মাথার দাম ৪০ লাখ, জওয়ানদের ফাঁদে ফেলেছিল টেন পাশ হিদমারের আড়াই চাল!

পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মির ১ নম্বর ব্যাটেলিয়নের প্রধান হিদমা ছত্তীসগঢ়েরই বাসিন্দা। কীভাবে মাওবাদী নেতা হয়ে উঠেল এই হিদমা?

মাথার দাম ৪০ লাখ, জওয়ানদের ফাঁদে ফেলেছিল টেন পাশ হিদমারের আড়াই চাল!
কে এই মাধবি হিদমা?
Follow Us:
| Updated on: Apr 05, 2021 | 7:19 PM

নয়া দিল্লি: ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদী অভিযানে নিহত হয়েছেন ২২ জওয়ান। ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন নেতা-মন্ত্রীরা। কোন ভুলে এতজন জওয়ান শহিদ হলেন, তা নিয়েও উঠছে একাধিক প্রশ্ন। তবে সবকিছুর মাঝেই একটি নাম বারবার উঠে আসছে। সেটি হল মাধবি হিদমা। তাঁকে খুঁজতেই শনিবার সকালে সুকমা ও বিজাপুরের জঙ্গলে প্রবেশ করেছিল কেন্দ্রীয় যৌথ বাহিনী।

শনিবার সুকমা ও বিজাপুরের জঙ্গলে “মোস্ট ওয়ান্টেড” মাওবাদী নেতা হিদমার উপস্থিতির খবর পেতেই সিআরপিএফ(CRPF)-র কোবরা শাখা, ডিআরজি (DRG) ও স্পেশাল টাস্ক ফোর্স(Special Task Force)-র দুই হাজার কর্মী জঙ্গলে তল্লাশি অভিযান শুরু করে। কিন্তু গভীর জঙ্গলের গাছপালাহীন অঞ্চলে পৌঁছতেই প্রায় ৪০০ মাওবাদী তিনদিক থেকে তাঁদের ঘিরে ফেলে। ইংরেজি অক্ষর “ইউ” আকারে নির্বিচারে গুলি চালাতে শুরু করে। জওয়ানরা পাল্টা গুলি চালালেও অতর্কিত হানায় তাঁরা কিছুটা হকচকিয়ে যায়। সেই সুযোগটিই কাজে লাগায় মাওবাদীরা। ব্যাপক সংঘর্ষে প্রাণ হারান ২২ জওয়ান। আহত হন ৩০ জনেরও বেশি জওয়ান। বর্তমানে তাঁরা রায়পুরের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

কে এই হিদমা?

পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মির ১ নম্বর ব্যাটেলিয়নের প্রধান হিদমা ছত্তীসগঢ়েরই বাসিন্দা। সুকমার পূর্বতী নামক একটি ছোট্ট গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেছিল সে। আর্থিক অনটনের মাঝেও টেনেটুনে দশম শ্রেণি অবধি পড়েছিল হিদমা। কিন্তু উপস্থিত বুদ্ধির জেরেই মাওবাদী নেতাদের নজর কেড়েছিল সে। মাওবাদী সংগঠনে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব পেতেই তা গ্রহণ করে নেয় হিদমা। আইনের চোখে ধীরে ধীরে অপরাধী পরিণত হলেও, তাঁকে পিছন ফিরে দেখতে হয়নি। কিছুদিনের মধ্যেই সে মাওবাদী মিলিটারি অপারেশন ও গরিলা ওয়েলফেয়ারের প্রধান কুশলী ও পর্যবেক্ষক হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুন: ভোট গ্রহণের একদিন আগেই উদ্ধার নগদ ২২৫ কোটি টাকা, ১৭৬ কোটির সোনা ও প্রচুর মদ

মাওবাদী নেতা হিসাবে পরিচিত হওয়ার পরই একাধিক নামও বদল করে সে। কখনও হিদমালু, কখনও সন্তোষ নামে ছত্তীসগঢ় সহ একাধিক এলাকায় হামলা চালায় হিদমা। দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জো়নাল কমিটির সদস্য হিদমা মূলত সুকমা, দান্তেওয়াড়া ও বিজাপুরেই মাওবাদী কার্যকলাপ চালায়। এই হিদমাই ২০১০ সালের দান্তেওয়াড়ায় নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলা ও ২০১৭ সালে সুকমায় হামলাতেও প্রধান চক্রী ছিলেন বলে মনে করা হয়। তাঁর উপর ৪০ লাখ টাকার পুরস্কারও ঘোষণা করেছে ভারত সরকার।

তবে একা হিদমা নয়, শনিবারের অভিযানে তাঁর সহকারী সুজাতাকেও ধরার লক্ষ্য ছিল যৌথ বাহিনীর। সুজাতার সম্পর্কে গোয়েন্দা বিভাগের কাছে বিশেষ কোনও তথ্য না থাকলেও ছত্তীসগঢ়ে মহিলা ও শিশুদের মাওবাদী প্রশিক্ষণে তাঁর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে বলেই সন্দেহ।

শনিবার সিআরপিএফ বাহিনীর কাছে সুকমা-বিজাপুর জঙ্গলে এই দুই মাওবাদী নেতার উপস্থিতির খবর মিলতেই ২০০০ জওয়ান নিয়ে তল্লাশি অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী। তবে সূত্রের দাবি, ভুয়ো তথ্য দিয়েই জঙ্গলে ডেকে আনা হয়েছিল জওয়ানদের। গভীর জঙ্গলে যেখানে গাছ পালার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেকটাই কম, সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী পৌছতেই তিনদিক থেকে ঘিরে ফেলে প্রায় ৪০০-রও বেশি মাওবাদী। লাগাতার গুলি, মর্টারের হাত থেকে বাঁচতে অল্প সংখ্য়ক গাছের পিছনেই নিজেদের আড়াল করার চেষ্টা করেন জওয়ানারা। প্রায় চার ঘণ্টা ধরে চলে এনকাউন্টার। ঘটনায় শহিদ হন ২২ জওয়ান। অন্যদিকে কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ জন মাওবাদীও খতম হয়েছে বলে দাবি সিআরপিএফের।

আরও পড়ুন: মাওবাদীদের চক্রব্যূহে আটকে পড়েছিল জওয়ানরা? কী হয়েছিল সে দিন?