কৃষক আন্দোলনে এবার রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির দাবি, ‘মাওবাদী’ বলে নিশানা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গয়াল (Piyush Goyal) ফিকি-র বার্ষিক সভায় মন্তব্য করলেন, “অতিবাম এবা মাওবাদীরা কৃষক আন্দোলনকে হাইজ্যাক করেছে।”

কৃষক আন্দোলনে এবার রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির দাবি, ‘মাওবাদী’ বলে নিশানা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর
ছবি - ট্যুইটার
Follow Us:
| Updated on: Dec 13, 2020 | 12:49 PM

নয়াদিল্লি: ‘দিল্লি চলো’। নভেম্বরে কেন্দ্র সরকারের নতুন কৃষি আইনের বিরোধিতা করে এই রাজনৈতিক কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল অল ইন্ডিয়া কিষাণ সংঘর্ষ কোঅর্ডিনেশন কমিটি। দেশের অন্তত ২০০টি কৃষক সংগঠনের মিলিত এই কর্মসূচি সমর্থন আদায় করেছিল আরও ৫০০ কৃষক সংগঠনের। মূল দাবি ছিল, কৃষককে তাঁর ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (Minimum Support Price – MSP) দিতে হবে এবং তা আইনের আওতাভুক্ত করতে হবে। শুরুটা হয়েছিল এখান থেকেই। নভেম্বর পেরিয় এখন ডিসেম্বরের মাঝামাঝি, আন্দোলন চলছে (Farmer Protest)।

দিল্লি অবরুদ্ধ। সীমান্ত অঞ্চলে কার্যত ঘাঁটি গেড়েছে কিষাণ-মজদুর। যার নেতৃত্বে রয়েছে ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ন (একতা উগ্রাহন), ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ন, ক্রান্তিকারি কিষাণ ইউনিয়ন সহ অল ইন্ডিয়া কিষাণ সভার মত কৃষক সংগঠন।

আরও পড়ুন: প্রত্যাহারই করতে হবে কৃষি আইন, ভুখা পেটে আন্দোলনের ডাক অন্নদাতাদের

কংগ্রেস, সিপিএম, সিপিআই সহ একাধিক বাম দলগুলো তো বটেই, কৃষকদের এই আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের মতো দলও। এমন অবস্থায় আন্দোলনকে প্রতিহত করতে কার্যত পাল্টা বিরোধের পথে হাঁটল সরকার। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গয়াল (Piyush Goyal) ফিকি-র বার্ষিক সভায় মন্তব্য করলেন, “অতিবাম এবা মাওবাদীরা কৃষক আন্দোলনকে হাইজ্যাক করেছে।” নাম না করলেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এই নিশানা যে ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের (একতা উগ্রাহন) উদ্দেশেই ছিল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

এখন প্রশ্ন, কেন এই মন্তব্য করলেন পীযূষ গয়াল?

গত ১০ ডিসেম্বর, মানবাধিকার দিবসে (Human Rights Day) যোগীন্দর সিং উগ্রাহনের (Joginder Singh Ugrahan) সংগঠন একটি প্রতিবাদ কর্মসূচি নেয়, যেখানে ভীমা কোরেগাওঁয়ের হিংসার ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া ‘অ্যাক্টিভিস্ট’-দের কারামুক্তির দাবি তোলা হয়।

আরও পড়ুন: ‘করোনা টিকার জন্য এক পয়সাও নেব না, দেব সবাইকে’, ঘোষণা কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের

সরকার এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে মত আন্দোলনকারীদেরই একাংশের। কৃষক সভার নেতা হান্নান মোল্লার (Hannan Mollah) কথায়, “উগ্রাহন একটি গোষ্ঠী যারা মানবাধিকার দিবস পালন করেছে। আমরা ওদের বলেছি, আন্দোলনের সঙ্গে এই বিষয়গুলোকে না মেলাতে। সরকার যেন কোনও ভাবেই আমাদের নিশানা না করতে পারে সে বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে।।” রাষ্ট্রীয় কিষাণ মজদুর মহাসংঘের নেতা শিবকুমার যেমন বললেন, “উগ্রাহনদের কর্মসূচির সঙ্গে চলতি আন্দোলনের কোনও সম্পর্ক নেই।” আজাদ কিষাণ কমিটির নেতা হরপাল সংঘ আরও একধাপ এগিয়ে বলেন, “সরকার আমাদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে।”

‘আগে বলত পাকিস্তানি, এখন বলছে মাওবাদী’

এই ইস্যুতে উগ্রাহনদের নেতা যোগীন্দর সিং পাল্টা সরকারকেই নিশানা করেছে। তাঁর বক্তব্য, “প্রথমে ওরা আমাদের খলিস্তানি বলল। তরাপর বলল পাকিস্তানি। এখন বলছে মাওবাদী। শব্দচয়নে পরিবর্তন হলেও আমাদের বিরুদ্ধে সরকারে আক্রমণের কোনও পরিবর্তন হয়নি।” প্রাক্তন সেনা তথা পঞ্জাবের এই কৃষক নেতা আরও বলেন, “উগ্রাহনরা মনে করে না, যেহেতু কোনও নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে সবাই এক ছাতার তলায় আসছে, সেকারণে আমাদের নিজস্ব প্রকল্প ও ভাবনা চিন্ত এবং কর্মসূচিকে আড়াল করে রাখতে হবে।” যোগীন্দর সিংয়ের সাফ কথা, তিনি কমিউনিস্ট নন, ‘ভগৎ সিং এবং বাবা নানকের অনুগামী।’

উল্লেখ্য, শুধু কৃষক আন্দোলনই নয়, অতীতে নাগরিকপঞ্জিকরণ, সিএএ-এর মতো ইস্যুতেও কেন্দ্রের বিরোধিতায় সোচ্চার হয়েছেন যোগীন্দর সিং উগ্রাহন। তাঁকে দেখা গিয়েছে শাহিনবাগের আন্দোলনেও। বিগত ১৮ বছর ধরে উগ্রাহন কৃষক সংগঠনের নেতা তিনিই। পঞ্জাবের ১০টি জেলায় তাঁদের সংগঠন বেশ মজবুত। অতীতে ফরিদকোটে ধর্ষণ, সাংরুরে দলিত শ্রমিকদের ওপর অত্যাচার, মনসায় পাওয়ার প্ল্যান্টের বিরোধিতা করে আন্দোলন সংগঠিত করেছেন যোগীন্দর সিং উগ্রাহন।