপর দিয়ে বইছে।পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের সাঁতলা ও ধুকুর গ্রামের কাছে অজয়ে বাঁধ ভেঙে হু হু করে জল ঢুকতে শুরু করেছে। অন্যদিকে, মঙ্গলকোটের কুমারপুর গ্রামে অজয়ের বাঁধ ভেঙে প্লাবিত জমির ধান। ভেদিয়া পঞ্চায়েতের সাঁতলা ও ধুকুর গ্রাম-সহ আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা বাড়িঘর ছেড়ে উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন।
দুবরাজপুর ব্লকের লোবা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় অধিক বৃষ্টির ফলে প্রায় ৫০ টির মত কাঁচা বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অজয় ও হিংলো নদী তীরবর্তী এলাকায় চাষ জমিগুলো জলের তলায় চলে গিয়েছে। এছাড়াও বিঘার পর বিঘা জমির ধান ও কাঁচা সবজি নষ্ট হয়েছে।
নতুন করে বৃষ্টি না হওয়ায় দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে কিছুটা কমানো হল জল ছাড়ার পরিমাণ। এখন দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে ছাড়া হচ্ছে ১,৯৪,১০০ কিউসেক জল। বৃহস্পতিবার সকালেই দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে ছাড়া হয়েছে ১,৮৬,১০০ কিউসেক জল। বেলায় দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ আরও বাড়ানো হয় । বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে ছাড়া হচ্ছে ২,৩১,২৪৮ কিউসেক জল।