‘আমি হলে মেনেই নিতাম না’, ড্রাইভার-বিতর্কে বললেন ‘গাড়িচালক’ ইন্দ্রাশিস
Indrashish Roy: কেন হঠাৎ করে ইন্দ্রাশিসের সঙ্গে যোগাযোগ? উত্তরটা সহজ: 'ধুলোকণা' (সম্প্রচারিত) মেগা-সিরিয়ালে ড্রাইভারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইন্দ্রাশিস। ঘটনাচক্রে যে 'ছদ্মবেশী' ছবির উল্লেখ রয়েছে এই প্রতিবেদনের শুরুতে, তার বিখ্যাত একটি গানের প্রথম লাইন ছিল: ‘আরে ছো ছো, ক্যায়া শরম কি বাত... ভদ্দর ঘরকা লড়কি ভাগে, ডেরাইভার কা সাথ।’ অর্থাৎ ‘শরম’ বা লজ্জার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল ড্রাইভার সম্প্রদায়কে। এহেন ড্রাইভারের ভূমিকায় অভিনয়-করা ইন্দ্রাশিস TV9 বাংলাকে বলেছেন...
স্নেহা সেনগুপ্ত
১৯৭১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা ছবি ‘ছদ্মবেশী’ ছবিতে এক ড্রাইভারের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন উত্তমকুমার। এরকম অনেক অভিনেতাই আছেন, যাঁরা অভিনয় করেছেন ‘সারথি’র চরিত্রে। ‘মহাভারত’-এ শ্রীকৃষ্ণকেও তো ভুললে চলবে না। তিনিও তো সারথি ছিলেন অর্জুনের। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে তাঁকে সেই ভূমিকাতেই দেখা যায়। সেই ড্রাইভার সম্প্রদায়কে এক অর্থে অপমান করা হয়েছে অভিনেতা-বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিক এবং অভিনেত্রী শ্রীময়ী চট্টরাজের বিয়ের রিসেপশনে—অভিযোগ এমনটাই। ৬ মার্চ, বুধবার মধ্য কলকাতার ক্যামাক স্ট্রেটর ‘গ্যালেরিয়া ১৯১০’-এ বসেছিল বিয়ের রিসেপশন পার্টি। অনুষ্ঠানের ভেন্যুতে ঢোকার মুখে প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল: ‘Please! Press And Personal Securities And Drivers Are Not Allowed. Inconvenience Is Regretted’ (যার বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, “প্লিজ়! সংবাদমাধ্যম, ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী এবং গাড়ির চালকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ…”)। বিষয়টি জানাজানি হতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলোধনা করা হয় অভিনেতা-বিধায়ককে। দুঃখপ্রকাশ করে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের নিরাপত্তারক্ষী এবং গাড়ির চালক TV9 বাংলাকে বলেছেন, “আমরাও তো মানুষ। খুবই অপমানিত হয়েছি।” যদিও কাঞ্চন মল্লিক বলেছেন, “আমরা বলেছিলাম, আপনারা (এক্ষেত্রে ভেন্যু কর্তৃপক্ষ) দয়া করে বলবেন, যাঁরা-যাঁরা আসছেন আমন্ত্রিতদের সঙ্গে, তাঁরা ফার্স্ট ফ্লোরে অপেক্ষা করবেন, বাকিরা উঠে আসবেন। গেস্ট লিস্টেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল ভেন্যুতে। এবং তাঁরা (এক্ষেত্রে ভেন্যু কর্তৃপক্ষ) সেটা বুঝে কী লিখেছেন, আমি জানিই না।” এ দিকে, ‘গ্যালেরিয়া ১৯১০’-র ব্যাঙ্কোয়েট ম্যানেজার অভিজিৎ আচার্য বলেছেন, “আমাদের যা বলা হয়েছে, তাই-ই করেছি।” বহু অভিনেতা-অভিনেত্রীও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ব্রিটিশ শাসনকালে ইংরেজদের ক্লাবের বাইরে সাইনবোর্ডে যেমন লেখা থাকত ‘Indian’s And Dogs Are Not Allowed’, ওই প্ল্যাকার্ডের নিষেধবার্তায় তেমনই অপমানের আঁচ পেয়ে বহু টলিউড সেলিব্রিটিও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তেমন ভাবেই অভিনেতা ইন্দ্রাশিস রায় কিছু কথা বলেছেন TV9 বাংলাকে।
কেন হঠাৎ করে ইন্দ্রাশিসের সঙ্গে যোগাযোগ? উত্তরটা সহজ: ‘ধুলোকণা’ (সম্প্রচারিত) মেগা-সিরিয়ালে ড্রাইভারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইন্দ্রাশিস। ঘটনাচক্রে যে ‘ছদ্মবেশী’ ছবির উল্লেখ রয়েছে এই প্রতিবেদনের শুরুতে, তার বিখ্যাত একটি গানের প্রথম লাইন ছিল: ‘আরে ছো ছো, ক্যায়া শরম কি বাত… ভদ্দর ঘরকা লড়কি ভাগে, ডেরাইভার কা সাথ।’ অর্থাৎ ‘শরম’ বা লজ্জার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল ড্রাইভার সম্প্রদায়কে। এহেন ড্রাইভারের ভূমিকায় অভিনয়-করা ইন্দ্রাশিস TV9 বাংলাকে বলেছেন, “সামাজিক মাধ্যমে আমি বিষয়টা দেখেছি। আমি নিজেও একজন ড্রাইভারের চরিত্রে অভিনয় করেছি ‘ধুলোকণা’ ধারাবাহিকে। তাই আমি জানি আমাদের অভিনেতাদের জীবনে তাঁদের অবদান কতখানি। ৫০% কৃতিত্ব আমি এই সারথিদেরই দেব। তাঁরা না থাকলে আমরা প্রায় পঙ্গু। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বলতে চাই, কাঞ্চনদা একজন ভীষণ হিউমারাস ব্যক্তি।” এরপরই ইন্দ্রাশিসের সংযোজন, “কী ইঙ্গিত করে এমন কথা তিনি লিখেছেন, সেটা আমি জানি না। তাই তাঁকে আমি সরাসরি পিঞ্চ করতে পারছি না। কিন্তু সত্যিই যদি ড্রাইভার-নিরাপত্তারক্ষীদের এই অসম্মান করা হয়, তা হলে আমি সেটার প্রতিবাদ করছি। আমি হলে মেনেই নিতাম না।”
কাঞ্চনের সঙ্গে দীর্ঘদিনের পরিচয় ইন্দ্রাশিসের। প্রচুর ছবিতে সঙ্গে অভিনয় করেছেন তাঁরা। আউটডোরে একই হোটেলের একই ঘরে থেকেওছেন কাঞ্চন-ইন্দ্রাশিস। মানুষ কাঞ্চন সম্পর্কে ইন্দ্রাশিসের সাফ মতামত, “কাঞ্চনদা এক্কেবারেই এমন মানুষ নন, যিনি ড্রাইভারদের, নিরাপত্তারক্ষীদের অপমান করবেন। একেবারেই অন্য ধরনের মানুষ। অন্য ধরনের ফিগার তিনি।”