New Woodburn Ward: SSKM-এ ৬৭ কোটির বিরাট বিপ্লব! অসুস্থ হলে কীভাবে থাকবেন রাজার হালে?
SSKM New Woodburn Ward: উডবার্ন নিয়ে বড় ঘোষণা করে দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৈরি হচ্ছে উডবার্ন ২। ঝাঁ চকচকে পরিষেবা পাবেন বেসরকারি হাসপাতালের মতো। মানে এখানে একটি সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া মাত্র ৫,০০০ টাকা, যেখানে অন্য কোথাও একই মানের কেবিনের জন্য প্রায় ১৫,০০০ টাকা খরচ হতে পারে।

মুকুল রায় থেকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অনুব্রত মণ্ডল থেকে মদন মিত্র….. বিরোধীরা কটাক্ষ করে বলে ওখানে নাকি তাঁদের নিত্য যাতায়াত। ঘটা করে নামও দিয়েছিলেন, ‘হলিডে হোম’ বা সেফ হোম। নারদা মামলা থেকে গরু পাচার মামলা, নিয়োগ দুর্নীতি… বিরোধীরা বলে যখনই তোলপাড় চলেছে বাংলায়, যখনই ইডি-সিবিআইকে চাপ বাড়াতে দেখা গিয়েছে তখনই ভিড় বেড়েছে ওই ‘সেফ হোমে’। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কেসে কলকাতা হাইকোর্ট তো একবার বলেই দিয়েছিল, অসুস্থ হলেও ওখানে ভর্তি হওয়া যাবে না। কথা হচ্ছে রাজ্যের সেরা হাসপাতালের (SSKM Hospital) সেরা ওয়ার্ড নিয়ে। বিরোধীদের অভিযোগ, স্ট্রং কানেকশন না থাকলে সেখানে নাকি সাধারণের ঢোকা বড্ড চাপের।
ভোটের আগে বিরাট ঘোষণা মমতার
উডবার্ন (Woodburn) নিয়ে বড় ঘোষণা করে দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৈরি হচ্ছে উডবার্ন ২ (Woodburn 2)। ঝাঁ চকচকে পরিষেবা পাবেন বেসরকারি হাসপাতালের মতো। মানে এখানে একটি সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া মাত্র ৫,০০০ টাকা, যেখানে অন্য কোথাও একই মানের কেবিনের জন্য প্রায় ১৫,০০০ টাকা খরচ হতে পারে। আর আপনার স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকলে তো কথাই নেই। সবটাই ফ্রি-তে।
মঙ্গলবার এসএসকেএম-এর (SSKM) এই অত্যাধুনিক প্রাইভেট কেবিন ভবনের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সাফ কথা, বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোমকে টক্কর দেবে উডবার্ন-২। পরিষেবায় খরচে কোনও তারতম্য থাকছে না। মানে খরচ সকলের জন্যই সমান।
কীভাবে সেজে উঠছে নতুন উডবার্ন?
নবান্নের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ‘উডবার্ন-২’-এর নাম ‘অনন্য’ রাখা হয়েছে। এসএসকেএম-এর সভাগৃহে উডবার্ন-২-এর খরচের কথাও ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। মোট ১৩১টি কেবিন রয়েছে। তার মধ্যে ১০২টি এক শয্যার কেবিন পাঁচ হাজার, আটটি সুট আট হাজার, এছাড়াও, লাইফ-সেভিং সুবিধা- ছ’টি এইচডিইউ ১২ হাজার ও ১৫টি ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট ১৫ হাজার টাকার দৈনিক ভাড়ায় মিলবে। কেবিনের ভাড়ায় চিকিৎসকের ফি-ও যুক্ত থাকবে। এদিকে পুরনো উডবার্ন ব্লকের কেবিনগুলোর ভাড়া ছিল ২০০০, আড়াই হাজার এবং সাড়ে চার হাজার টাকা। ফলে নতুনের ক্ষেত্রে ভাড়া কিছুটা বাড়লেও পরিষেবার ক্ষেত্রও আরও বাড়ছে বলেই জানা যাচ্ছে।
ইকোহার্ট, সিসিইউ-এর ডাক্তার সহ অক্সিজন, ভেন্টিলেশন, নেবুলাইজার, কার্ডিয়াক মনিটর—সব খরচই যুক্ত থাকছে। তবে অস্ত্রোপচার হলে আলাদা OT চার্জ এবং অ্যাটেনডেন্টচার্জ লাগবে। দিতে হবে বাইরে থেকে কেনা ওষুধের দামও। এক্কেবারে কর্পোরেট স্টাইলে বেসরকারি হাসপাতালের মতো পরিষেবা, সেটাই বাস্তবায়িত হতে চলেছে এসএসকেএমে। আর কিছুদিনের মধ্যেই রোগীরা এখানে ভর্তি হতে পারবেন বলে জানা যাচ্ছে।
উডবার্ন টু তৈরি করতে খরচ হয়েছে ৬৭ কোটি (67 Crore) টাকা। এক ছাতার তলাতেই থাকছে প্যাথলজি ল্যাব, এক্স রে, USG, রেডিওলজি-সহ বিভিন্ন সুবিধা। তবে সিটি স্ক্যান ও MRI-এর সুবিধা পাওয়া যাবে নতুন বিল্ডিংয়ের উল্টোদিকে মূল উডবার্ন ব্লকের একতলায়।
কীভাবে ভর্তি হওয়া যাবে?
তবে চাইলেই যে উডবার্নে ভর্তি হওয়া যায় এমনটা নয়। কোনও রোগীকে ওপিডিতে দেখানোর পর কোনও চিকিৎসক যদি মনে করেন তাঁকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে, বা অপারেশনের প্রয়োজন রয়েছে তখন তিনি অ্যাডমিশনের কথা বলেন। সেই মতো প্রেসক্রিপশনে লিখেও দেন। ওই সময় কোনও রোগী চাইলে চিকিৎসককে জানাতে পারেন তিনি পেয়িং কেবিন নিতে চাই। চিকিৎসক সে কথা উল্লেখ করে দেন প্রেসক্রিপশনে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তা দেখার জন্য বলেন। এরপর তা সুপারের অফিসে যায়। সেখান থেকে গ্রিন সিগন্যাল পাওয়ার পর উডবার্নের দায়িত্বে যাঁরা রয়েছেন তাঁরাই ঠিক করেন ওই রোগী উডবার্নে বেড পাবেন কিনা।
তবে বরবারই উডবার্ন জনসাধারণের জন্য খোলা। কিন্তু প্রায়শই অভিযোগ উঠেছে সাধারণের প্রবেশ অবাধ হলেও হেভিওয়েট বা হেভি কানেকশন ছাড়া এখানে ঢোকা নাকি মুশকিল! তা নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। অনেক সমালোচক প্রশ্ন তুলেছেন …যখন সাধারণ মানুষ সরকারি হাসপাতালে একটা বেড পাওয়ার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেন, তখন ভিআইপিরা কীভাবে এত সহজে সব সুবিধা পেয়ে যান? যদিও এবার ভেদাভেদ মোছার কথা বলা হচ্ছে। সাধারণের জন্য নতুন মোড়কে ‘অনন্য’ মাত্রায় সাধারণ হয়ে উঠছে উডবার্ন। তাহলে কী এবার সহজে পরিষেবা পাবে সাধারণ মানুষ? উত্তর দেবে সময়।
