Budget 2022: কীভাবে এল আর বন্ধ হল বাজেটের গোপনীয়তা
Budget 2022: ভারতেও ১৯৫০ সালে বাজেটের কিছু অংশ লীক হয়ে গিয়েছিল। এরপর বাজেট ছাপানোর কাজ রাষ্ট্রপতি ভবনের প্রেস থেকে গভর্নমেন্ট প্রেস, মিন্টো রোডে স্থানান্তরিত করা হয়। তবে ১৯৮০ সালের পর থেকে বাজেট নর্থ ব্লকের বেসমেন্টে ছাপা হতে থাকে।
বাজেট তৈরি করার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া এখনও পরম্পরা আর গোপনীয় থাকে। প্রত্যেক বছর যেমনই বাজেট তৈরির কাজ শুরু হয়, অর্থ মন্ত্রকের প্রধান দফতর নর্থ ব্লক সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। সমস্ত আধিকারীকদের বারবার অত্যাধিক গোপনীয়তা বজায় রাখার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় আর তাদের উপর কড়া নজর রাখা হয়। এমনকি যদি তারা বাজেট পেশ হওয়ার কিছু আগে এক ঘন্টাও পান তাহলেও তারা বাজেট পড়ার আগে সেই তথ্য সার্বজনিক করতে পারেন না। বেশ কয়েকবার কিছু প্রবীণ সাংবাদিকরা বাজেটের কপি আগে পেয়ে যান, কিন্তু তাদের উপরও বড় আধিকারীকদের কড়া নজর থাকে যাতে তারা বাজেট পেশ হওয়ার আগে সেই অংশকে না ছাপেন। এই ধরণের গোপনীয়তা রক্ষা করার পেছনের কারণ হল অর্থমন্ত্রীর বাজেট ভাষণ পড়ার আগে কোনও ধরনের অর্থিক গুজব যাতে না ছড়ায়।
১৮৫৯ এর দশকে শুরু হয়েছিল প্রথা
এই প্রথা ১৮৫০ এর দশকে গ্রেট ব্রিটেনে শুরু হয়েছিল যখন উইলিয়াম গ্ল্যাডস্টোন ১৮৫২ থেকে ৫৫ পর্যন্ত রাজকোষের চান্সেলর ছিলেন। গ্ল্যাডস্টোন পরে প্রধানমন্ত্রীও হন। মজার কথা হল ব্রিটেনে এই প্রথা হিন্দি শব্দ – বাজেট পর্দা হিসেবে পরিচিত হয়। গ্ল্যাডস্টোনের সময় থেকেই এটি একটি নিয়মিত প্রথা হয়ে দাঁড়ায় যে চান্সেলরের বাজেট পেশ করার আগে তার কোনও অংশ যাতে লীক না হয়।
১৯৪৭ সালে চান্সেলর হিউগ ডাল্টনকে বাজেট পেশের দিন সকালে বাজেটের বিধান লীক হওয়ার কারণে ইস্তফা দিতে হয়েছিল। তিনি একজন সাংবাদিককে নিজের পেশ করতে চলা বাজেটের ব্যাপারে জানিয়ে দিয়েছিলেন আর সেই সাংবাদিক বাজেট পেশ হওয়ার আগেই সেই বিধান ছেপে দেন আর সাধারণ মানুষ তা জেনে যায়।
১৯৫০ সালে বাজেটের কিছু অংশ হয়েছিল লীক
ভারতেও ১৯৫০ সালে বাজেটের কিছু অংশ লীক হয়ে গিয়েছিল। এরপর বাজেট ছাপানোর কাজ রাষ্ট্রপতি ভবনের প্রেস থেকে গভর্নমেন্ট প্রেস, মিন্টো রোডে স্থানান্তরিত করা হয়। তবে ১৯৮০ সালের পর থেকে বাজেট নর্থ ব্লকের বেসমেন্টে ছাপা হতে থাকে। হালুয়া সেরিমনির পর বাজেট ছাপার সঙ্গে সম্পর্কিত আধিকারীকদের নর্থ ব্লকেই কোয়ারেন্টাইন করে দেওয়া হয়। এরপরের ১০দিন পর্যন্ত এই আধিকারীকরা অর্থমন্ত্রকের বেসমেন্টে নিজেদের পরিবার আর অন্যান্যদের থেকে একদম আলাদা কাটান আর শুধুমাত্র বাজেট ছাপার কাজই করেন।
তবে কিছুদিন আগে থেকে ব্রিটেন বাজেটের এই গোপনীয়তা বা পর্দা সিস্টেমকে বন্ধ করে দিয়েছে। আসলে সরকারের বাজেট প্রস্তাবগুলিতে একটি ধারাবাহিকতা থাকে। আর্থিক বা কর সংশোধনের রোড ম্যাপ আগে থেকেই তৈরি হয়। মানুষ আগে থেকেই সবকিছু জেনে যায়। এই অবস্থায় বাজেট নিয়ে গোপনীয়তা বজায় রাখার কোনও মানে থাকে না।
১৯৯৭ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত রাজকোষের চান্সেলর থাকা গর্ডন ব্রাউন যখন প্রধানমন্ত্রী হন, তখন তিনি বাজেট গোপনীয়তা সিস্টেমকে বন্ধ করে দেন। এখন সেখানে বাজেটের আগে প্রেস বিবৃতিকে সম্পূর্ণ বিবরণ দেওয়া হয় আর তা নিয়ে আলোচনাও করা হয়। এইভাবে মানুষ বাজেটের প্রধান ঘোষণাগুলি আগে থেকেই জানতে পারেন।
ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকারকে বহন করে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত ভারতে ফেব্রুয়ারির শেষ কর্ম দিবসের বিকেল পাঁচটায় বাজেট পেশ করা হত। কিন্তু তৎকালীন অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিনহা বাজেটের প্রস্তুতিকে বিকেল পাঁচটার বদলে সকাল ১১টায় এগিয়ে আনেন। এই অবস্থায় কী এখনও ভারতে বাজেট পর্দা বা বাজেট গোপনীয়তা সিস্টেমকেও বন্ধ করার সময় আসেনি?
আরও পড়ুন: Republic Day 2022: নজরে নির্বাচন! প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রধানমন্ত্রী মোদীর পোশাকও যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী