‘করোনা মোকাবিলায় নজির গড়েছে ভারত’, দাভোস সামিটে দেশের প্রশংসায় প্রধানমন্ত্রী

বিশ্বের বৃহত্তম টিকাকরণ কর্মসূচি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "টিকাকরণ শুরু হওয়ার মাত্র ১২ দিনের মধ্যেই ২৩ লক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর টিকাকরণ সম্পূর্ণ হয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই বয়স্ক ও কো-মর্ডিবিটি যুক্ত ব্যক্তিদের করোনা টিকা দিতে তিন কোটির লক্ষ্য পূরণ করবে দেশ।"

'করোনা মোকাবিলায় নজির গড়েছে ভারত', দাভোস সামিটে দেশের প্রশংসায় প্রধানমন্ত্রী
বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী। ছবি:ANI
Follow Us:
| Updated on: Jan 28, 2021 | 8:47 PM

নয়া দিল্লি: করোনায় শোচনীয় হাল হবে ভারতের, এই ভবিষ্যতবাণীকে ভুল প্রমাণ করে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় নজির গড়েছে দেশ, বৃহস্পতিবার এমনটাই জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi)। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (World Economic Forum)-র দাভোস সামিটে (Davos Summit) প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যজুড়ে থাকল আত্মনির্ভরতার কথা ও করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশের জয়জয়কার।

৪০০-রও বেশি বিশ্বের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই আলোচনাতেই প্রধানমন্ত্রী মানবকল্যাণের উদ্দেশ্যে শিল্পপ্রযুক্তির ব্যবহারের বার্তা দেন। একইসঙ্গে জানান, ২০২০ সালে গোটা বিশ্ব যখন করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে ব্যস্ত ছিল, সেই সময়ই ভারতে বিদেশী বিনিয়োগ ১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

দাভোস সামিটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, “গত বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে বহু বিশেষজ্ঞরাই বলেছিলেন কতরোনা সংক্রমণে সবথেকে বেশি প্রভাবিত হবে ভারত এবং প্রায় ৭০-৮০ কোটি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হবেন এবং প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হবে। তবে আমরা প্রযুক্তি ও মানবসম্পদের সম্পূর্ণ ব্যবহার করে বিপর্যয়ের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছি।”

আরও পড়ুন: লালকেল্লায় পতাকা উত্তোলনকারীকে শনাক্ত করল দিল্লি পুলিশ, ‘নির্দোষ’ সার্টিফিকেট দিল গ্রামবাসীরা

বিশ্বের বৃহত্তম টিকাকরণ কর্মসূচি ভারতেই শুরু হয়েছে, একথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “টিকাকরণ শুরু হওয়ার মাত্র ১২ দিনের মধ্যেই ২৩ লক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর টিকাকরণ সম্পূর্ণ হয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই বয়স্ক ও কো-মর্ডিবিটি যুক্ত ব্যক্তিদের করোনা টিকা দিতে তিন কোটির লক্ষ্য পূরণ করবে দেশ। বর্তমানে ভারতের তৈরি দুটি ভ্যাকসিন বাজারে উপলব্ধ। আগামিদিনে আরও কয়েকটি ভ্যাকসিন আনা হবে। আমরা কেবল পিপিই কিট ও মাস্কের চাহিদা পূরণই করেনি, একইসঙ্গে অন্যান্য দেশগুলিতেও মাস্ক, পিপিই কিট ও করোনা টিকা পাঠিয়ে সাহায্য করা হয়েছে।”

তিনি আরও যোগ করে বলেন, “করোনা ভাইরাস আমাদের মানবতার গুরুত্ব শিখিয়েছে। কীভাবে প্রাচীন আয়ুর্বেদ দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, সেই পথও আমরাই সমগ্র বিশ্বকে দেখিয়েছি। বর্তমানে ভারত অন্যান্য দেশেও ভ্যাকসিন পাঠিয়ে সেদেশের বাসিন্দাদের প্রাণ রক্ষায় সাহায্য করছে।”

করোনা পরিস্থিতিতেও দেশের বাণিজ্যক্ষেত্রে উন্নয়ন ও অগ্রগতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, “কোভিড পরিস্থিতিতেও ভারতে কয়েকশো কোটি টাকা খরচ করে বিভিন্ন পরিকাঠামোর উন্নয়ন করা হয়েছে। আমরা দেশের প্রতিটি মানুষের জীবন রক্ষার উপর জোর দিয়েছিলাম, সেই কারণেই আজ ভারত আত্মনির্ভর হয়ে ওঠার পথে হাঁটছে। যে সময়ে গোটা বিশ্বে বিমান পরিষেবা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল, তখন ভারতই প্রায় এক লাখেরও বেশি মানুষকে তাঁদের নিজের দেশে পৌঁছতে ও ১৫০টিরও বেশি দেশে অত্যাবশ্যকীয় চিকিৎসামগ্রী পৌঁছে দিতে সাহায্য করেছে।”

দেশের পরিকাঠামোর উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যেকোনও দেশের পরিকাঠামোই তাঁর উন্নয়নের সহায়ক স্তম্ভ। গত ছয় বছরে ভারতে ৫৭ হাজার কিলোমিটার আন্তঃরাজ্য সড়ক নির্মাণ হয়েছে এবং ৫৮ শতাংশ বিদ্যুৎচালিত রেললাইন পরিষেবা চালু করা হয়েছে। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করে বলছি, শীঘ্রই অর্থনীতি ক্ষেত্রেও এই পরিবর্তন দেখা যাবে। ২০২০ সালেই দেশের বিদেশী বিনিয়োগ ১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।”

আলোচনার শেষভাগে ফের একবার আত্মনির্ভতার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “বর্তমানে ১৩০ কোটি ভারতীয়ের কাছে আধার কার্ড রয়েছে, দেশে প্রায় ১১০ কোটি মোবাইল ব্যবহারকারী রয়েছে। দেশে যে বিভিন্ন দিকগুলিতে কাজ হচ্ছে, তারমধ্যে অন্যতম হল সকল দেশবাসীর কাছে ডিজিটাল পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া। দ্বিতীয়ত, বাজারে প্রতিযোগীতা বৃদ্ধি এবং তৃতীয়ত প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা আত্মনির্ভর হয়ে উঠবো। ব্যবরহারীদের তথ্যের গোপনীয়তা বজায় রাখার কাজও আত্মনির্ভরতার অন্যতম একটি পদক্ষেপ।”

আরও পড়ুন: গ্রামবাসীদেরও সমর্থন হারাল কৃষকরা, আন্দোলনস্থল খালি করার দাবিতে সরব স্থানীয়রা