অসুস্থ ছেলের জন্য ৬০ পেরিয়েও চাকরি করতেন, ‘শুভেন্দুকে রুখতে না পেরে’ কাজ হারালেন স্বাস্থ্য ভবনের নিরাপত্তা রক্ষী
Swastha Bhawan: খুব পরিষ্কার করে কথা বলতে পারেন না সৈকত। জড়ানো শব্দেই সৈকতের আর্জি, তাঁর বাবার কাজটা যেন ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
কলকাতা: স্বাস্থ্য ভবনে দলবল নিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিরোধী দলনেতার সেই অভিযান রুখতে পারেননি গেটের দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা রক্ষীরা। অভিযোগ, এরপরই তাঁদের চাকরি থেকে বসিয়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যে এক অসহায় পিতাও ছিলেন। যে বেসরকারি সংস্থার হয়ে তিনি কাজে ঢুকেছিলেন, সেখান থেকে জানানো হয় ‘চাপ আছে, তাই এই সিদ্ধান্ত’। এদিকে বাবার রোজগারে অসুস্থ ছেলের চিকিৎসা চলে। এই দুর্দিনে চাকরি হারিয়ে অথৈ জলে টাকির বাসিন্দা সুশীল দাস। মুখ্যমন্ত্রী এবং বিরোধী দলনেতার কাছে তাঁর একটাই আর্জি, কোনও ভাবে যেন তাঁর জন্য একটি চাকরির সংস্থান করে দেন তাঁরা।
সুশীল দাসের ২৫ বছরের ছেলে সৈকত মানসিক ভারসাম্যহীন। স্নায়ুরোগে আক্রান্ত ছেলের চিকিৎসার খরচ জোগানোর জন্যই ৬৩ বছর বয়সেও স্বাস্থ্যভবনে রক্ষীর কাজ নিয়েছিলেন অসহায় বাবা। টাকি থেকে সল্টলেকের কর্মস্থলে নিয়মিত যাতায়াতও করতেন। কিন্তু ছন্দপতন হল ২৫ জুনের ঘটনায়। যেদিন স্বাস্থ্য ভবনে যান শুভেন্দু অধিকারী। স্বাস্থ্য সচিবকে স্মারকলিপি জমা দিতে যান তিনি। শুভেন্দুর সঙ্গে ছিল প্রতিনিধি দল।
স্বাস্থ্য ভবনে ঢোকার সময় বাধা দিয়েছিল নিরাপত্তা রক্ষীরা। কিন্তু রাজনীতির বলের কাছে সামান্য দ্বাররক্ষীর বল কি কাজ করে? অতীত অন্তত সে নমুনা খুব একটা দেখাতে পারে না। তাই নিরাপত্তা রক্ষীদের ঠেলেই ভিতরে ঢুকে যান শুভেন্দুরা। পৌঁছে যান তিনতলায় সচিবের ঘরে। অভিযোগ, এই ঘটনার জেরেই পরদিন চাকরি চলে যায় সুশীল দাস-সহ চার নিরাপত্তা রক্ষীর।
সুশীল দাস জানান, একসময় বিএসএফ-এর কনস্টেবল ছিলেন। এখন পেনশনেই কোনওক্রমে চলে সংসার। স্ত্রী পঞ্চায়েত সদস্য হওয়ায় তাঁর সাম্মানিকেও সামান্য সাহায্য হয়। কিন্তু ছেলের চিকিৎসার খরচ জোগাতেই এই ৬৩ বছর বয়সেও নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করতে হতো সুশীলবাবুকে। তাঁর প্রশ্ন, তিনি কি একবারও দ্বিতীয় সুযোগ পেতে পারেন না! দলমত নির্বিশেষে তাঁর অসহায় অবস্থা বুঝুন তৃণমূলনেত্রী, বুঝুন বিরোধী দলনেতাও। অন্তত একটা চাকরির ব্যবস্থা যেন করে দেন তাঁরা। এই একটাই আর্জি সুশীলবাবুর।
এ প্রসঙ্গে মানবাধিকার কর্মী রঞ্জিত শূর বলেন, “এটা তো তুঘলকি রাজত্বে চলে! কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নাকি স্বাস্থ্য ভবন? এটা সাধারণ মানুষের যাতায়াতের জন্য উন্মুক্ত একটা দফতর। সেখানে যে কেউ যেতে পারে। আমার মতে ওই ব্যক্তির চাকরি এখনই ফিরিয়ে দেওয়া উচিৎ। তাঁর অসুস্থ ছেলের দায়িত্বও সরকারের নেওয়া উচিৎ। এ ভাবে সরকারের তরফ থেকে একটা পরিবারকে মানসিক উৎপীড়ন করা এটা মানবাধিকার হরণ।”
বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে জানান, “তৃণমূলের আক্রোশের রাজনীতির এটা আর একটা পরিচয়। একটা বয়স্ক নিরাপত্তা কর্মী, তাঁর উপর গায়ের ঝাল মেটাচ্ছেন। এটা খুব ক্ষুদ্র রাজনীতি। মানুষ এগুলো দেখে নিশ্চয়ই মাথা চাপড়াচ্ছেন, এরকম একটা নীতিহীন দলকে ক্ষমতায় এনে।”
যদিও তৃণমূল নেতা তাপস রায়ের দাবি, “আইন যা আছে তা মেনেই সমস্তটা হবে। সরকারি প্রশাসনকে চালাতে গেলে যা যা করতে হয় করতেই হবে। সব ধরনের সরকারি অফিসে যখন তখন মানুষ ঢুকে যেতে পারেন না। তবে আমি এ বিষয়ে না জেনে কিছু বলতে পারব না। যারা দেখছে তাদের হৃদয় রয়েছে এবং তারা তা বুঝবে। খবর যখন হয়েছে স্বাস্থ্য অধিকর্তারাও নিশ্চয় এ বিষয়ে সচেতন। গুরুত্ব দিয়েই দেখছেন বা দেখবেন।” আরও পড়ুন: ‘বাংলার মায়েদের রান্নাঘরে বোমা তৈরি হোক’, জেএমবি জঙ্গিদের কলকাতার ডেরা থেকে উদ্ধার জেহাদি লিফলেট!
খুব পরিষ্কার করে কথা বলতে পারেন না সৈকত। পাঁচ বছর বয়সে ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মাথায় গুরুতর আঘাত লেগেছিল। ২৫ বছর বয়সেও চলছে চিকিৎসা। বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস-এর প্রাক্তন প্রশাসনিক কর্তা শ্যামাপদ গড়াই চিকিৎসা করছেন। জড়ানো শব্দেই সৈকতের আর্জি, তাঁর বাবার কাজটা যেন ফিরিয়ে দেওয়া হয়।