Women’s Reservation Bill: মহিলা সংরক্ষণ বিল: কৃতিত্ব কার? শুরু জোর দড়ি টানাটানি, ভাঙন ধরবে ইন্ডিয়া জোটে?
women's reservation bill: মহিলা সংরক্ষণ বিলের কৃতিত্ব কার, এই নিয়ে শুরু হয়েছে দড়ি টানাটানি। এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কৌশলী অবস্থান নিয়েছে বিজেপি। অন্যদিকে কংগ্রেস শিবিরের দাবি, মহিলা সংরক্ষণ বিল তাদের।
নয়া দিল্লি: চর্চায় মহিলা সংরক্ষণ বিল। সংসদের বিশেষ অধিবেশনের প্রথমদিনই মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশের দাবি জানিয়েছেন কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী। সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর), সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এই বিলকে। সূত্রের খবর, আজই সংসদে মহিলা সংরক্ষণ বিল পেশ করতে পারে সরকার। এদিকে মহিলা সংরক্ষণ বিলের কৃতিত্ব কার, এই নিয়ে শুরু হয়েছে দড়ি টানাটানি। এমনকি, ভাঙন ধরার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে ইন্ডিয়া জোটেও।
এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কৌশলী অবস্থান নিয়েছে বিজেপি। মন্ত্রিসভা সভা অনুমোদন করলেও এই নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না কোনও প্রথম সারির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বা বিজেপির শীর্ষ নেতা। এমনকি, কেন্দ্রের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে এই বিষয়ে কিছু জানানোও হয়নি। তবে, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী প্রহ্লাদ প্যাটেলের মতো নীচু তলার নেতারা, মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরই এই বিল মোদী সরকারের কৃতিত্ব বলে দাবি করা শুরু করেছেন। প্রহ্লাদ প্যাটেল সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, “মহিলা সংরক্ষণ বিলের দাবি পূরণ করার নৈতিক সাহস একমাত্র মোদী সরকারেরই আছে। মন্ত্রিসভার অনুমোদন তাই প্রমাণ করল। নরেন্দ্র মোদীজি এবং মোদী সরকারকে অভিনন্দন।”
বিজেপি নেত্রী খুশবু সুন্দর সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, “ঐতিহাসিক মুহূর্ত! মহিলা সংরক্ষণ বিল অনুমোদন পেল! যেখানে আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মহিলাদের ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করছেন, অন্যরা মহিলাদের টেনে নীচে নামাতে চাইছে। নারী শক্তিই এগিয়ে চলার পথ। মহিলাদের এগোতেই হবে, তারাই আমাদের জাতির মেরুদণ্ড। মহিলাদের কষ্ট একমাত্র দেশে এক সত্যিকারের সন্তানই বোঝে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আবারও সেটা প্রমাণ করলেন। প্রধানমন্ত্রীজিকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আমাদের দেশের মহিলারা সবসময় আপনার কাছে ঋণী থাকবে।” পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও এই সিদ্ধান্তকে ‘যুগান্তকারী’ বলেছেন।
অন্যদিকে কংগ্রেস শিবিরের দাবি, মহিলা সংরক্ষণ বিল তাদের। মনমোহন সিং সরকারের আমলে, ২০১০ সালেই রাজ্যসভায় পাস হয়েছিল বিলটি। এদিন, সংসদে প্রবেশের সময় এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সনিয়া গান্ধী বলেন, “এই নিয়ে বলার কি আছে? এটা আমাদের।” কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেছেন, “আমরা চাই দ্রুত সম্ভব মহিলা সংরক্ষণ বিল আনা হোক এবং পাশ করা হোক। মহিলা সংরক্ষণ বিলের দাবি প্রথম তুলেছিল ইউপিএ সরকার এবং আমাদের নেত্রী সনিয়া গান্ধী। অনেকটা সময় লাগল। কিন্তু, এটা পাশ হলে আমরা খুশি হব।”
তৃণমূল কংগ্রেসের আবার দাবি, পঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত মহিলা আসন সংরক্ষণ বাস্তবায়িত করেছে একমাত্র তারাই। তৃণমূল মুখপাত্র কুনাল ঘোষ দাবি করেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গে মহিলাদের স্বীকৃতি দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তাই আলাদা করে সংরক্ষণ আনার প্রয়োজন হয়নি। দলের বিভিন্ন পদে, পঞ্চায়েত, পুরসভা, বিধানসভা, লোকসভা সদস্যদের মধ্যে তৃণমূলের মহিলা সদস্যের সংখ্যাই সবথেকে বেশি বলে দাবি করেছেন তিনি। কুণাল ঘোষ বলেছেন, “বাকিরা যা এখন ভাবছে, তৃণমূল তা অনেক আগে থেকেই ভেবে রাখে।”
বিআরএস-সহ আরও বেশ কয়েকটি দলের দাবি, মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশের জন্য তারা লাগাতার প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন। বিআরএস নেত্রী কে কবিতা বলেছেন, “আমরা খুশি। আমাদের একমাত্র আশঙ্কা বিলের প্রকৃতি নিয়ে। সরকার খোলাখুলি আলোচনা করছে না। সরকারের এই বিষয়ে স্বচ্ছতা নেই।” শিবসেনা (উদ্ধব) সাংসদ প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদী বলেছেন “বিলটি অনেক আগেই আনা উচিত ছিল। ২০১৪ সালে বিজেপির ইশতেহারেই এটা ছিল, কিন্তু, সাড়ে নয় বছর পর টনক নড়েছে মোদী সরকারের।”
২০১০-এ মনমোহন সরকারের সময় রাজ্যসভায় বিলটি পেশ করা হয়েছিল। কিন্তু, সেই সময় সমাজবাদী পার্টি এবং আরজেডি-র অনগ্রসর শ্রেণীর জন্য সংরক্ষণের দাবি তুলে বিলটিকে আইনে পরিণত হতে দেয়নি। এবার এখনও পর্যন্ত তারা কোনও আপত্তি জানায়নি। তবে ইন্ডিয়া জোটের আরও এক শরিক দল, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার সাংসদ মহুয়া মাজি বলেছেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে এর দাবি জানিয়ে আসছি। এই বিলে তফসিলি জাতি, উপজাতি, এবং ওবিসি দের জন্য উপ-সংরক্ষণ থাকলে ভাল হয়। না-হলে উচ্চবিত্ত মহিলারাই এর সব লাভ পাবে।” এই বিল নিয়ে মতভেদ ইন্ডিয়া জোটেও ভাঙন ধরাতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।