Chinna Jeeyar Swamy: ‘আগে সুপারিশে পদ্ম সম্মান দেওয়া হত, আর এখন…’, ভক্তদেরই পদ্ম সম্মানের উৎসর্গ করলেন চিন্না জিয়ার স্বামী
Chinna Jeeyar Swamy: চিন্না জিয়ার স্বামী বলেন, "আজকাল মানুষ জাত, বর্ণ, ধর্মের নামে একে অপরকে আক্রমণ করে যা অত্যন্ত অন্যায় কাজ। আমাদের সকলের একসঙ্গে থাকা উচিত..."।
এই পুরস্কার কি ধর্ম প্রচারের জন্য নাকি সামাজিক কাজের জন্য?
চিন্না জিয়ার স্বামী: আমরা সামাজিক ও ধর্মীয় উভয় ক্ষেত্রেই কাজ করি এবং সেবামূলক কাজও করি। আজকের এই পুরস্কার যারা সঠিকভাবে সমাজসেবা করেন, যারা শুধু নাম চান না, তাদের নির্বাচিত করে পুরস্কৃত করা হয়েছে। আজ যাঁদেরকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, তাঁরা গ্রাম ও ছোট শহর থেকে এসেছেন। আগে শুধু সুপারিশের মাধ্যমেই কাজ চলত কিন্তু আজ যারা এসেছেন, তারা সুপারিশ পাওয়ার রীতিনীতি বোঝেন না। পদ্ম পুরষ্কার একটি স্বীকৃতি। এখনও অবধি যারা সেবামূলক কাজ করেছেন, তাঁরা যাতে আরও ভাল করতে পারেন এবং তাঁদের কাজের প্রসার ঘটুক, তার জন্যই এই স্বীকৃতি। এই পুরস্কার বিশাল দায়িত্ব বাড়িয়ে দিল।
আমরা এখন পর্যন্ত যা কিছু সেবামূলক করেছি, তা আমরা একা করিনি.. লাখ লাখ ভক্ত আমাদের সঙ্গে সেবা করেছেন.. তেলেগু মানুষ, দক্ষিণ ভারত এবং উত্তরেও সর্বত্র সাহায্য পেয়েছি সেবামূলক কাজের জন্য। আমি মনে করি, আজ আমি যা পেয়েছি, তা সেই মানুষদের জন্যই। আমি শুধু মানুষদের সেবার ধর্ম গ্রহণ করেছি।
সামাজিক ঐক্য নিয়ে কাজ করা কতটা চ্যালেঞ্জিং?
চিন্না জিয়ার স্বামী: সমতার জন্য, আমরা রামানুজাচার্যজীর পথ অনুসরণ করেছি। আমরা ছোটখাটো কাজও যেমন করি, তেমনই ক্যানসার সচেতনতা সহ মহিলাদের স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করি। এর মধ্যেও মহিলাদের জরায়ুর ক্যানসারের উপরে আমরা বিশেষ কাজ করি। এখনও অবধি আমরা প্রায় ২০ লাখ মহিলার ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের কাজ করেছি।
এর পাশাপাশি আমরা গরুর সেবাও করি, জমির সমৃদ্ধির জন্য গরু পালন কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সে সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দিই। আমরা আদিবাসীদের মধ্যে শিক্ষার প্রসারের জন্য কাজ করেছি… আমরা প্রায়সই অন্ধদের শিক্ষার জন্য কাজ করি… সেই সঙ্গে অন্ধদের কম্পিউটার শেখানোর জন্যও কাজ করেছি আমরা… ভারতে আমাদেরই একমাত্র কলেজ রয়েছে যেখানে অন্ধদের জন্য দ্বাদশ শ্রেণি ও পরবর্তী ডিগ্রি শিক্ষা এবং কম্পিউটার শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে।
গুজরাটে যখন ভূমিকম্প হয়েছিল, তখন সাধারণ মানুষ বলেছিলেন, পৃথিবী রুষ্ট হয়েছে অর্থাৎ রাগ করেছে। আমরা বলেছিলাম, কোনও মা তাঁর সন্তানের প্রতি রুষ্ট হয় না। এই ধরিত্রী আমাদের মা, আমরাই মায়ের অপমান করি তার জল, বায়ু, মাটি দূষিত করে। আমরা গাছ কেটে ফেলি, প্রাণী হত্যা করি। আমাদের জীবন এবং আমাদের প্রয়োজনের জন্য আশেপাশের পরিবেশকে ধ্বংস করি। যখন ধরিত্রীর উপর অত্যাচার বাড়ে, তখন ঘূর্ণিঝড়, সুনামির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসে।
আজকের দিনে সামাজিক সম্প্রীতির কাজ কত বড় চ্যালেঞ্জ?
চিন্না জিয়ার স্বামী: আজকাল মানুষ জাত, বর্ণ, ধর্মের নামে একে অপরকে আক্রমণ করে যা অত্যন্ত অন্যায় কাজ। আমাদের সকলের একসঙ্গে থাকা উচিত… এর জন্য আমরা একটি স্লোগান দিয়েছি “আরাধনা আপকা, মান্যতা সবকা”। আপনি যে ধর্মেরই বিশ্বাসী হন না কেন, সকল মানুষ ও তাদের ধর্মকে সমান স্বীকৃতি দিন। সমাজে সবাইকে একসঙ্গে থাকতে হবে, সমাজ সংস্কারের কাজ সবাইকে একসঙ্গে করতে হবে। কিছু মানুষ সমাজকে বিভক্ত করে তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ পূরণ করতে চায়, তারা কেবল বিভাজন করে, এই ধরনের লোকজনদের থেকে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
রাম নবমীতে দেশে যা ঘটল তারপর হনুমান জয়ন্তীতে কী বার্তা দেবেন?
চিন্না জিয়ার স্বামী: হনুমানজী কারোর সঙ্গে বিভাজন করেননি। উনি রাবণের কাছে গিয়েও বলেছিলেন সে ভাল। তাঁকে সুখে বাঁচতে দেওয়ার জন্য তাঁকে মা সীতাকে রামচন্দ্রজীর হাতে তুলে দিতে বলেছিলেন। তিনি সরাসরি রাবণকে এই কথা বলেছিলেন, কিন্তু রাবণ যখন সেই কথা শোনেননি, তখন তাঁকে শিক্ষাও দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। আমরা চাই জনসাধারণ একসঙ্গে থাকুক।
কিন্তু কিছু মানুষ আছেন যারা বিভাজন করেন, আমাদের উচিত সেই সমস্ত মানুষ এবং তাদের চিন্তাভাবনা থেকে দূরে থাকা, কারণ আমরা সবাই ভারতীয়। এখানে হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, খ্রিস্টান, জৈন-সবাই ভাইয়ের মতো বসবাস করি।
আমাদের দেশ স্বাধীনতার ৭৫ তম বর্ষে পদার্পণ করেছে। আমাদের বিশ্বকে বলতে হবে যে আমরা ভারতীয়রা এক, আমরা যেকোনও বর্ণ, যেকোনও ধর্মের মানুষ একত্রিত হয়ে বসবাস করি। আসুন আমরা সবাই মিলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।