উত্তমের মৃত্যুর পর কেন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁর পার্সোনাল ডায়েরি?
প্রতিদিন ঘরে ফিরে আধঘণ্টার জন্য হলেও, ডায়েরি লিখতেন উত্তম। তবে সেই লেখায় সিনেমার কথা খুব একটা নাকি লিখতেন না তিনি। এক ম্য়াগাজিনের সাক্ষাৎকারেও সেই ডায়েরির কথা বলেছিলেন মহানায়ক নিজেই।

উত্তম কুমারের জীবন বরাবরই রহস্যময়। তাঁর কেরিয়ার স্ট্রাগল, সুপ্রিয়ার সঙ্গে দাম্পত্য। ভবানীপুরের বাড়ি থেকে স্ত্রী গৌরীদেবীকে ছেড়ে ময়রা স্ট্রিটে চলে আসার নানা গল্প গসিপ ম্য়াগাজিনে জায়গা পেলেও, উত্তম কিন্তু নিজের জীবনকে পর্দার আড়ালেই রাখতে চাইতেন বরাবর। কখনই মুখ ফুটে বলতেন না, তাঁর জীবনে কী ঘটছে। তবে জানা যায়, উত্তম নাকি সবই লিখে রাখতেন তাঁর লাল ডায়েরিতে।
ভাই তরুণ মজুমদারের লেখা থেকে জানা যায়, উত্তম নিয়মিত ডায়েরি লিখতেন। কবে, কোথায়, কোন সিনেমার শুটিং, কার সঙ্গে কবে কোথায় দেখা করবেন, তা ডায়েরিতে লিখে রাখতেন। তবে এর বাইরেও আরেকটি ডায়েরি ছিল তাঁর কাছে। যা কিনা ছিল একেবারেই ব্যক্তিগত। যেখানে উত্তম লিখে রাখতেন জীবনের নানা সময়ের কথা।
জানা যায়, প্রতিদিন ঘরে ফিরে আধঘণ্টার জন্য হলেও, ডায়েরি লিখতেন উত্তম। তবে সেই লেখায় সিনেমার কথা খুব একটা নাকি লিখতেন না তিনি। এক ম্য়াগাজিনের সাক্ষাৎকারেও সেই ডায়েরির কথা বলেছিলেন মহানায়ক নিজেই। তবে কখনই সেই ডায়েরির পাতা বই আকারে সবার সামনে আসুক তা নাকি চাইতেন না উত্তম কুমার। বরং তরুণ মজুমদারকে তিনি নাকি বলেছিলেন, তিনি যখন থাকবেন না, তখন যেন ডায়েরি নষ্ট করে দেওয়া হয়। কেননা, তিনি চাইতেন না, তাঁর গোপন কথা কেউ জানতে পারুক। তিনি চাইতেন না, নিজের হতাশা গুলো সামনে আসুক।
তরুণ মজুমদার দাদা উত্তমকে নিয়ে লিখতে গিয়ে জানিয়ে ছিলেন, আমি আন্দাজ করতে পারি দাদা সেই ডায়েরিতে কী লিখেছিল। ‘আমি ভাল নেই। শান্তি নেই আমার মনে। এখন আমি কী করব জানি না। আমার নিজেরও তো একটা পৃথিবী আছে। সব মানুষেরই থাকে। সেখানে অন্যের অনধিকার প্রবেশ আমাকে কেন মেনে নিতে হবে। আমার স্ত্রী, পুত্র, পরিজনদের সঙ্গে অন্যদের আমি কী করে এক করে দেখি। পারছি না, আমি পারছি না এমন মানসিক চাপ সহ্য করতে। মুক্তি চাই, মুক্তি।’ এ সব কথা নিজের বাড়িতে এসে কাউকে বলেছিলেন উত্তমকুমার। কথাগুলি কানে গিয়েছিল তরুণকুমারের। উত্তম তাঁর কেবল দাদা ছিলেন না, ছিলেন বন্ধুও। তাই তরুণকুমার বলেছিলেন উত্তমকে, ‘এখন এটা অসম্ভব। নিজের জালে তুই নিজেই জড়িয়ে পড়েছিস। মুক্তি নেই।’
উত্তম এসব বাইরের জগতের সামনে আনতে চাননি। আর তাই হয়তো মহানায়কের মৃত্যুর পর সেই লাল ডায়েরি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তবে কে পুড়িয়েছিল তা জানা যায়নি।
