AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Tamil Nadu : গোদাবরী পেরলেই প্রতিরোধের মুখে পড়ে হিন্দি

Tamil Nadu : হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষার সওয়াল নিয়ে বারবার উত্তপ্ত হয়েছে দেশ। আর এই ভাষা প্রতিরোধের পীঠস্থান হল তামিলনাড়ু। তামিলনাড়ুর পাশাপাশি এই বিষয়ে অকল্পনীয় দৃঢ়তা দেখিয়েছে গোটা দক্ষিণ ভারতই।

Tamil Nadu : গোদাবরী পেরলেই প্রতিরোধের মুখে পড়ে হিন্দি
হিন্দি প্রতিরোধের এপিসেন্টার তামিলভূম (গ্রাফিক্স : অভিজিৎ বিশ্বাস)
| Edited By: | Updated on: Apr 30, 2022 | 11:12 PM
Share

প্রদীপ চক্রবর্ত্তী

আপনারা তামিলনাড়ুতে জিততে পারবেন না। সংসদে দাঁড়িয়ে বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন রাহুল গান্ধী। রাষ্ট্রপতির ভাষণের জবাবি ভাষণে কংগ্রেস সাংসদের বক্তব্যে ছিল যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর কেতাবি মোড়কে মোড়া। নতুন শব্দ কানে লাগল তামিলনাড়ু। মোদীকে তামিলনাড়ুতে জিততে চ্যালেঞ্জ করছেন রাহুল। সেই তামিলনাড়ু। যেখানে বহু দশক ক্ষমতায় নেই কংগ্রেস। আর ইতিহাসের কী নির্মম পরিহাস। রাহুল গান্ধীর মুখে তামিলনাড়ুর নামটাই সবার আগে এল। যে রাজ্য নেহরুর প্রিয় ভাষা ভাবনায় সবার আগে ধাক্কা দিয়েছিল।

তামিল অস্মিতা কী? স্বাধীনতার এক দশক আগে তার স্বাদ পেয়েছিল তামিলনাড়ু। ১৯৩৬ সালের প্রাদেশিক আইনসভা নির্বাচনে একতরফা জেতে কংগ্রেস। দেশজুড়ে আড়াই হাজারের বেশি কংগ্রেস বিধায়ক নির্বাচিত হন। তত্‍কালীন মাদ্রাজ প্রদেশে কংগ্রেস সরকার তৈরি হয়। প্রথম মুখ্যমন্ত্রী চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারি। গোপালাচারি চেয়েছিলেন সরকারি স্কুলে হিন্দি শেখা আবশ্যিক করা হোক। জাতীয়তাবাদী ভাবনা। সন্দেহ নেই। কিন্তু, তামিল চিন্তাবিদরা একে আরও এক সাম্রাজ্যবাদ হিসেবেই দেখলেন। হিন্দি বিরোধিতা শুরু হল। নেতৃত্বে ই.ভি রামস্বামী। যিনি পেরিয়ার হিসেবেই পরিচিত। ৩ বছর ধরে লাগাতার অনশন, সমাবেশ, মিছিল, পিকেটিং চলল। মহিলা ও শিশু সহ ১২০০ প্রতিবাদী গ্রেফতার বরণ করলেন। ইতিমধ্যে জাতীয় স্তরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলে গেল। দেশজুড়ে কংগ্রেস সরকার পদত্যাগ করল। মাদ্রাজের স্কুলে হিন্দি হুকুমও রদ করে দিল ব্রিটিশ সরকার।

ভারতের মহামানবের মূল ধারা থেকে তামিলনাড়ু কখনও বিচ্যুত হয়নি। দেশ গঠনে তামিল জাতির অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু, যতবারই হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। তামিলনাড়ু প্রতিবাদে সরব হয়েছে। ১৯৬৫ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসে সরকারি ভাষা আইন কার্যকর করা হয়। তার ঠিক আগের দিন তিরুচিল্লাপল্লি স্টেশনে আত্মাহুতি দেন এক যুবক। সুইসাইড নোটে লিখেছিলেন, ‘তামিলকে বাঁচিয়ে রাখতে আমি মরছি’। আবার আন্দোলনের আগুন জ্বলে ওঠে। আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন DMK প্রতিষ্ঠাতা সি.এন আন্নাদুরাই। স্লোগান ছিল ‘উডা মান্নুকু, উইর তামিজুক্কু’। যার অর্থ, ‘শরীরটা মাটিকে দিচ্ছি, জীবনটা উত্‍সর্গ করছি তামিলকে’। সেই আন্দোলনে মোট পাঁচজন আত্মাহুতি দেন। তামিলনাড়ুর উদ্বিগ্ন কংগ্রেস নেতারা প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনিও ভাবনাচিন্তা করতে বাধ্য হন। পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, সরকারি ভাষা আইনে সংশোধনী নিয়ে আসেন। বিকল্প সরকারি ভাষা হিসেবে ইংরেজির ব্যবহার চলবে। সিদ্ধান্ত হয়। সেদিন থেকে তামিলনাড়ু দ্বিভাষা নীতি নিয়ে চলছে। তামিল ও ইংরেজি। অন্য কোনও ভাষার সেই রাজ্যে নো এন্ট্রি। তামিল রাজনীতির প্রথম বলি তামিলনাড়ু প্রদেশ কংগ্রেস। ১৯৬৮ সালে কংগ্রেসের হাতছাড়া হয় তামিলনাড়ু।

রাজীব গান্ধী জমানায় আবার ভাষা রক্ষার লড়াইয়ে দিল্লিকে চ্যালেঞ্জ করে তামিলনাড়ু। সালটা ১৯৮৬। দেশজুড়ে নবোদয় বিদ্যালয় তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রাজীব গান্ধী। প্রতিরোধ করে তামিলনাড়ু। DMK প্রধান এম করুণানিধির নেতৃত্বে ২০ হাজার পার্টিকর্মী একজোট হয়ে লড়াই করে। ২১ জন হয় আত্মাহুতি দেন, কিংবা বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন। এখনও পর্যন্ত তামিলনাড়ুতে একটিও নবোদয় বিদ্যালয় খোলেনি। ২০১৯ সালে আবার বিপ্লবের স্ফূলিঙ্গ জ্বলে ওঠে। জাতীয় খসড়া শিক্ষানীতিতে অহিন্দিভাষী রাজ্যগুলির জন্য একটা প্রস্তাব ছিল। তা হল স্কুলপাঠ্যে তৃতীয় ভাষা হিসেবে হিন্দিকে বাধ্যতামূলক করা। কিন্তু, তামিলনাড়ুর নেতৃত্বে আঞ্চলিক অহিন্দিভাষী রাজ্যগুলি এর বিরোধিতা করে। সংশোধিত শিক্ষানীতিকে হিন্দিকে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে রাখা হয়।

শুধু তামিলনাড়ু নয়। ভাষা অস্মিতায় গোটা দক্ষিণ ভারতই অকল্পনীয় দৃঢ়তা দেখিয়েছে। ভাষার ভিত্তিতে গঠিত প্রথম রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশ। তেলুগুভাষীদের জন্য পৃথক রাজ্যের দাবিতে ৫৬ দিন অনশন করে মৃত্যুবরণ করেছিলেন কুর্নুলের পট্টি শ্রীরামালু। হায়দরাবাদের ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়করণে বাধা পেয়েছিলেন জওহরলাল নেহরু। বিরোধিতার মূলে ছিল হিন্দি-প্রতিরোধ। বহু রাজ্যের হিন্দির বিরুদ্ধে নাগরিকদের একটা স্বভাবগত খারাপ লাগা রয়েছে। তবে হিন্দি বিরোধিতার এপিসেন্টার তামিলনাড়ু। সন্দেহ নেই। কংগ্রেস হোক বা বিজেপি। উত্তর ভারতের যেকোনও রাজনৈতিক শক্তিমানের হিন্দি উদ্যোগই গোদাবরী পেরনোর পর বাধার মুখে পড়ে।

আরও পড়ুন : Mamata-Modi meet: চলার পথে দেখা হল, মোদীর প্রশংসাও করলেন মমতা