বিপ্লবের ত্রিপুরায় মানিক-গড়ে নির্বিঘ্নে তৃণমূলের কর্মসূচি, কোন সমীকরণের ইঙ্গিত?

TMC in Tripura: ত্রিপুরায় স্বাধীনতা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে যখন তৃণমূলের মহিলা সাংসদদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে, তখন এই দুই বিধানসভায় নির্বিঘ্নেই নিজেদের কর্মসূচি সমাপ্ত করেছেন তৃণমূল নেতারা।

বিপ্লবের ত্রিপুরায় মানিক-গড়ে নির্বিঘ্নে তৃণমূলের কর্মসূচি, কোন সমীকরণের ইঙ্গিত?
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 15, 2021 | 7:21 PM

প্রদীপ্তকাান্তি ঘোষ: ফের তৃণমূলের (TMC) ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে ত্রিপুরায় (Tripura)। রবিবার একটি দলীয় কার্যালয় উদ্বোধন করতে যাওয়ার পথে তৃনমূল নেতা-নেত্রীদের ওপর হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ। আহত হয়েছেন দোলা সেনা, অপরূপা পোদ্দার সহ একাধিক তৃণমূল নেতা-নেত্রী। যা নিয়ে তুঙ্গে রাজনৈতিক চাপানউতোর। তবে এর মধ্যেও এদিন বিজেপি শাসিত অসমে দুটি জায়গায় তৃণমূলের প্রতিনিধিদের ঘিরে কোনও ঝামেলার অভিযোগ ওঠেনি। আর তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল এই দুটি বিধানসভা এলাকাই সিপিএমের (CPIM) দখলে।

অসমের সোনামুড়া আর ধনপুর, পাশাপাশি দুটি বিধানসভা। ধনপুর বিধানসভা এলাকার বিধায়ক স্বয়ং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। আর সোনামুড়ার সিপিএম বিধায়কের নাম শ্যামল চক্রবর্তী। ত্রিপুরায় স্বাধীনতা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে যখন তৃণমূলের মহিলা সাংসদদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে, তখন এই দুই বিধানসভায় নির্বিঘ্নেই নিজেদের কর্মসূচি সমাপ্ত করেছেন তৃণমূল নেতারা। এদিন আগরতলায় উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। আবার সিপিএমেরপ গড়গুলিতে স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের কর্মসূচিতে ছিলেন তৃণমূলের দুই সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল ও আবির বিশ্বাসও (রাজ্যসভা)। সেখানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন থেকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়া, সবটাই হয়েছে মসৃণভাবে।

উল্লেখ্য, বিজেপি শাসিত ত্রিপুরার মধ্যে পশ্চিম ত্রিপুরার সিপাহীজলায় সিপিএম এখনও যথেষ্ট শক্তিশালী। সেই এলাকায় তৃণমূলের নির্বিঘ্নে কর্মসূচি সমাপ্ত করা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। রাজনীতির কারবারিদের একাংশের মতে, সিপিএমের এলাকায় তৃণমূলের কর্মসূচি নিরুত্তাপ মেটার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট যে, বিরোধীরা নিজেদের মধ্যে গোলমাল করে শাসক শিবির বিজেপিকে কোনওভাবে জায়গা করে দিতে চায় না। তাই সেখানে নির্বিঘ্নেই কর্মসূচি করতে পারলেন প্রতিমা, আবিররা।

গত কয়েকদিনে ত্রিপুরার রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে অদূর ভবিষ্যতে সিপিএম-তৃণমূল সমঝোতার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। এর আগে তৃণমূলের নেতা কর্মী এবং পার্টি অফিসের উপরে আক্রমণের ঘটনায় বিজেপি-র কড়া নিন্দা করে বিবৃতি দিয়েছে ত্রিপুরা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী। অন্যদিকে বিপ্লব দেব সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে কোমর বেঁধে নেমেছে তৃণমূল। বিজেপি বিরোধী ভোটকে এক জায়গায় আনার উপরে বিশেষ জোর দিচ্ছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে বাংলায় শত্রু হলেও ত্রিপুরায় বিজেপি-কে সরাতে তৃণমূল-সিপিএম হাত মেলাবে কি না, সেই জল্পনা অব্যাহত।

এদিকে আগামী বছরেই ত্রিপুরার বিধানসভা ভোট। বিজেপি-কে হারাতে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই করতে যে তাদের আপত্তি নেই, সেটা কয়েকদিন আগে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের শেষে স্পষ্ট করেছে সিপিএম। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা ধরে রাখতে এবং তৃণমূলের ধর্মনিরপেক্ষ মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলে কোনওরকম আপসে রাজি নন সূর্যকান্ত মিশ্ররা।

আবার ত্রিপুরার ক্ষেত্রেও ধীরে চলো নীতিই নিয়েছেন ইয়েচুরিরা। কয়েক দিন আগেই সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক মন্তব্য করেছেন, ধর্মনিরপেক্ষ দল হিসেবে ত্রিপুরায় আগে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে হবে তৃণমূলকে। তার পরেই আসবে জোট বা সমঝোতার প্রশ্ন। তবে এটাও ঠিক, ত্রিপুরায় তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতার সম্ভাবনা পুরোপুরি খারিজও করে দেননি সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক। বরং নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি কী  দাঁড়ায়, তার জন্য অপেক্ষা করতে চান তাঁরা। এই প্রেক্ষিতে এদিনের ঘটনাপ্রবাহকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। আরও পড়ুন: অভিষেক চাইলে টুসকি বাজিয়ে বিপ্লবের সরকার ফেলে দিতে পারেন: কুণাল