TV9 Explained: পাক প্রধানমন্ত্রীর গদি যেন পদ্মপাতার জল! এত টলমল করে কেন? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

TV9 Bangla Explained: সরে যেতে হয়েছে ইমরান খানকে। নতুন প্রধানমন্ত্রীও নির্বাচন হয়ে গেল পাকিস্তানে। কিন্তু, তাতেও কি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে ভারতের পড়শি এই দেশে?

TV9 Explained: পাক প্রধানমন্ত্রীর গদি যেন পদ্মপাতার জল! এত টলমল করে কেন? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
মেয়াদ শেষের আগেই বারবার চেয়ার ছাড়তে হয়েছে পাক প্রধানমন্ত্রীদের
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Apr 12, 2022 | 1:57 PM

ইসলামাবাদ : স্বাধীনতার পর কেটে গিয়েছে ৭৫ বছর। কিন্তু, পাকিস্তানের একজনও প্রধানমন্ত্রী তাঁর মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। কখনও সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে। কখনও কোনও প্রধানমন্ত্রীকে মেয়াদ শেষের আগেই সরিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। ভারতের পড়শি এই দেশে সরকারের স্থিতিশীলতা যেন ভিনগ্রহের কোনও বিষয়। পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি যেন সেকথাই আরও একবার বুঝিয়ে দিল। মেয়াদ শেষের আগেই সরে যেতে হয়েছে ইমরান খানকে।

পাকিস্তান ক্রিকেটের তিনি ছিলেন অবিসংবাদিত অধিনায়ক। দেশকে বিশ্বকাপ এনে দিয়েছেন। ১৯৯৬ সালে পা রাখেন রাজনীতিতে। গঠন করেন নিজের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ। ১৯৯৭ সালে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে দুটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ইমরান। তবে দুটি আসনেই পরাজিত হন।

ইমরানের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের উত্থান কার্যত ২০১১ সালের শেষদিকে। ওই বছরের ৩০ অক্টোবর এবং ২৫ ডিসেম্বর তাঁর দুটি জনসভায় মানুষের ঢল নামে। ধীরে ধীরে তাঁর দল প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠে। শেষপর্যন্ত ২০১৮ সালে পাকিস্তানের মসনদে বসেন ইমরান। আর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর দেশবাসীকে নতুন পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখান ইমরান। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই, দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উন্নতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। স্বতন্ত্র বিদেশনীতির কথাও বলেছিলেন তিনি।

ক্ষমতায় আসার চার বছর পেরিয়ে গেলেও ইমরান নিজের প্রতিশ্রুতি রাখেননি বলে অভিযোগ। এই সুযোগে তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন বিরোধীরা। অনেক ‘নাটক’ শেষে পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আস্থা ভোটে হেরেছেন। ফলে পূর্ববর্তী প্রধানমন্ত্রীদের মতোই নিজের মেয়াদ শেষ করতে পারেননি ‘কাপ্তান’ ইমরান।

৭৫ বছর ধরে এই টালমাটাল পরিস্থিতির নেপথ্য কারণ কী?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাকিস্তানে সরকারের উপর সেনার প্রভাব রয়েছে। পাকিস্তানে ৩৪ বছর শাসন করেছে সেনা। তিনবার নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করেছেন সেনাপ্রধান। আবার অনেকসময় সেনার সমর্থনে প্রধানমন্ত্রীকে পদ থেকে সরিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।

ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, দেশ কীভাবে চলবে, বিদেশনীতি কী হবে, সেইসব ঠিক করে পাকিস্তানের সেনা। কখনও কোনও প্রধানমন্ত্রী খুব শক্তিশালী এবং জনপ্রিয় হয়ে উঠলে দেশরক্ষার দোহাই দিয়ে তাঁকে গদি থেকে সরিয়ে দিয়েছে সেনা। ১৯৭৭ সালে জ়ুলফিকর আলি ভুট্টোকে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে সেনা অভ্যুত্থান ঘটিয়েছিলেন তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়া-উল-হক। প্রধানমন্ত্রিত্ব যাওয়ার পর জ়ুলফিকর একটি সভা করেন। সেখানে জড়ো হন বহু মানুষ। এরপরই জ়ুলফিকরকে একটি খুনের মামলায় গ্রেফতার করা হয়। এবং ফাঁসি দেওয়া হয় তাঁকে।

অনেকের বিশ্বাস, ২০১৮ সালে ইমরানের ক্ষমতায় আসার পিছনে সেনার সমর্থন ছিল। কারণ, সেনা ভেবেছিল, ইমরান প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসবেন। কিন্তু, পিছন থেকে সরকার চালাবে সেনা।

প্রশ্ন উঠছে, সেনা এখন কেন ইমরানকে সমর্থন করছে না তাহলে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে মানুষের মনে ক্ষোভ বেড়েছে। শিক্ষার পরিকাঠামোর বেহাল অবস্থা। রাস্তা, জল, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নিয়েও মানুষ ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। এছাড়া আইএসআই প্রধান নিয়োগে ছাড়পত্র দিতে চাননি ইমরান। যা নিয়েও সেনার সঙ্গে মতবিরোধ বাধে।

চলতি বছরের ২৪ ফেব্রয়ারি ইমরানের রাশিয়া সফরকেও সমর্থন করেননি সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া। রাশিয়া সেনা যখন ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছে, সেইসময় ইমরানের ওই সফরকে ভাল চোখে দেখেননি বাজওয়া। আস্থা ভোটের একদিন আগে তিনি বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার এই হামলা দুর্ভাগ্যজনক। এমনকী, ইমরান বারবার আমেরিকাকে আক্রমণ করলেও বাজওয়া এখন বলছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে আমেরিকার কূটনৈতিক সম্পর্ক খুব ভাল। সবমিলিয়ে বিগত প্রধানমন্ত্রীদের মতোই মেয়াদ শেষের আগেই বিদায় নিতে হয়েছে ইমরানকে।

আজ পিএমএল-এন নেতা শেহবাজ় শরিফ পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। আপাতদৃষ্টিতে পাকিস্তানের রাজনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতির অবসান হল। কিন্তু, পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাস খতিয়ে দেখলে এই ‘স্বস্তি’ কতদিন থাকবে, সেই প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে।

আরও পড়ুন: Imran Khan : ‘চোরের সঙ্গে বসতে রাজি নই’, ‘ওয়াকওভার’ দিয়ে ‘প্যাভিলিয়নে’ ফিরলেন ইমরান