Israel-Hamas: বাপেরও বাপ হামাস! কীভাবে বোকা বানাল বিশ্বসেরা ইজরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা ‘মোসাদ’কে?

Israel-Hamas: এত কিছুর পরও, গত শনিবার কিচ্ছুটি টের পায়নি ইজরায়েল। সীমান্তের বেড়া ভেঙে, সমুদ্রপথে, প্যারাগ্লাইডারে চড়ে, গাজা ভূখণ্ড থেকে ইজরায়েলে ঢুকে পড়েছিল হাজার হাজার সশস্ত্র হামাস যোদ্ধা। কী করে ঘটল এটা? কী করে ইজরায়েলের এত অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, এত ধারালো গোয়েন্দা সংস্থা কোনও টেরই পেল না?

Israel-Hamas: বাপেরও বাপ হামাস! কীভাবে বোকা বানাল বিশ্বসেরা ইজরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা ‘মোসাদ’কে?
হামাস যোদ্ধাদের হামলায় বিধ্বস্ত এক ইজরায়েলি থানাImage Credit source: AFP
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Oct 10, 2023 | 3:37 PM

জেরুসালেম: গাজার সীমান্তে রয়েছে কাটতারের বেড়া। রয়েছে ক্যামেরা নজরদারি। আছে মোশন সেন্সরও, ফলে সীমান্তের আশপাশে কোনে প্রাণী নড়াচড়া করলেই ধরা পড়ে যায়। এমনকী মাটির নীচ দিয়ে গর্ত সূড়ঙ্গ যাতে কেউ সীমানা টপকে যেতে না পারে, তার জন্য মাটির নীচেও রয়েছে সেন্সর-যুক্ত দেওয়াল। এছাড়া সীমান্তরক্ষী বাহিনীর টহলদারী তো আছেই। সেই সঙ্গে রয়েছে ঘরোয়া গোয়েন্দা সংস্থা ‘শিন বেত’। বিশ্বখ্যাত গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ, যারা যে কোনও দেশ ও সন্ত্রাসবাদী সংস্থার হাঁড়ির খবর রাখার জন্য খ্যাত। তাছাড়া ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রতিটি শাখার আলাদা আলাদা গোয়েন্দা বিভাগ রয়েছে। তাদের হাতে আছে অত্য়াধুনিক সব প্রযুক্তি। টেলিফোন-ইমেলে আড়ি পাতা, উপগ্রহ মাধ্যমে আকাশপথে নজরদারি চলে নিয়মিত। এত কিছুর পরও, গত শনিবার কিচ্ছুটি টের পায়নি ইজরায়েল। সীমান্তের বেড়া ভেঙে, সমুদ্রপথে, প্যারাগ্লাইডারে চড়ে, গাজা ভূখণ্ড থেকে ইজরায়েলে ঢুকে পড়েছিল হাজার হাজার সশস্ত্র হামাস যোদ্ধা। কী করে ঘটল এটা? কী করে ইজরায়েলের এত অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, এত ধারালো গোয়েন্দা সংস্থা কোনও টেরই পেল না?

প্রযুক্তির আলো বন্ধ, গাঢ় অন্ধকার

এই ব্যর্থতার সঠিক কারণ জানতে বেশ কয়েক বছর লেগে যেতে পারে। তবে ইতিমধ্যেই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইজরায়েল-সহ বিভিন্ন দেশের বর্তমান ও প্রাক্তন গোয়েন্দা কর্তারা এই বিষয়ে তাঁদের অনুমান প্রকাশ করেছেন। যা থেকে হামাস যোদ্ধাদের এই বিস্ময়কর আক্রমণের একটা সার্বিক ছবি ফুটে উঠতে শুরু করেছে। গোয়েন্দা কর্তাদের কাছে এখনও অনেক প্রশ্নেরই উত্তর নেই। তবে, একটা বিষয়ে তাঁরা নিশ্চিত, ইজরায়েলের ‘হাইটেক’ নজরদারিকে ফাঁকি দিতে ‘লোটেক’ ব্য।বহার করেছে। অর্থাৎ, হয় অনেক পুরোনো দিনের প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে, বা, প্রযুক্তি ব্যবহার করেইনি। নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য ইমেল বা টেলিফোন ব্যবহার করেনি। বলা যেতে পারে, প্রযুক্তির আলো বন্ধ করে দিয়ে গাঢ় অন্ধকারে গা ঢাকা দিয়েছিল তারা।

অযান্ত্রিক

গোয়েন্দা কর্তাদের মতে, নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের কোনও ইলেকট্রনিক যন্ত্র ব্যবহারের পরিবর্তে হামাল যোদ্ধারা নিজেদের মধ্যে সামনাসামনি বৈঠক করেছে। আলাদা আলদা কাজের জন্য আলাদা আলাদা গোষ্ঠী তৈরি করেছে। এই গোষ্ঠীগুলি শুধুমাত্র তাদের কাজটুকুই জানত। সার্বিক পরিকল্পনার বিষয়ে জানত হাতে গোনা লোক। হামাস গোষ্ঠীতে সম্ভবত ইজরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থাগুলির কোনও চর নেই। হামাসের পরিকল্পনা জানার কোনও মানব উৎস নেই তাদের।

এনক্রিপ্ট করা প্রযুক্তি

অনেকে আবার মনে করছেন, যোগাযোগের জন্য একেবারেই কোনও যন্ত্র ব্যবহার করা হয়নি, তা নাও হতে পারে। সম্ভবত তারা এনক্রিপ্ট করা প্রযুক্তি ব্যবহার করেছিল। ইজরায়েল দীর্ঘদিন ধরেই তাদের ফোন এবং ইমেল যোগাযোগে আড়ি পাতে। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় সম্ভবত, ইজরায়েলের প্রযুক্তগত নজরদারি কীভাবে এড়ানো যায়, তা শিখে নিয়েছে হামাস।

ভূগর্ভে ভয়ঙ্কর

যেভাবে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কয়েক হাজার রকেট ছুড়েছে হামাস, তাতে মনে করা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরেই ওই অস্ত্র ভান্ডার সংগ্রহ করা হয়েছিল। গোয়েন্দা কর্তাদের মতে, সম্ভবত তারা মাটিকর নীচে সূড়ঙ্গ কেটেই ওই অস্ত্র সংগ্রহ করেছে এবং মাটির নীচেই তা লুকিয়ে রেখেছিল। ফলে, ইজরায়েলের উপগ্রহগুলির নজরে ধরা পড়নি ওই অস্ত্রশস্ত্র। মার্কিন গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই সূড়ঙ্গে বা ভূগর্ভে তার অস্ত্রের মজুদ লুকিয়ে রাখার শিল্প আয়ত্ব করেছে হামাস।

চমকে গেল সেন্সর

তবে সূড়ঙ্গ শুধু অস্ত্র লুকিয়ে রাখতেই নয়, হামলার সময়ও কাজে এসেছে হামাসের। গোয়েন্দা কর্তাদের মতে, ২০২১ সালেই গাজা সীমান্তে সেন্সর দেওয়া ভূগর্ভস্থ প্রাচীরে দিয়েছিল ইজরায়েল। সেই প্রাচীরের বাধা টপকাতে ওই প্রাচীর পর্যন্ত সূড়ঙ্গ খুঁড়েছিল হামাস যোদ্ধারা। তারপর, আচমকা একসঙ্গে বহু সংখ্যায় সূড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে এসে ওই প্রাচীর টপকায় তারা। ফলে, ওই সেন্সর সিস্টেমটি দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেনি। কার্যত ভোঁতা হয়ে গিয়েছিল।

হামাসের গোয়েন্দা ব্যবস্থা

তাছাড়া, হামাসের নিজস্ব গোয়েন্দা ব্যবস্থার অত্যন্ত উন্নতি হয়েছে। বিশেষ করে, ২০০৭ সালে গাজা ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে তাদের ক্ষমতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ইজরায়েল সীমান্ত পর্যবেক্ষণ, ইজরায়েলে এজেন্ট পাঠিয়ে নজরদারি চালানো এবং ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর গোপন তথ্য আদায় করার ক্ষেত্রে, গত কয়েক বছরে তারা উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে। ফলে, ইজরায়েলি অস্ত্রশস্ত্র, তাদের সামরিক প্রশিক্ষণ এবং কোথায় কত সেনা মোতায়েন করা আছে, এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি তাদের আগে থেকেই জানা ছিল। সেই বুঝেই হামলা চালানো হয়েছে।

গাজায় অমনোযোগ

এর পাশাপাশি, ইজরায়েল সরকারের মনোযোগও অন্যত্র ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। গত কয়েক মাস ধরে ইজরায়েলের ঘরোয়া রাজনীতিতে টানাপোড়েন চলছে। দেশের বিচার বিভাগের ক্ষমতা কমানোর চেষ্টা করছেন ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। এর বিরুদ্ধে ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে তীব্র প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে। ইজরায়েলি বাহিনীকে গাজা থেকে সরিয়ে ওয়েস্ট ব্যাঙকে নিয়ে গিয়েছিল সরকার, এমনটাই অভিযোগ।