Gulshan Colony: ২ লক্ষ মানুষের বসবাস, ভোটার মাত্র ২০৭৩, কত নাম বাদ গেল গুলশন কলোনিতে?
SIR in Bengal: SIR in Bengal: বিজেপির দাবি, গুলশন কলোনি মূলত অপরাধী এবং বাংলাদেশিদের লুকিয়ে রাখার অন্যতম জায়গা। যাদের অপরাধমূলক কাজকর্মের জন্য ব্যবহার করে জোড়াফুলের নেতারা। পাল্টা শাসকদলের বক্তব্য, এসআইআর প্রক্রিয়া শুরুর প্রথম দিন থেকেই বিজেপি দাবি করে আসছিল, গুলশন কলোনিতে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ রয়েছে। রোহিঙ্গা রয়েছে। তাহলে তারা কোথায় গেল?

কলকাতা: ঘন জনবসতি। প্রায় ২ লক্ষ মানুষ বসবাস করেন। তার মধ্যে কতজন সেখানকার ভোটার হতে পারেন? তথ্য জেনে চমকে যেতে পারেন। তথ্য বলছে, সেখানকার ভোটার মাত্র ২০৭৩ জন। তাহলে বাকিরা কোথাকার ভোটার? গত কয়েকমাসে খবরের শিরোনামে থাকা কলকাতার আনন্দপুর থানা এলাকার গুলশন কলোনির এই ভোটার তালিকা নিয়েই রাজনৈতিক তরজা বাড়ছে। এসআইআর প্রক্রিয়ায় খসড়া ভোটার তালিকায় ওই ২০৭৩ জনের মধ্যে ২১৯ জনের নাম বাদ গিয়েছে। গুলশন কলোনিতে বসবাসকারী বেশিরভাগ বাসিন্দার পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
এসআইআর প্রক্রিয়া শুরুর প্রথম দিন থেকেই নজরে ছিল কসবা বিধানসভার অন্যতম চর্চিত এলাকা গুলশন কলোনি। এই গুলশন কলোনিতে মোট তিনটি পার্ট রয়েছে। যেগুলি হল, ১৪৯/৩০১, ১৪৯/৩০২ এবং ১৪৯/৩০৩। এই তিনটি পার্টে গুলশন কলোনির সিংহভাগ এলাকা পড়েছে। সামান্য কিছু অংশ পড়েছে পশ্চিম চৌবাগার। নির্বাচন কমিশনের তরফে জানা গিয়েছে, এই তিনটি পার্টের মধ্যে গুলশন কলোনির ভোটার রয়েছে ২০৭৩ জন। বাকি পশ্চিম চৌবাগা এলাকার ভোটার রয়েছে ৯৮৭ জন। খসড়া তালিকা প্রকাশের পর দেখা গিয়েছে, এই তিনটি পার্ট থেকে যথাক্রমে ১৩৫, ১২১ এবং ২৯২ জনের নাম বাদ গিয়েছে।
তবে বাদ যাওয়া ৫৪৮ জনই গুলশন কলোনির নয়। বাদ যাওয়া নামের মধ্যে ২১৯ জন সংখ্যালঘু অধ্যুষিত গুলশন কলোনির। বাকি ২৯৯ জনের নাম বাদ গিয়েছে আশপাশের নোনাডাঙা, ভিআইপি নগর, পশ্চিম চৌবাগা এলাকাগুলি থেকে। এসআইএর প্রক্রিয়া শুরুর আগে এই তিনটি পার্ট মিলিয়ে ভোটারের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৬০ জন। যার মধ্যে গুলশান কলোনিতে ছিল ২০৭৩ জন ভোটার।
আর এখানে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, আদৌ কি প্রতিটা ঘরে পৌঁছতে পেরেছেন বিএলও? সঠিক নথি কি হাতে পেয়েছেন নির্বাচন কমিশনের নিযুক্ত আধিকারিক? এসআইআর প্রক্রিয়া শুরুর সময় দেখা গিয়েছিল, ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে একজনের। অথচ সেই বাড়িতে বসবাস করছে অন্যজন। আবার, অনেক ক্ষেত্রেই এই গুলশন কলোনিতে ভিন রাজ্য থেকে এসে বহু মানুষের বসবাস। তাঁদের মধ্যে অনেকেই স্বীকার করেছিলেন, গুলশন কলোনিতে থাকলেও এখানকার ভোটার নন তাঁরা।
কলকাতা পৌরনিগমের তরফে একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, গুলশন কলোনিতে প্রায় ১ লক্ষ ৯৫ হাজার লোকের বসবাস। প্রশ্ন উঠছে, এখানে বসবাসকারী মানুষ কোথাকার? এত লোক ভিন রাজ্য কিংবা অন্য জেলা থেকে এসে থাকছেন?
বিজেপির দাবি, গুলশন কলোনি মূলত অপরাধী এবং বাংলাদেশিদের লুকিয়ে রাখার অন্যতম জায়গা। যাদের অপরাধমূলক কাজকর্মের জন্য ব্যবহার করে জোড়াফুলের নেতারা। গত ১১ সেপ্টেম্বর দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল গুলশন কলোনি। যা নিয়ে শোরগোল পড়েছিল। এসআইআরের খসড়া তালিকা প্রকাশের পর তৃণমূলকে তোপ দেগে বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ বলেন, “২ লক্ষ মানুষ থাকেন। তার মধ্যে মাত্র ৩ হাজার ভোটার। তাতেও নাম বাদ দিতে হল।” কটাক্ষের সুরে তিনি বলেন, “এগুলো ঠিক হয়নি। এগুলো অন্যায়।”
পাল্টা শাসকদলের বক্তব্য, এসআইআর প্রক্রিয়া শুরুর প্রথম দিন থেকেই বিজেপি দাবি করে আসছিল, গুলশন কলোনিতে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ রয়েছে। রোহিঙ্গা রয়েছে। তাহলে তারা কোথায় গেল? বিজেপিকে তোপ দেগে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, “কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বিজেপির এখানকার নেতারা ছাগলের তৃতীয় বাচ্চার মতো লাফাতে থাকে। তারাই এইসব রোহিঙ্গা, অনুপ্রবেশ বুঝিয়ে অমিত শাহ, নরেন্দ্র মোদীর মাথা খারাপ করে।” ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সুশান্ত কুমার ঘোষ বলেন, “নির্বাচন কমিশন যদি সঠিকভাবে এসআইআর না করে থাকে, তাহলে বিজেপি দেখুক কী করবে। আমি এখনও দায়িত্ব নিয়ে বলছি, যে উদ্দেশ্য নিয়ে গুলশন কলোনিকে বদনাম করার চেষ্টা হয়েছিল, রোহিঙ্গা-বাংলাদেশি বলে, সেটা সর্বৈব মিথ্যা।” তৃণমূলের দাবি, গুলশন কলোনি এলাকার মানুষের কাছে এসে বিজেপি নেতারা ক্ষমা প্রার্থনা করুন।
যদিও প্রশ্ন উঠছে, ২ লক্ষ মানুষের মধ্যে কেন ২০৭৩ জন এখানকার ভোটার? বাকিদের পরিচয় কি যাচাই করা হচ্ছে? এসআইআর প্রক্রিয়া গুলশন কলোনি নিয়ে নতুন করে প্রশ্নচিহ্ন তুলে দিল।
