ঢাকা: প্রতি বছর এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করেন দুই পারের বহু মানুষ। একদিকে পুজো। একইসঙ্গে মিলনমেলা। দুই দেশের নাগরিকরা সেখানে জমায়েত হন। এবার আর তা হল না। পুজো হলেও কুলিক নদীর পাড়ে মিলনমেলার আয়োজনের অনুমতি দিল না বাংলাদেশের প্রশাসন।
বাংলাদেশের উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার তাজিগাঁও সীমান্তে কুলিক নদীর পাড়ে জামর-পাথর কালীপুজো উপলক্ষে এবার হয়নি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের দুই বাংলার মিলনমেলা। সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এই মেলাসহ সীমান্তের কাঁটাতার এলাকায় জনগণের সমাগম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন। বিজিবির সিও বলছেন, আন্তর্জাতিক সীমানা আইনের পরিপন্থী এই মিলনমেলা। তাই কয়েক বছর ধরে তা নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
এদিন দেখা গেল, রাস্তার মোড়ে মোড়ে পুলিশ। বিজিবির নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার তাজিগাঁও সীমান্তে। জানা গিয়েছে, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর বাংলাদেশের অনেকের আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি ভারতীয় অংশে পড়ে। ফলে অনেকেরই যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে তাঁরা উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অলিখিত সম্মতিতে প্রতি বছর এই সীমান্তবর্তী এলাকায় এসে দেখা সাক্ষাৎ করার সুযোগ পান। হরিপুরের কুলিক নদী পার হয়ে বাংলাদেশের চাঁপাসার ও কোঁচল এবং ভারতের মাকড়হাট ও নারগাঁও সীমান্ত এলাকা থেকে ৩৪৪/৪৫ নম্বর মেইন পিলার সংলগ্ন এলাকার কাঁটাতারের দু’প্রান্তে ভিড় করে দুই বাংলার হাজার হাজার নারী পুরুষ। এতে ওই সীমান্তে এক মিলনমেলায় পরিণত হয়। কেউ বা তারকাঁটার উপর দিয়ে খাবার আদান প্রদান, আবার কেউ বা সুখ দুঃখের কথা বলে সময় পার করেন। আর পূজাকে ঘিরে সীমান্ত পারেই বিভিন্ন জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেন ব্যবসায়ীরা।
সীমান্তবাসীরা জানান, ভারত আর বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী যেসব সাধারণ মানুষ অর্থাভাবে পাসপোর্ট-ভিসা করতে পারেন না, তাঁরা এই দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকেন। এই দিনে তাঁরা আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করেন। এদিন দু’দেশের অনেকে আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করেন। কথা বলার সুযোগ পান।
প্রতিবছরই মেলায় এসে বাংলাদেশে অবস্থানরত তাঁদের আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করেন। এক ব্যক্তি বলেন, “প্রতিবছরই এই দিনটির জন্য আমরা অপেক্ষা করি। তবে এবার পূজা হলেও মিলনমেলা আর হয়নি। এতে আমরা অনেক মর্মাহত হয়েছি। আশা করছি আগামীতে এ সমস্যার সমাধান হবে। এটি একটি ঐতিহাসিক মেলা। মেলা করতে না দিলেও পূজা করতে সার্বিক সহযোগিতা করেছে প্রশাসন।”
হরিপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার আরিফুজ্জামান বলেন, “প্রতিবছরের ন্যায় এবারও পাথর কালীর পূজা উৎযাপন হয়েছে। তবে কেউ যাতে আন্তর্জাতিক সীমানা লঙ্ঘন করে ওপারে না চলে যান, সেই কারণে আমরা এই পাথর কালী পূজাকে কেন্দ্র করে যে মেলা অনুষ্ঠিত হয় সেই মেলাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলাম। প্রশাসনের লোকজন সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের এখানে মোতায়েন করা হয়েছে।”