IndiGo Journey: একটি মাত্র ভাড়া করা বিমান নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন দুই বন্ধু, কীভাবে আকাশ দখল করল IndiGo?
IndiGo Flight: ইন্ডিগোর সাফল্যের নেপথ্য কারণ ছিল মধ্যবিত্ত মানুষ, যাদের বিমানে চড়ার স্বপ্ন পূরণ করেছিল ইন্ডিগো। প্রথম থেকেই ইন্ডিগোর লক্ষ্য ছিল সস্তায় বিমান পরিষেবা দেওয়া। এই উদ্যোগই দেশের মানুষের কাছে পরিচিত করে তোলে ইন্ডিগোকে।

নয়া দিল্লি: গোটা দেশকে কার্যত স্তব্ধ করে দিয়েছিল ইন্ডিগো (IndiGo)। লাগাতার এক সপ্তাহ ধরে বিমান বিভ্রাট ইন্ডিগোর। প্রতিদিন বাতিল হচ্ছে শয়ে শয়ে বিমান। আজ, সোমবারও ৩৫০-রও বেশি বিমান বাতিল হয়েছে। চরম সমস্যার ভুক্তভোগী বিমানযাত্রীরা। এদিকে, ভারতে উড়ান বাজার বা এভিয়েশন মার্কেটের ৬০ শতাংশই রয়েছে ইন্ডিগোর হাতে। অর্থাৎ প্রতি ১০ জন বিমান যাত্রীর মধ্যে ৬ জনই ইন্ডিগোর বিমানে ভ্রমণ করেন। দৈনিক ২ হাজারেরও বেশি বিমান চলে ইন্ডিগোর। এই ইন্ডিগোর উত্থান কীভাবে হয়েছিল জানেন? দুই বন্ধুর হাত ধরে।
রাহুল ভাটিয়া ও রাকেশ গাঙ্গওয়াল, দুই বন্ধুই ভারতের আকাশ দখল করার বড় স্বপ্ন দেখেছিল। ভারতের উন্নতি ও সমৃদ্ধিকে তুলে ধরার ধারণা থেকেই এয়ারলাইন্সের নাম দিয়েছিলেন ইন্ডিগো, যা এসেছিল ‘ইন্ডিয়া অন দ্য গো‘ (India On The Go) শব্দবন্ধ থেকে।
২০০৫ সালে যখন ইন্ডিগোর যাত্রা শুরু হয়, তখন তাদের কাছে মাত্র একটি বিমান ছিল। তাও ভাড়া নেওয়া। সেই সময় ভারতের আকাশে দখল ছিল জেট এয়ারওয়েজের। সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছিল এয়ার ইন্ডিয়া। আবার সেই সময়ই বিজয় মালিয়া এনেছিলেন কিংফিশার এয়ারলাইন্স, যা বিমান যাত্রার অভিজ্ঞতাকে বদলে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়েছিল। এত প্রতিযোগী থাকায় ইন্ডিগোর পথচলাটা খুব সহজ ছিল না, তবুও তারা দমেনি। মাত্র কয়েক বছরেই কিং অব এয়ারলাইন্স হয়ে ওঠে ইন্ডিগো।
সেই সময় বিশ্ববাজারে দুটিই বিমান প্রস্তুতকারক ছিল, বোয়িং ও এয়ারবাস। ভারতীয় বাকি এয়ারলাইন্সগুলি সবাই বোয়িংয়ের বিমানই কিনত। সেখানেই ইন্ডিগো ঘোষণা করে যে তারা এয়ারবাসের কাছ থেকে ১০০টি বিমান কিনবে তারা। ভারতের বাজারে ঢোকার সুযোগ হাতছাড়া করেনি এয়ারবাস। ৪০-৫০ শতাংশ ডিসকাউন্টে তারা ইন্ডিগোকে বিমান বিক্রি করে।
রাহুল ও রাকেশ এয়ারবাসের কাছ থেকে অর্ধেক দামে ১০০টি এ৩২০ বিমান (A320 aircraft) কেনে এবং পরে তা বেশি দামে বিক্রি করে। এইভাবে ২০০ কোটি টাকা আয় করে দুই বন্ধু। সেই টাকা ব্যবহার করে ইন্ডিগো বিমান লিজে নেয় এবং দেশের বড় বড় শহরে উড়ান পরিষেবা শুরু করে।
সাফল্যের চাবিকাঠি-
ইন্ডিগোর সাফল্যের নেপথ্য কারণ ছিল মধ্যবিত্ত মানুষ, যাদের বিমানে চড়ার স্বপ্ন পূরণ করেছিল ইন্ডিগো। প্রথম থেকেই ইন্ডিগোর লক্ষ্য ছিল সস্তায় বিমান পরিষেবা দেওয়া। এই উদ্যোগই দেশের মানুষের কাছে পরিচিত করে তোলে ইন্ডিগোকে।
২০১১ সালে ইন্ডিগো ১৮০টি এ৩২০ বিমান কেনে। ২০১২ সালে ইন্ডিগো ৫০০ মিলিয়ন অর্থাৎ ৫০ কোটি যাত্রীকে পরিষেবা দেওয়ার রেকর্ড গড়ে। দেশের সবথেকে বড় এয়ারলাইন্স হয়ে ওঠে ইন্ডিগো। এরপরে ২০১৫ সালে ইন্ডিগো আরও ১০০টি বিমানের অর্ডার দেয়। এরপরে ২০১৯ সালে ইন্ডিগো আরও ২৫০টি বিমান অর্ডার করা হয়।
২০২০ সালে করোনা সংক্রমণের সময় যখন অসামরিক উড়ান পরিবহন বন্ধ ছিল, সেই সময়ও ইন্ডিগো থেমে থামেনি। তারা কার্গো সার্ভিস শুরু করে। ব্যবসা আরও বাড়তে থাকে। ২০২৩ সালে ইন্ডিগো আরও ৫০০টি নতুন বিমান অর্ডার করে, যা ভারতের উড়ান ব্যবসায় বৃহত্তম ছিল। ওই বছরই ১০০ কোটি যাত্রীকে পরিষেবা দেওয়ার রেকর্ড গড়ে ইন্ডিগো। বর্তমানে ইন্ডিগো ভারতের বৃহত্তম এবং এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম এয়ারলাইন্স। ২০২৫ সালের হিসাব অনুযায়ী, ভারতের উড়ান বাজারের ৬৪.২ শতাংশ শেয়ারই ইন্ডিগোর হাতে রয়েছে।
