Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

EXPLAINED: ট্রাম্পের ‘ট্যারিফ যুদ্ধ’! মোক্ষম জবাব চিন-কানাডার, এখন কী করবে ভারত? 

Donald Trump: মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগেই অশনি সঙ্কেত শুনিয়ে রেখেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কোন কোন দেশের উপর তিনি শুল্ক বসাবেন, কতটা বসাবেন সব আগেভাগে বলে রাখেন। আর তাঁর এই প্রতিশ্রুতির উপর ভর করেই দ্বিতীয়বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়া। এখন প্রেসিডেন্ট হয়ে সেই প্রতিশ্রুতিই পূরণে উঠেপড়ে লেগেছেন। কী এই ট্যারিফ ওয়ার? কতটা প্রভাব পড়বে বিশ্বে? পড়ুন টিভি৯ বাংলার বিশেষ প্রতিবেদন...

EXPLAINED: ট্রাম্পের ‘ট্যারিফ যুদ্ধ’! মোক্ষম জবাব চিন-কানাডার, এখন কী করবে ভারত? 
কী এই ট্যারিফ ওয়ার?
Follow Us:
| Updated on: Feb 04, 2025 | 5:13 PM

রিকশার পেছনে লেখা থাকে, দেখলে হবে, খরচা আছে। এখন খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্টও তাই বলছেন। তবে, একটু অন্যভাবে। ট্রাম্পের বক্তব্য, আমেরিকা আবার মহান দেশ হয়ে উঠবে। তবে তাতে খরচা আছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়তে পারে। গ্রেট নেশন হতে হলে একটু কষ্ট তো করতেই হবে। তো গ্রেট নেশন হয়ে ওঠার খরচ কত? এর প্রভাব কতটা সুদূরপ্রসারী?

ট্যারিফ ওয়ার কী?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগেই অশনি সঙ্কেত শুনিয়ে রেখেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কোন কোন দেশের উপর তিনি শুল্ক বসাবেন, কতটা বসাবেন সব আগেভাগে বলে রাখেন। আর তাঁর এই প্রতিশ্রুতির উপর ভর করেই দ্বিতীয়বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়া। তাই আমেরিকাবাসীর কাছে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। একদম ‘সৎ’ রাজনীতিকের মতো একের পর এক প্রতিশ্রুতি পালন করে যাচ্ছেন।

প্রথমেই কানাডা-মেক্সিকোর উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানোর ঘোষণা করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। চিনের উপর চাপালেন শুল্ক। পাশাপাশি অভিবাসন, গর্ভপাত, লিঙ্গ বৈষম্য, জলবায়ু নিয়ে একের পর এক পদক্ষেপ করে বুঝিয়ে দিলেন, ট্রাম্পের যেমন কথা তেমন কাজ।

কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপে নতুন যুদ্ধ দেখবে বিশ্বজুড়ে। তা হল ট্যারিফ ওয়ার। ট্রাম্প যদি মাত্রারিক্ত শুল্ক চাপান, অন্য দেশও বসে থাকবে না। আর তা সত্যি হতে চলেছে। পাল্টা কানাডা, মেক্সিকোও হুঁশিয়ারি দিয়েছে ট্যারিফ চাপানোর।

কেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের ট্যারিফ-হুমকি?

মোদীর মতোই ‘লোকাল ফর ভোকাল’ মডেলে প্রথম থেকেই সওয়াল করে এসেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আন্তজার্তিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসার পিছনে এই তত্ত্বই তুরুপের তাস হিসাবে কাজ করেছে। আমেরিকার নতুন প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন তিনি। আমেরিকায় বসে ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলি থেকে সস্তায় শ্রম কেনার উপর নানা নিষেধাজ্ঞা চালু করতে চলেছেন তিনি। অভিবাসন নীতিতেও কড়া হচ্ছেন। অন্যদিকে, দেশীয় কোম্পানির হাতে মুনাফা তুলে দিতে এই ট্যারিফ ওয়ারে নেমেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের ট্যারিফ ওয়ারের আরও একটি কারণ রয়েছে। অনেক দেশই নিজেদের মুদ্রা দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ব্যবসা শুরু করেছে। ভারত তাদের মধ্যে অন্যতম। এর ফল বিশ্বজুড়ে কমতে পারে মার্কিন ডলারের আধিপত্য। ডলার দুর্বল হলে মার্কিন অর্থনীতি তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়তে পারে। আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স যুগে ডলারকে আরও শক্তশালী করা ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্যারিফের ভয় দেখিয়ে সেই সব দেশকে লাইনে আনার চেষ্টা করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

কীভাবে শুরু ট্যারিফ যুদ্ধ?

গত সোমবার ডোনাল্ড ট্রাম্প বলে দেন, আরও ৩০ দেশের উপর আমদানি শুল্ক চাপতে পারে। ঘুরিয়ে হলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইউরোপের দেশগুলির দিকেই ইঙ্গিত করেছেন। তবে, ট্রাম্প একতরফা ট্যারিফ বসাবেন, আর বাকিরা বসে বসে দেখবে, সেটা কী হয়? কানাডা ও মেক্সিকোও সটান নানা মার্কিন জিনিসের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়ে দিয়েছে। চিন ক্ষোভ উগরে দিয়েছে। যে কোনও মুহূর্তে তারাও একই পথে হাঁটবে।

আমেরিকার ব্যবসার একটা বড় অংশই হয় এই দেশগুলোর সঙ্গে। ভারত আপাতত স্বস্তিতে। ট্রাম্প এই যাত্রায় ভারত নিয়ে কিছু বলেননি। তবে আজ না হোক কাল, ভারতের উপরও খাঁড়া নামবে। সবমিলিয়ে এই মুহূর্তে দুনিয়া জুড়ে অঘোষিত শুল্কযুদ্ধ বা ট্যারিফ ওয়ারের ঘনঘটা।

ব্যুমেরাং আমেরিকার কাছেই?

মজার কথা হল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট যে দুনিয়া জুড়ে যুদ্ধের ঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছেন, সে ব্যাপারে ৭৫ শতাংশ আমেরিকানই অন্ধকারে। গত মাসে ট্রাম্পের ট্যারিফ ওয়ার নিয়ে আমেরিকায় একটা সমীক্ষা করে দ্য মর্নিং ক্রনিক্যাল। তাতে উঠে আসে, এনিয়ে বেশিরভাগ আমেরিকানের কোনও ধারণাই নেই। তবে, মার্কিন মুলুকে শিল্পমহল অনেক সাবধানী। তারা দেওয়াল লিখনটা পড়তে পারছে। তারা জানে, যেটা ঘটছে, তার ফল মারাত্মক।

আমেরিকা-সহ দুনিয়ার অধিকাংশ দেশে সাপ্লাই চেন বিপর্যস্ত হবে। কারখানার যন্ত্রাংশ, কাঁচামাল ঠিকমত না পেলে হাজারো সমস্যা। যেমন ধরুন, হার্লে ডেভিডসন মার্কিন ব্র্যান্ড। কিন্তু, আমেরিকায় তৈরি এই বাইকে আরও ৮ দেশ থেকে আসা যন্ত্রাংশ লাগে। যেগুলো হার্লে ডেভিডসন তৈরি করে না। করতে পারবেও না। এখন সেই পার্টসগুলোর উপর চড়া শুল্ক বসলে বিদেশে হার্লের ব্যবসা লাভজনক নাও হতে পারে। ট্রাম্প অবশ্য এসবে আমল দিচ্ছেন না। তাঁর টার্গেট আলাদা। বিশেষজ্ঞদের মতে ট্রাম্পের ধারণা, কানাডা ও মেক্সিকো বেআইনি অভিবাসীদের আটকাতে হাত গুটিয়ে আছে। ট্যারিফ চাপিয়ে ওদের শিক্ষা দেওয়া যাবে। আর চিনা পণ্য যেভাবে বন্যার জলের মতো আমেরিকায় ঢুকছে, তাতে মার্কিন শিল্পমহলেরও বিপদ দেখছেন ট্রাম্প। এসব সামলাতে তাঁর হাতে আপাতত একটাই অস্ত্র, চড়া শুল্ক ও আরও চড়া শুল্ক।

গ্লোবাল রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট ফার্ম মার্সিলির অনুমান, ট্রাম্প যে আর্থিক নীতি নিচ্ছেন, তার ধাক্কায় দুনিয়ার অধিকাংশ দেশে মানুষের উপর চাপ বাড়বে। মার্সিলির আশঙ্কা, “আমরা নিমন্ত্রণ করে মহামন্দা ডেকে আনছি। এর ফল ২০০৮ সালের থেকেও ভয়াবহ হতে পারে। ভোট প্রচারে ট্রাম্প যুদ্ধ থামানোর কথা বলেছিলেন। এখন দেখা যাচ্ছে তিনি অন্য একটা যুদ্ধ শুরু করে দিলেন। আমার ধারণা এই পর্বের সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং পার্টটা এখনও বাকি। চিন- আমেরিকা ট্রেড ওয়ার আরও ছড়ালে বিষয়টা হাতের বাইরে চলে যেতে পারে।”

ভারতে কী প্রভাব?

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যে কোনও যুদ্ধেই ভারতের কূটনৈতিক অবস্থান প্রশংসনীয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে আমেরিকা, চিনের মতো শক্তিধর দেশ যুযুধান পক্ষ হয়ে গেলেও ভারত সব পক্ষের মন জুগিয়ে চলতে পেরেছে। আমেরিকার রক্তচক্ষু এড়িয়ে রাশিয়ার থেকে কম দামে তেলও কিনেছে ভারত। তাতে আমেরিকা ক্ষুণ্ণ হলেও ভারতের মতো বাজারের কথা ভেবে সেভাবে পদক্ষেপ করতে দেখা যায়নি। ট্যারিফ যুদ্ধ ভারত তেমনই কোনও অবস্থান নেবে বলে কূটনীতিকরা আশাবাদী। চিনের পর ভারত বড় বাজার। এই বাজার দখল করতে চিন মরিয়া। ভারতের উপর বড় কোনও পদক্ষেপ করার আগে দ্বিতীয় বার ভাববে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকা। তাছাড়া ভৌগলিকভাবে ভারত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমেরিকার কাছে। চিনের নজরদারি চালাতে ভারতের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন ট্রাম্পের। সেই সুযোগে ট্যারিফ ওয়ারে যাতে সাপ মরে কিন্তু লাঠি না ভাঙে এমন কৌশলী অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা যে ভারত করবে, এ নিয়ে সন্দেহ নেই কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।