Uncut Indrani Haldar: অভিনয়, আনন্দ, আক্ষেপ, স্বামী, প্রেমিক, সমীকরণ… জন্মদিনে অকপট ইন্দ্রানী হালদার!
আজ (০৬.০১.২০২২) ইন্দ্রানী হালদারের জন্মদিন। কেবল অভিনেত্রী হিসেবে নন, রক্তমাংসের এক নারী হিসেবে ধরা দিলেন TV9 বাংলার এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে। প্রেম থেকে অভিনয়, আনন্দ, আক্ষেপ সবটা নিয়ে 'অকপট' ও 'আনকাট' ইন্দ্রানী হালদার।

তিনি অত্যন্ত ব্যক্তিত্বময়ী। কিন্তু একবার মিশে গেলে তাঁর মতো সরল, প্রাণবন্ত, শিশুসুলভ আর কেউ হতেই পারেন না। তিনি ইন্দ্রানী হালদার। সদ্য শেষ হয়েছে ‘শ্রীময়ী’ ধারাবাহিকে তাঁর অভিনয়। এসভিএফ-এর ছবি ‘কুলের আচার’-এ কাজ করছেন। আজ (০৬.০১.২০২২) ইন্দ্রানী হালদারের জন্মদিন। কেবল অভিনেত্রী হিসেবে নন, রক্তমাংসের এক নারী হিসেবে ধরা দিলেন TV9 বাংলার এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে। প্রেম থেকে অভিনয়, আনন্দ, আক্ষেপ সবটা নিয়ে ‘অকপট’ ও ‘আনকাট’ ইন্দ্রানী হালদার।
জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা…
অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাতে চাই।
কীভাবে কাটাবেন জন্মদিনটা?
প্রত্যেকবারই জন্মদিনে কোনও না কোনও সামাজিক কাজের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলি। বৃদ্ধাশ্রমে যাই। অনাথ আশ্রমের কিছু বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটাই। শেষ দু’ বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে কোনওটাই সে অর্থে করতে পারিনি। এবার করব। তবে বৃদ্ধাশ্রমে যাব না। অনেক নিয়ম আছে। সেটা টপকানো যাবে না কিছুতেই। উচিতও নয়। পরে যাব কোনও একদিন। ওখানে একজন ৮০ বছরের বৃদ্ধা আমার জন্য পায়েস রান্না করে অপেক্ষা করেন জানেন। তবে ৩০জন বাচ্চা আমার বাড়িতে আসছে আজ। একটি সংগঠনের সঙ্গে আমি কাজ করি। ওঁরাই সব আয়োজন করেছেন। বেহালার সরশুনা থেকে বাচ্চারা আমার বাড়িতে আসবে। আমি একটি হ্যাম্পার তৈরি করেছি ওদের জন্য। ওদের সঙ্গেই কেক কাটব। খাওয়াদাওয়ার পর ওরা বাড়ি চলে যাবে।
বয়স জানতে চাই না। কিন্তু কথিত আছে, অভিনেত্রীদের বয়স বাড়লেই নাকি বিপদ। বিষয়টা ইন্দ্রানী হালদার কীভাবে দেখেন?
আমি কিন্তু বয়স বেড়ে যাওয়ায় কোনওরকম দুঃখ পাই না। স্পোটিংভাবে দেখি। প্রথমে মনে হয় মৃত্যুর দিকে এক ধাপ এগিয়ে গেলাম। দ্বিতীয়ত মনে হয়, আরও একবছর অভিজ্ঞতা বাড়ল। শেষ বছর কী কী মধ্যে দিয়ে গিয়েছি, আমার জীবনে আদতেও কোনও পরিবর্তন এসেছে কি না এবং আগামী একবছর সেই ভুল বা ঠিকগুলো কীভাবে বা কতটা নিয়ে চলব, সেটার একটা রেজ়লিউশন হয় জন্মদিনে।
এমনিতে নতুন বছরে মানুষ রেজ়লিউশন নেন.. আপনার ক্ষেত্রে দিনটা আগমন দিবস..
১ জানুয়ারি নতুন বছর শুরু। আমার জন্মদিন ৬ জানুয়ারি। কাছাকাছি তারিখ। সকলে ১ তারিখেই রেজ়লিউশন নেন। কিন্তু আমি ১ তারিখ থেকে ভাবতে থাকি ৬ তারিখে কী রেজ়লিউশন নেব।
তা কী রেজ়লিউশন নিলেন?
(স্বভাবিক সারল্যের সঙ্গে) যতবারই প্রেমে দাগা খাই না কেন, বার বার প্রেমে পড়ব। এটা একটা রেজ়লিউশন। আশা করছি এবার একটা ঠিকঠাক বয়ফ্রেন্ড পাব। আমি কিন্তু একদম ইয়ার্কি করছি না। আমি সিরিয়াস…
আর আপনার স্বামী…
আমার স্বামীরও তো একটা বান্ধবী আছে। তাতে কী হয়েছে। আমাদের মধ্যে খুব ভাল বোঝাপড়া। আমার স্বামী ভীষণই স্পোর্টিং। আমার প্রেমিকরা যখন ডিচ (পড়ুন মনে দুঃখ দিয়ে ছেড়ে চলে যাওয়া) দিয়ে চলে যায়, আমার বরই তো চোখের জল মুছিয়ে দেয়। বলে, ‘তুমি আবার ভুল করলে’।
বেশ মিষ্টি ব্যাপার কিন্তু..
প্রেমে তো পড়েই যায় মানুষ। তাই না!
প্রেমে তো ওঠাও যায়…
উঠছি না তো। খালি পড়েই যাচ্ছি। সেটাই আমার রেজ়লিউশন – আমি যেন প্রেমে উঠতে পারি। ভাস্কর (ইন্দ্রানী হালদারের স্বামী) প্রতিবারই বলে, ‘এটা আছে, না গেছে’। আমি বলি, ‘প্রায় চলে যাওয়ার পথে’…
কীরকম পুরুষ পছন্দ করেন ইন্দ্রানী হালদার?
আমার স্বামী কিন্তু খুব হ্যান্ডসাম। ওর সমান সমান হতে হবে। আমার প্রেমিককে লম্বা, ফর্সা হতে হবে… সবচেয়ে বড় কথা বুদ্ধিমান হতে হবে। আইকিউ লেভেল যেন হাই হয়।
আপনি কি তবে সেপিওসেক্সচুয়াল (বুদ্ধি ও মেধা দেখে প্রেমে পড়েন)?
আমি কিন্তু খুব সুন্দর পুরুষে বিশ্বাস করি না। কিন্তু তাঁর ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধি ও আইকিউ ভাল হতে হবে। না হলে তো আমার সঙ্গে কথাই বলতে পারবে না।
যা বুঝলাম, আপনার মনে প্রবেশের রাস্তা আপনার মাথা.. মস্তিষ্কের গ্রে সেলকে উত্তেজিত করতে পারলে ঝাপাং করে প্রেমে পড়েন…
একেবারে। প্রেমে পড়ব যাঁর, তাঁর কালচার থাকতে হবে। প্রচুর পয়সা আছে, চিবিয়ে চিবিয়ে পান মশলা খান… সেই ব্যক্তিকে চুমু খাওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারি না।
এগুলো কি আমি সাক্ষাৎকারে লিখব?
সব লিখে দাও.. আমি এমন কোনও কথা বলব না, যেটা তুমি লিখতে পারবে না। আমি এক্কেবারেই হিপোক্রিট নই। আমার বাবা বলতেন, এত প্রেম করবি যাতে হাতে-পায়ের আঙুল শেষ হয়ে যায়! বাবা আমার চেয়েও ‘যন্তর’ ছিলেন… খুব মজা করতেন। এসবের বাইরে আমি বলতে চাই, ইন্দ্রানী হালদার কিন্তু ঘোরতর সংসারী এবং আমার স্বামী আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আর আমার বয়ফ্রেন্ডগুলো সবাই ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’। আমি আছি কিন্তু নেই আরকী!
বাবা রে…
আরও একটা রেজ়লিউশন আছে। আমাকে আরও ৪-৫ কিলো ওজন কমাতে হবে। পুরীতে গিয়েছিলাম। রোজ ভাত খেয়ে খেয়ে পেট বেড়ে গিয়েছে। কমাতেই হবে। বিপদ হচ্ছে, আমি খুব ফুডি।
বাঙালি যখন, সেটা তো হবেই!
শীতকাল এলেই মনে হয়, এটা খাই, সেটা খাই… আস্তে আস্তে বলছি, না হলে মা শুনে নিতে পারে… দিন দুই আগে মায়ের থেকে খাবার নিয়ে যাইনি শুটে। বড় সাইজ়ের একটা পিৎজ়া খেয়েছি।
আপনার মধ্যে যে একজন ‘শিশু’ লুকিয়ে আছে আপনি জানেন?
তাই নাকি, তোমার মনে হচ্ছে? সবাই তো বলে, আমি নাকি খুব রাগী। আমি নাকি খুব কড়া। কিন্তু তোমাদের মতো অল্প বয়সি মেয়েদের সঙ্গে সহজেই আমার বন্ধুত্ব হয়ে যায়। কারণ আমি মনে করি, আমি তোমাদের থেকেও ছোট। আমি ঠিক করেছি, তোমাদের সকলকে ‘দিদি’ বলব…
শুনেছি অনেক প্রেম প্রস্তাব পান… কী করে হ্যান্ডেল করেন?
আমাকে সরাসরি এসে কেউ বলে না। যাঁকে পাত্তা দেওয়ার হয় দিই। যাঁকে পাত্তা দেওয়ার হয় না, ভাইফোঁটায় নেমন্তন্ন করে দিই। এই প্র্যাকটিসটা ছোট থেকেই। তবে ছোটবেলায় যাঁকে ভাইফোঁট দিয়েছি, তাঁর সঙ্গেও হাত ধরাধরি করে ঘুরেছি। এসব ক্ষেত্রে বাঁ হাতে ভাইফোঁটা দিয়ে ডান হাতে মুছে দিতাম (হাসি)।
এবার একটু অভিনয়ের প্রসঙ্গে আসি…
হোক হোক…
শেষ ১০ বছরের যদি সিরিয়ালের ইতিহাস ঘাঁটি, আপনার করা দুটি চরিত্র উল্লেখযোগ্য। একটি ‘গোয়েন্দা গিন্নি’ পরমা মিত্র। অন্যটি ‘শ্রীময়ী’ ধারাবাহিকের শ্রীময়ী.. গোয়েন্দা গিন্নির সঙ্গে যদি শ্রীময়ের দেখা হত, সেই কথপোকথন কীরকম হত?
গোয়েন্দা গিন্নি পরমা মিত্র শ্রীময়ীকে এটাই বলত – ‘শ্রীময়ী আমিও গৃহবধূ, তুমিও গৃহবধূ। পরমা যখন গোয়েন্দা হবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তখন কিন্তু শাশুড়ি, ননদ… সকলে বাধা দেওয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল’। ফলে শ্রীময়ীকে সে এটাই বলত, এতদিন ধরে তার আত্মত্যাগ করার কোনও প্রয়োজন ছিল না – ‘তোমার ছেলেমেয়ে তো বড়বড়। পরমার মেয়ে ছোট। কাজেই মেয়ের ছোট অবস্থাতেই পরমা যদি কাজ করতে পারে, শ্রীময়ী কেন পারবে না’। একটাই ভাল বিষয় ছিল, গোয়েন্দা গিন্নির স্বামী ডাক্তারবাবু তার পাশে ছিল। শ্রীময়ীর স্বামী তাঁর পাশে ছিল না।
কিন্তু শ্রীময়ী তো রোহিত সেনকে পেয়েছিল…
টোটা না রোহিত… ঠিক করে বলো কে…?
যদি বলি দু’জনকেই…
টোটার বউ কিন্তু খুব সুন্দরী। আমাদের সেটে পরম সুন্দরী নাচটা দেখেছ? আর কিছু বললাম না। ওই নাচেই টোটার প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পেয়েছে।
খুব প্র্যাঙ্ক করতে ভালবাসেন আপনি..
হ্যাঁ.. এইটুকু মজা না করলে হবে নাকি। কিন্তু আমি যতটা মজা করি, ততটাই কিন্তু কঠিন। আমি সেটে যাওয়া মনে সকলে তটস্থ। ফোনটোন ছেড়ে কাজে মন দিতে শুরু করে দেয় সকলে। ফলে টোটা আমার দারুণ ভাল বন্ধু। আমাদের মধ্যে বোঝাপড়াও চমৎকার। রোহিত সব মহিলার ক্রাশ। কিন্তু ইন্দ্রানী হালদারের রোহিত সেনকে চাই না। আমি ভীষণ আত্মনির্ভর মানুষ। তবে চাইলে ৪-৫জন রোহিত সেন আমার জীবনেও থাকতে পারে।
অনেকগুলো দিন ধরে শ্রীময়ী কিংবা পরমার সঙ্গে যাপন করেছেন। কাকে মনে ধরেছে বেশি..
পরমাকে আমি খুব ভালবাসি। ওর থেকে যেমন শিখেছি, শ্রীময়ীর থেকেও কিন্তু অনেককিছু শিখেছি। গোয়েন্দা গিন্নি করতে করতে নিজে গোয়েন্দা হয়ে উঠেছি। নিজ জীবনে কিছু কেসের সমাধানও করেছি। শ্রীময়ী আমাকে মানুষ হিসেবে অনেকবেশি সহিষ্ণু করে তুলেছে।
আমি বলছি না, দর্শক মনে করেন শ্রীময়ী বড্ড বেশি ক্ষমা পরায়ণ। এতটা নাকি না হলেও চলে…
হ্যাঁ বাবা। আমি তো পছন্দই করতাম না শ্রীময়ীকে। শটগুলি দিয়ে বলতাম, উফফফ.. কী অসহ্য এই মহিলা।
এবার একটু ছবি নিয়ে কথা হোক..
হোক হোক…
শ্রীময়ী-র পর এবার ইন্দ্রানী হালদার ছবিতে.. ‘কুলের আচার’ সেই ছবিটার নাম। জানতে পারলাম সেই একই প্রযোজনা সংস্থার আরও একটি ছবিতে আপনি আছেন। মার্চেই শুটিং।
আমার খুব কপাল ভাল, ওঁরা নিল।
এটা বিনয়..
এটা কিন্তু বিনয় নয়। আমি নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে করি। ৩৫ বছরের কেরিয়ারে ভেঙ্কটেশের মতো হাউজ় আমাকে নিয়ে ভাবছে। ওঁদের সঙ্গেই যদিও ‘গোয়েন্দা গিন্নি’ করেছি। কিন্তু এই প্রথম ওঁদের জন্য ছবি করব।
‘দহন’-এর জন্য জাতীয় পুরস্কার। ‘যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল’র জন্য ফ্রান্সের ম্যাড্রিড ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার, তাও এক ফরাসি অভিনেত্রীকে হারিয়ে। এই ধরনের ছবির তালিকা এত কম কেন ইন্দ্রানী হালদারের জীবনে?
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় একটা কথা বলতেন, অভিনয় করার খিদে আমার জীবনে শেষদিন পর্যন্ত থাকবে। সে যেই চরিত্রই হোক না কেন। আমারও থাকবে। ৩ বছরের বেশি সময় ধরে ‘শ্রীময়ী’ করার পরও কিন্তু আমার টেলিভিশন করার খিদে যায়নি।
‘শ্রীময়ী’র আদলে তৈরি ‘অনুপমা’.. আপনার কেমন লেগেছে?
নো কমেন্টস।
হিন্দি চরিত্রটা তো আপনিও করতে পারতেন…
আমার মা দেখেন ‘অনুপমা’। অল ইন্ডিয়ার অডিয়েন্স পছন্দ করে অনুপমাকে। কিন্তু দুঃখ এটাই, ওঁরা কেউ বাংলার শ্রীময়ীকে চেনেই না।
আক্ষেপ হয় না?
ভীষণ। প্রচণ্ড আক্ষেপ হয়। আমার মনে হয় কেন হিন্দিটা আমি করলাম না।
টিআরপি কতখানি ভাবায় আপনাকে?
একদম ভাবায় না। আমার কোনও আগ্রহই থাকে না।
গোয়েন্দা গিন্নি পার্ট টু কি আসছে?
পার্ট টু হলে আমিই করব। চ্যানেল এখনও বাঁচিয়ে রেখেছে ‘গোয়েন্দা গিন্নি’কে। প্রত্যেকদিন দুপুর ১২টায় হয়। ৮ বছর পরে ওঁদেরকেও এক নম্বর করেছিলাম ‘গোয়েন্দা গিন্নি’ দিয়ে। আমার কাছে একটা ফোন এসেছিল জানো.. এটা কিন্তু তোমার সাক্ষাৎকারে লিখো।
নিশ্চয়ই রাখব…
হাওড়ার শিবপুর থেকে ফোন আসে একদিন আমার কাছে। কালী মন্দিরে মায়ের সব গয়না চুরি হয়ে গেছে। ওঁরা চায় গোয়েন্দা পরমা মিত্র গিয়ে কেস সলভ করুক। আমি বলেছিলাম, গোয়েন্দা পরমা মিত্র এখন শুটিংয়ে যাচ্ছে। এরকম কেস কিন্তু আমি সলভও করেছি দু’-চারটে। আমার সেটের কেস। মনে হয় আগে থেকেই গোয়েন্দা ছিলাম। বরের সব প্রেম ধরে ফেলি ওই কারণেই। ও কিন্তু আমার প্রেমগুলো ধরতে পারে না!





