পাকিস্তানের (Pakistan) রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ঘোরতর সঙ্কট নেমে এসেছে। ইতিমধ্যেই পাকিস্তান জাতীয় সংসদে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের (Imran Khan) বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ হয়ে গিয়েছে। আগামী ৩ এপ্রিল সংসদে ভোটাভুটি হবে। মনে করা, সংসদে অনাস্থা ভোট হলে, ইমরান খানের হার অনীবার্য কারণ সংখ্যার বিচারে বিরোধীরা তাঁর দল পাকিস্তান তেহরিক ই ইনসাফের থেকে এগিয়ে। ক্ষমতা বাঁচাতে বিশ্বকাপ জয়ী পাকিস্তান ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক ইমরান খান কোনও ধরনের চেষ্টা করতে বাকি রাখেননি। একদিকে তিনি যেমন পাকিস্তানের সেনা প্রধান বাজওয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন, অন্য দিকে জোট সঙ্গী দলগুলির কাছেও সমর্থন তুলে না নেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে বরফ গলেনি। ইমরান খান সরকারের সব থেকে বড় শরিক দল এমকিউম বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবকে সমর্থন জানানোর ঘোষণা করেছে। ইমরান জানিয়েছেন, আজ সন্ধে বেলা জাতি উদ্দেশে ভাষণে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া যাবতীয় ষড়যন্ত্রের পর্দাফাঁস করবেন। মনে করা হচ্ছে, আজই প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিতে পারেন ইমরান। কিন্তু কেন এই পরিস্থিতির মুখোমুখি ইমরান খান? পিছনে রয়েছে বেশ কয়েকটি কারণ…
অনাস্থা প্রস্তাবের পিছনে কে?
গত সোমবার ২৮ মার্চ ঐক্যবদ্ধভাবে বিরোধীরা ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল। পাকিস্তানের প্রধান দুই বিরোধী দল তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান মুসলিম লিগ নওয়াজ ও বিলাবল ভুট্টো জ়ারদারি নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টি, ইমরানের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলিকে একত্রিত করেছিল। অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও ইমরান খানের বিরোধিতায় অনাস্থা প্রস্তাবকে সমর্থন করেছে। এমনকী ইমরানের জোট শরিক এমকিউএমও এই অনাস্থা প্রস্তাবের সমর্থনে ইমরানের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার কথা জানিয়েছে।
কেন ইমরানে বিরুদ্ধে এত রাগ?
২০১৮ সালে বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে সরকারে এসেছিল ইমরান খানের দল। তবে এককভাবে তেহরিক ই ইনসাফ সংখ্যা গরিষ্ঠতা পায়নি। শরিক দলগুলির সাহায্য নিয়ে সরকার তৈরি করেছিলেন ইমরান। সেই সময় বিরোধী দলগুলি বিভক্ত ছিল এবং সিনিয়র বিরোধী নেতাদের ওপর দুর্নীতির মারাত্মক অভিযোগ ছিল। ইমরান সরকারের শাসনকালে পাকিস্তানের আর্থিক অবস্থা ক্রমশই খারাপ দিকে গিয়েছে। ইমরান খানের বিরুদ্ধে আর্থিক অবস্থাকে আরও খারাপ করা ও বিদেশ নীতি নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। ২০১৮ সালে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করতে ৪ জন অর্থমন্ত্রী নিয়োগ করেছিলেন ইমরান। আইএমএফ পাকিস্তানকে অর্থ সাহায্য করবে বলে জানিয়েছিল, তবে শর্ত পূরণ না হওয়ায় সেই টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে তারা। চিনের থেকে পাকিস্তানের ঋণের বোঝা অনেকে। তাই ক্রমশই ইমরানের ওপর চাপ বাড়ছিল।
পাক সেনা বাহিনীর ভূমিকা
অনেকেই মনে করেন, ইমরান খান আজ যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন, তার নেপথ্যে পাক সেনাবাহিনীর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কারণ ২০১৮ সালে ইমরান খান যখন ক্ষমতায় এসেছিল তখন, পাক সেনাবাহিনী তাঁকে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন জানিয়েছিল। অনেকেই দাবি করেন আগেই ইমরান খান সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু সেনার সমর্থন সেই সময় থাকার কারণে সরকার বাঁচাতে সক্ষম হন ইমরান। তবে এবার পাক সেনাবাহিনী ইমরানের ওপর খড়্গহস্ত হয়েছে। অক্টোবর মাস থেকেই ইমরান খান ঘনিষ্ঠ পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই প্রধান ফইজ হামিদকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পাক সেনা বাহিনীর মদতেই ওই কাজ হয়েছিল বলেই মনে করা হচ্ছে। ইমরান খান পাক সেনা প্রধান বাজওয়া সহ শীর্ষ সেনা আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন, কিন্তু তারা তাঁকে ইস্তফা দিতে বলেন।
সংসদে সংখ্যার বিচারে কে এগিয়ে?
পাকিস্তানের জাতীয় সংসদে সংখ্যার বিচারেও ইমরান খান পিছিয়ে রয়েছেন। এই মুহূর্তে ইমরানের দল তেহরিক ই পাকিস্তানের কাছে এককভাবে ১৫৫ জন সংসদ সদস্যের সমর্থন রয়েছে। ৩৪২ আসনের সংসদে সরকার ধরে রাখতে ১৭২ জনকে প্রয়োজন। সেখানে বিরোধীদের হাতে ১৬৩ জন সাংসদের সমর্থন রয়েছে এবং ইমরানের জোটসঙ্গী এমকিউএমের ৭ সংসদ সদস্যও অনাস্থা ভোটে বিরোধীদের আনা প্রস্তাবকেই সমর্থন করবেন। তাই সংখ্যার বিচারেও পিছিয়ে রয়েছেন ইমরান খান। এখন সরকার বাঁচাতে ইমরান খান কী সিদ্ধান্ত নেন সেদিকেই নজর থাকবে সকলের।
আরও পড়ুন Imran Khan: আরও ‘একলা’ ইমরান, অনাস্থা প্রস্তাবে ভোটাভুটির আগেই হারালেন সংখ্যাগরিষ্ঠতাও!
আরও পড়ুন Russia-Ukraine Talk: ‘ন্যাটোর সদস্যপদ চাই না, বরং…’, রাশিয়ার মতোই এবার একাধিক দাবি জানাল ইউক্রেনও