Trinamool Congress: কর্পূরের মতো উবেছে বিরোধী ঐক্য, কংগ্রেসের ডাকা বৈঠকে থাকবে না তৃণমূল
Parliament Winter Session: কয়েক মাস পরেই গোয়ায় বিধানসভা নির্বাচন। আর সেখানে বিজেপির পাশাপাশি কংগ্রেসের বিরুদ্ধেও লড়াইয়ে নামছে কংগ্রেস। আর তাই সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের আগে কংগ্রেসের ডাকা কোনও বৈঠক এড়িয়ে চলতে হচ্ছে দিল্লির তৃণমূল নেতাদের।
নয়া দিল্লি : বিজেপি বিরোধী জোটের আকাশে আরও ঘন হয়ে আসছে কালো কালো মেঘ। সংসদের আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনের আগে কংগ্রেসের ডাকা কোনও বৈঠকে যোগ দেবে না তৃণমূল। দলীয় সূত্রে এমনটাই খবর পাওয়া গিয়েছে। কর্পূরের মতো উবে যেতে বসেছে অ-বিজেপি মহাজোট। কিন্তু কেন হঠাৎ এতটা বেঁকে বসল তৃণমূল? জানা গিয়েছে, তৃণমূলের গোয়া ইউনিট চাইছে না কংগ্রেসের সঙ্গে কোনওরকম প্রত্যক্ষ আলোচনায় বসুক দলের দিল্লির নেতারা। কারণ, কয়েক মাস পরেই গোয়ায় বিধানসভা নির্বাচন। আর সেখানে বিজেপির পাশাপাশি কংগ্রেসের বিরুদ্ধেও লড়াইয়ে নামছে কংগ্রেস। আর তাই সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের আগে কংগ্রেসের ডাকা কোনও বৈঠক এড়িয়ে চলতে হচ্ছে দিল্লির তৃণমূল নেতাদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতা জানিয়েছেন, সংসদের অধিবেশন কক্ষে বিরোধীরা সবাই একজোট থাকবে। কিন্তু সকালের বৈঠকগুলিতে উপস্থিত থাকা কিংবা কংগ্রেসের নেতাদের একসঙ্গে পাশাপাশি দেখা যাওয়াটা বর্তমান পরিস্থিতিতে একটু মুশকিল। কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে সোমবার সকালে তাঁর চেম্বারে সমস্ত বিরোধী দলের বৈঠক ডেকেছেন। সংসদের বাদল অধিবেশনের সময়ে সব বিরোধী দলগুলির মধ্যে ঐক্যের সাফল্যকে তুলে ধরেছেন তিনি। শীতকালীন অধিবেশনের আগে আবার বিরোধী দলগুলি ঐক্যমত্য গড়ে তুলবে বলে আশা করছেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি বিভিন্ন সময়ে কংগ্রেসকে ‘তাচ্ছিল্য’ করতে দেখা গিয়েছে তৃণমূল নেতাদের। আর তা মোটেও ভাল চোখে নেননি কংগ্রেস নেতাদের অনেকে। তাঁদের বক্তব্য ছিল, কংগ্রেসকে আক্রমণ করে, কংগ্রেসকে দুর্বল দেখিয়ে, তৃণমূল আসলে বিজেপিকেই সাহায্য করছে। যদিও সেই সব অভিযোগকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে না তৃণমূলে। তাদেরর বক্তব্য, সবাই দেখেছে যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কীভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। কংগ্রেসের ডাকা ওই বিরোধীদের বৈঠক থেকে তৃণমূল দূরে থাকা মানে আম আদমি পার্টি এবং সমাজবাদী পার্টির মতো অন্যান্য বিরোধী দলগুলি, যারা ইউপিএর শরিক দল নয়, তারাও বৈঠক এড়িয়ে যেতে পারে। এমনটাই মনে করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। গত অধিবেশনে, বহুজন সমাজ পার্টি ছাড়া বেশিরভাগ বিরোধী দলকে একত্রিত হতে দেখা গিয়েছিল। তার মধ্যে অবশ্যই রয়েছে পেগাসাস ইস্যু। পেগাসাস নিয়ে আলোচনার দাবিতে সংসদ অচল করে দিয়েছিল বিরোধীরা।
কিন্তু এখন সমীকরণ বদলাচ্ছে। সম্প্রতি মমতার দিল্লি সফরে বিরোধী ঐক্যের ফাটল আরও চওড়া হয়েছে। এতদিন পর্যন্ত মমতার দিল্লি যাওয়া মানেই, কিছু চেনা ছবি প্রত্যেকবারই দেখা যেত। সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে অন্তত একবার দেখা করা। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালের সঙ্গেও অত্য়ন্ত সৌজন্য বিনিময়টুকু হত। কিন্তু এবার সে সবের কিছুই হচ্ছে না। উল্টে সোনিয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করায় একটু চটেই গেলেন মমতা। পরে অবশ্য ড্যামেজ কন্ট্রোলে বলেছিলেন, সোনিয়া পঞ্জাবের ভোটে ব্যস্ত, তাই তাঁর সঙ্গে দেখা করা হচ্ছে না। আর কেজরিওয়াল? তার সঙ্গেও কি সম্পর্ক কিছুটা শীতল হচ্ছে মমতার? প্রশ্নটা উঠছে, কারণ সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। তৃণমূলের মতো আম আদমি পার্টিও এখন দিল্লির গণ্ডি পেরিয়ে নিজেদের সম্প্রসারণে ব্যস্ত। পঞ্জাবে লড়ছে। উত্তরাখণ্ডে লড়ছে। গোয়াতেও লড়ছে। প্রথম দুই ক্ষেত্রে তৃণমূলের সঙ্গে সরাসরি সংঘাত না হলেও, যত কাণ্ড গোয়াতে। সেখান আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়বেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাহলে কি সেই কারণেই, এখন মুখ দেখাদেখি বন্ধ কেজরি আর মমতার?
আবার সামনের বছরের শুরুর দিকেই ভোট রয়েছে যোগী রাজ্যে। আর সেখানে বিরোধীদের সমীকরণটা বেশ জটিল। অখিলেশের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় কংগ্রেস জানিয়ে দিয়েছে, কারও সঙ্গে জোট নয়। প্রিয়ঙ্কার নেতৃত্বে তারা নাকি একাই একশো। ফলে, বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পাশাপাশি, কংগ্রেসকে সেখানে লড়তে হবে অখিলেশের সমাজবাদী পার্টির সঙ্গেও। আর ঠিক এমনই একটা পরিস্থিতিতে মমতা একেবারে স্বমহিমায় জানিয়ে দিয়েছেন, উত্তর প্রদেশের ভোটে যদি অখিলেশের কোনও সাহায্য় লাগে, তাহলে সেই সাহায্য়ের হাত বাড়িয়ে দিতে তৈরি তৃণমূল। রাজনীতির সমীকরণ সবসময় দুইয়ে দুইয়ে চার হয় না। কিন্তু আপাতভাবে দেখে যা মনে হচ্ছে, কংগ্রেসের থেকে অন্য (আঞ্চলিক) বিরোধী দলগুলিকেই বেশি পছন্দ করছেন মমতা।