হেমন্তদাকে দেখতে যাব, বলেছিলেন উত্তমকাকু, কিন্তু ওঁর আর আসা হল কই: মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়

উত্তমকুমারের শেষ বাংলা ছবি 'ওগো বধূ সুন্দরী'। শুটিং চলাকালীনই হৃদরোগ...হাসপাতাল এবং মৃত্যু। ওই ছবিতেই উল্লেখযোগ্য ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল মৌসুমি চট্টোপাধ্যায়কে।

হেমন্তদাকে দেখতে যাব, বলেছিলেন উত্তমকাকু, কিন্তু ওঁর আর আসা হল কই: মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়
মহানায়কের প্রয়াণ দিবসে স্মৃতিচারণায় মৌসুমী।
Follow Us:
| Updated on: Jul 25, 2021 | 9:46 AM

তামাম দুনিয়াকে চোখের জলে ভাসিয়ে শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালে ৪১ বছর আগে প্রয়াত হয়েছিলেন মহানায়ক। দগদগে স্মৃতি বুকে নিয়ে বাঙালির দিন যাপন চলে আজও। তাঁর চাহনি, ঠোঁটের কোনে লেগে থাকা হাল্কা হাসি, হাতের নাড়াচাড়া- আজও বহন করে কোন এক অমোঘ ইতিহাস। উত্তমকুমারের শেষ বাংলা ছবি ‘ওগো বধূ সুন্দরী’। শুটিং চলাকালীনই হৃদরোগ…হাসপাতাল এবং মৃত্যু। ওই ছবিতেই উল্লেখযোগ্য ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল মৌসুমি চট্টোপাধ্যায়কে। ৪১ বছর পরেও অভিনেত্রীর স্মৃতিতে তাজা সেদিনের স্মৃতি… এক্সক্লুসিভলি সেই গল্পই শোনালেন টিভিনাইন বাংলার পাঠকদের…

উত্তমকুমারকে আমি উত্তম কাকু বলে ডাকতাম। আমার কাছে উত্তম কাকু মানেই সাদা-কালোর উত্তম কাকু। আমার কাছে উত্তম কাকু মানে উত্তম কুমার আর সুচিত্রা সেন। উত্তম কাকু বললেই আমার মনে পড়ে তাঁর ভবানীপুর বাড়ি, মনে পড়ে গৌরি কাকিমার কথা। মনে পড়ে আমার শ্বশুর মশাই হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কত ভাল সম্পর্ক ছিল। তাঁর। একে অপরকে ভীষণ ভালবাসতেন ওঁরা। এককালে প্রচুর যাতায়াত ছিল দুই বাড়িতে।

এখনও মনে আছে, আমাদের যখন ওগো বধূ  সুন্দরীর শুটিং চলছে তখন উত্তম কাকু আমায় একদিন ডেকে বলল, ‘আমি হেমন্তদা কে দেখতে যাব’… আমার মুখেই তিনি শুনেছিলেন, আমার শ্বশুরমশাইয়ের শরীরটা ভাল নেই। আমায় বললেন, “কালকে শুটিংয়ের পর আমি তোর সঙ্গে তোদের বাড়ি গিয়ে হেমন্তদা’কে দেখে আসব।” শুনে আমি তো ভীষণ খুশি…। শ্বশুরমশাইকেও বললাম। তিনি আনন্দে আত্মহারা। আমায় বারবার করে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন, “উত্তম সত্যিই বলেছে ও আসবে?” আমিও ঘাড় নাড়লাম। কিন্তু কোথায়? উত্তম কাকুর আর আমাদের বাড়ি আসা হল না…

উত্তমকুমার ও হেমন্ত মুখোপাধ্যায়

মেনকা সিনেমা হলের পাশেই ছিল আমার শ্বশুরবাড়ি। ওঁর শেষ যাত্রায় আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে যখন ওঁকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল বারান্দায় বাড়ির সবাই দাঁড়িয়েছিল। গলা ধরে গেল আমার শ্বশুরমশাইয়ের। কাঁদতে কাঁদতে সমানে বলছিলেন, “এই রকম ভাবে চলে গেল…”। তারপর হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “আমি মরে গেলে এত লোক কি আসবে…?” সেদিন রাস্তায় থিকথিকে লোক হয়েছিল…এমনই ছিল ওঁর ক্যারিশ্মা।

উত্তম কাকুর সঙ্গে আমার সব রকম আলোচনা হতো। আমায় ভীষণ ভালবাসতেন, বকতেনও। আমার মনে আছে ‘ওগো বধূ সুন্দরী’র শুটিংয়ে কিছু লোক আমার ও উত্তমকুমারের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করার চেষ্টা করেছিল। আমি যখন জানতে পারি, ভীষণ কষ্ট হয়েছিল আমার। কিন্তু ওঁরা পারেনি। কেন জানেন? কথায় আছে, ‘সত্যমেব জয়তে’…যারা সত্যকে বিশ্বাস করেন, তাঁদের সঙ্গে খারাপ কিচ্ছু হয় না। একটা ছোট্ট ঘটনা মনে পড়ছে, বালিকা বধুর জন্য অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার পর লাঞ্চের জন্য আমাকে নেমতন্ন করা হয়েছিল উত্তম কাকুর বাড়ি থেকে। আমাকে লাল শাড়ি পরানো হয়েছিল। ভবানীপুরের বাড়িতে খাবার-দাবারের কী সুন্দর আয়োজন হয়েছিল। বুড়ো কাকুও (তরুণ কুমার) আমাকে ভীষণ ভালবাসতেন। আমি খুব সৌভাগ্যবান যে এই সব মানুষদের পাশে আমি বসতে পেরেছি, কাজ করতে পেরেছি। উত্তম কাকু যেখানেই আছেন ভাল থাকুন। কিছু মানুষকে ভোলা যায় না কখনও, ভুলে যাওয়ার ইচ্ছেও হয় না…।