Madhya Pradesh: মধ্য প্রদেশে কীভাবে সব হিসেব উল্টে দিল বিজেপি? কত বড় ফ্যাক্টর হলেন সিন্ধিয়া?

মধ্য প্রদেশে এবার সকলে বলেছিল প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় আছেন শিবরাজ সিং চৌহান। কাজেই সময়ের নিয়মে তাঁর বিরুদ্ধে জনমত তৈরি হয়েছে। সব হিসেব উল্টে বিপুল ভোটে জিতে ক্ষমতা ধরে রাখছে বিজেপি। কীভাবে ঘটল এই ম্যাজিক? না, এর পিছনে কোনও অলৌকিক ঘটনা নেই। রয়েছে বেশ কিছু রাজনৈতিক কারণ।

Madhya Pradesh: মধ্য প্রদেশে কীভাবে সব হিসেব উল্টে দিল বিজেপি? কত বড় ফ্যাক্টর হলেন সিন্ধিয়া?
জয়ের আনন্দে মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাImage Credit source: PTI
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 03, 2023 | 9:11 PM

ভোপাল: মধ্য প্রদেশে এবার সকলে বলেছিল প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় আছেন শিবরাজ সিং চৌহান। কাজেই সময়ের নিয়মে তাঁর বিরুদ্ধে জনমত তৈরি হয়েছে। এবার বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করবে কংগ্রেস। এমনকি, বেশ কিছু বুথ ফেরত সমীক্ষাতেও, দুই দলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, সব হিসেব গুলিয়ে দিয়েছে গেরুয়া শিবির। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়া দূরের কথা, কংগ্রেসের থেকে প্রায় ১০০টি বেশি আসন পেয়ে ক্ষমতা ধরে রাখছে বিজেপি। নির্বাচন কমিশনের হিসেব বলছে, বিজেপি এখনও পর্যন্ত ১৩২ আসনে জিতে গিয়েছে এবং ৩২টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। অন্যদিকে, কংগ্রেস জিতেছে ৩৮ আসনে, এগিয়ে ২৭ আসনে। কীভাবে ঘটল এই ম্যাজিক? না, এর পিছনে কোনও অলৌকিক ঘটনা নেই। রয়েছে বেশ কিছু রাজনৈতিক কারণ।

ভোঁতা প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হাওয়া

২০১৮ সালের পর দুই বছর বাদ দিলে, গত ২০ বছর ধরে রাজ্যে শাসনে রয়েছে বিজেপি। ২০০৩ সাল থেকে মধ্য প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদে আছেন শিবরাজ সিং চৌহান। এই প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়াকে ভোঁতা করতে বেশ কিছু ব্যবস্খা নিয়েছিল বিজেপি। প্রথমত, শিবরাজ সিং চৌহানকে পিছনে রেখে প্রচারের প্রধান মুখ করা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী মোদীকেই। প্রচারের থিম ছিল ‘এমপি-কে মন মে মোদী, মোদী-কে মন মে এমপি’৷ একই সঙ্গে, এই প্রথম রাজ্যে কোনও মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা না করেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজেপি।

মোদী ম্যাজিক

মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, সকলেই মধ্য প্রদেশের নির্বাচনের ফলাফলের কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং তাঁর প্রচারকেই দিয়েছেন। মধ্য প্রদেশে মোট ১৪টি জনসভা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রচারের শেষ দিনেও, মোদী রাজ্যে তিনটি নির্বাচনী সভা করেছিলেন এবং একটি রোড শোও করেন। সভায় সভায় তিনি পূর্ববর্তী কংগ্রেস সরকারের ব্যর্থতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন ভোটারদের। ডাবল ইঞ্জিন সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন। মোদীর আবেদন মধ্য প্রদেশের মানুষের হৃদয় ছুঁয়েছিল, বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ চৌহান।

অমিত শাহের মাইক্রোম্যানেজমেন্ট

নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-ও। সেপ্টেম্বর মাস থেকেই অমিত শাহ রাজ্যে বিজেপির নির্বাচন পরিচালনা এবং কৌশল গঠনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তারপর থেকে বেশ কয়েকবার মধ্যপ্রদেশ সফর করেছেন অমিত শাহ। ভোটের টিকিট নিয়ে মতবিরোধ সামলাতে রাজ্যে টানা তিন দিন ধরে পড়েছিলেন তিনি। বিদ্রোহীদের পিছু হটতে বাধ্য করেন এবং বিজেপি ক্যাডার ও অন্যান্য নেতাদের বুথে বুথে কাজে লাগান।

লাডলি বেহনা স্কিম

রাজ্যে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, বিজেপির এই জয়ের পিছনে সবথেকে বড় অবদান মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের। রাজ্যের প্রিয় মামার ‘লাডলি বেহনা যোজনা’ মহিলা ভোটারদের ভোট বিজেপির পক্ষে জড়ো হওয়ার পিছনে বড় ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। রাজ্যে ক্ষমতায় এলে দরিদ্র মহিলাদের মাসে মাসে ১৫০০ টাকা করে ভাতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কংগ্রেস। তবে, তার আগেই শিবরাজ সিং সরকার চালু করে লাডলি বেহনা স্কিম। এই প্রকল্পের অধীনে, মহিলারা প্রতি মাসে ১,২৫০ টাকা করে পান। রাজ্যের ২.৭২ কোটি মহিলা ভোটারদের মধ্যে, ১.৩১ কোটিই এই প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন।

অন্যান্য কল্যাণ প্রকল্প

লাডলি বেহনা যোদনার পাশপাশি, মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান বিজেপির এই দারুণ জয়ের কৃতিত্ব কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের চালু করা বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলিকে দিয়েছেন। তিনি বলেন, গরীব কল্যাণ যোজনা, প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, এবং মধ্য প্রদেশ সরকারের লাডলি বেহনা যোজনা, লাডলি লক্ষ্মী যোজনার মতো প্রকল্পগুলি ভোটারদের মনে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে।

ডাবল ইঞ্জিন সরকার

মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ ডৌহান থেকে শুরু করে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া – সকলেই রাজ্যে দলের সাফল্যের জন্য ডাবল-ইঞ্জিন বিজেপি সরকারকে কৃতিত্ব দিয়েছেন। শিবরাজ চৌহান বলেছেন, তাঁর সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের স্কিমগুলিকে সঠিকভাবে বাস্তবায়িত করেছে। রাজ্যেও যে স্কিমগুলি তৈরি হয়েছে, তাও মানুষের হৃদয় স্পর্শ করেছে।

কমল নাথের আত্মতুষ্টি

রাজ্যে বিজেপি সরকার বিরোধী হাওয়া ছিল। কিন্তু, সেই হাওয়াকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে কংগ্রেস। বস্তুত, বিজেপি ঘর ক্ষমতা ধরে রাখতে যেভাবে ঝাঁপিয়েছিল, কংগ্রেস জেতার জন্য সেইভাবে উদ্যোগ নেয়নি। প্রতিদিন শিবরাজ চৌহান যেখানে গড়ে ৮-৯টি সভা করেছেন, সেখানে কমল নাথ সভা করেছেন ১টি বা ২টি। ভোট কুশলী সুনীল কানুগোলু, যাঁর কৌশলে কর্নাটকে বাজিমাত করেছে কংগ্রেস এবং তেলঙ্গানা জয়ের কৃতিত্বও যাকে দেওয়া হচ্ছে, সেই সুনীল কানুগোলুর সহায়তাও নিতে চাননি কমল নাথ। নিজের পুরোনোপন্থী ভোট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের উপরই ভরসা রেখেছিলেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সম্ভবত প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়ার ভরসায়, আত্তুষ্টি ভর করেছিল কংগ্রেসের মধ্যে।

সিন্ধিয়া ফ্যাক্টর

২০১৮ সালের নির্বাচনে কংগ্রেসের জয়ের পিছনে বড় ফ্যাক্চর ছিল চম্বল-গোয়ালিয়র অঞ্চলের ভোট। গোয়ালিয়র রাজ্যেরই অংশ ছিল এই অঞ্চল। তাই, রাজপরিবারের সদস্য জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার শক্ত ঘাঁটি এই এলাকা। ২০১৮ সালের নির্বাচনে চম্বল-গোয়ালিয়র অঞ্চলের ৩৪ বিদানসভা আসনের মধ্যে ২৬টিতে জিতেছিল কংগ্রেস। কিন্তু, ২০২০ সালে জ্যোতিরাদিত্য শিবির বদল করায়, এবার ওই এলাকায় জোর ধাক্কা খেয়েছে কংগ্রেস। এবার তারা এই এলাকা থেকে জিততে পেরেছে ২০টি আসনে।