Baghajatin: প্রোমোটার তলে তলে চেলে রাখেন এক চাল, ঘুণাক্ষরেও টের পাননি আবাসিকরা! সমস্ত পুঁজি দিয়ে কেনা ফ্ল্যাট পড়ল ভেঙে, আর FIR হল আবাসিকদের বিরুদ্ধেই
Baghajatin: প্রোমোটার এরপর 'নায়াগ্রা কনস্ট্রাকশন' বলে একটি সংস্থাকে নিয়ে আসেন। এই সংস্থা দিয়েই কাজ করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তার মাঝে প্রোমোটার কথা বলেছিলেন হরিয়ানার আরও একটি সংস্থার সঙ্গে।
কলকাতা: বাঘাযতীনে মাত্র ৮ থেকে ১০ বছরের পুরনো একটি আবাসন ভেঙে পড়ার ঘটনা গোটা শহরকে নাড়িয়ে দিয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে ওই আবাসন। পাশের আবাসনটিও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এত গুলো টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কেনার পরও আজ নিঃস্ব ৬টি পরিবার। কিন্তু কীভাবে ভেড়ে পড়ল ওই আবাসন? প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, জলাশয় বুঝিয়ে ওই আবাসনটি তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু তা সঠিক উপায়ে না করাতে চিড় ধরছিল আবাসনে।
তাতে আবাসনটি লিফটিং-য়ের চেষ্টা করছিলেন প্রোমোটার। এমনকি এক্ষেত্রে কলকাতা পৌরসভার অনুমতিও নেওয়া হয়নি। তিনি যে পৌরসভার অনুমতি নেননি, সেটাও জানতেন না আবাসিকরা। গোটা বিষয়টি দেখে নিচ্ছেন বলে আশ্বস্ত করেছিলেন। আর আবাসন পর থেকে পলাতক প্রোমোটার। উল্টে এফআইআর দায়ের হল ফ্ল্যাটেরই আবাসিকদের বিরুদ্ধে।
জানা গিয়েছে, ২০১২ সালে এই আবাসন তৈরি হয়। মোট ছয়টি পরিবার ফ্ল্যাট কেনেন এই আবাসনে। দুটি ফ্ল্যাট ফাঁকা ছিল এবং সেই দুটি প্রোমোটার সুভাষ রায় নিজের নামে রেখেছিল।
এই আবাসনেরই একটি ফ্ল্যাটের মালিক অভিজিৎ বক্সি। ২০১৪ সালে তিনি এই আবাসনে ফ্ল্যাট কিনে আসেন। তাঁর দাবি, ফ্ল্যাট কিনে আসার ঠিক দুই বছর পরেই দেখা যায়, আবাসনের দক্ষিণ দিক বেঁকে হেলে গিয়েছে।
এরপরই তারা বিষয়টি এলাকার আবাসনের প্রোমোটার সুভাষ রায়কে বিষয়টি জানান। প্রোমোটার সুভাষ তখন সিদ্ধান্ত নেন, এই আবাসনটি লিফটিং করাবেন তিনি। প্রোমোটার বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করেন, আবাসনটি লিফটিং করালেই সোজা হয়ে যাবে। তাঁদের ফ্ল্যাট ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেওয়ার কথা বলেন তিনি। সেই মতো পুজোর আগেই ওই ৬টি পরিবার পাশেই ঘর ভাড়া নিয়ে থাকা শুরু করেছিলেন।
আবাসিকদের দাবি, এরই মধ্যে লিফটিংয়ের জন্য প্রোমোটার তাঁদের কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা করে দাবি করেন। ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁরা আর কোনও টাকা দিতে পারবেন না।এই দাবি নিয়ে টানাটানিতেও বেশ কিছুদিন কেটে যায়।
আবাসিকরা জানান, প্রোমোটার এরপর ‘নায়াগ্রা কনস্ট্রাকশন’ বলে একটি সংস্থাকে নিয়ে আসেন। এই সংস্থা দিয়েই কাজ করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তার মাঝে প্রোমোটার কথা বলেছিলেন হরিয়ানার আরও একটি সংস্থার সঙ্গে।
প্রোমোটার সুভাষ রায় ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের জানান, এই লিফটিং করা এবং আবাসন মেরামত করার যাবতীয় আর্থিক ব্যবহার তিনি নিজেই গ্রহণ করবে।কিন্তু আবাসনের কোন ক্ষতি হলে সেই দায় সে একা নেবেন না।
এত টাকা খরচ করে অভিজিৎ বক্সী বা অন্যান্য পাঁচটি পরিবার এসেছে। তাই বাধ্য হয়েই যাবতীয় দায়-দায়িত্ব নিয়ে চুক্তিপত্রের সই করেন।
২০২০-২১ সালে বাড়িতে এই কাজ শুরু করার ব্যাপারে যাবতীয় সিদ্ধান্ত হয়ে যায়।২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে বাড়ির সব কয়টি পরিবার খালি করে দেওয়া হয়। ওই বাড়ির সবকটি পরিবারকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়। মাস দুয়েক আগে লিফটিংয়ের কাজ শুরু হয়। কিন্তু যে পদ্ধতিতে কাজ হবে বলে বাড়ির লোকজনকে জানানো হয়েছিল, সে ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছিলেন আবাসনের বাসিন্দারা।
কিন্তু নাছোড়বান্দা সুভাষ রায় নিজের মতো করেই যাবতীয় কাজ শুরু করে দেন এখন ভেঙে পড়ল আবাসন। কিন্তু চুক্তিপত্র অনুযায়ী, তার দায় তো নেবেন না প্রোমোটার! ঘটনার পর পলাতক তিনি। ইতিমধ্যেই কলকাতা পৌরসভার তরফ থেকে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। উল্টে আবাসিকদের বিরুদ্ধেই নেতাজিনগর থানায় দায়ের হয়েছে এফআইআর।
আবাসিকরা জানতেই না লিফটিংয়ের কাজের জন্য পৌরসভার অনুমতি নেননি প্রোমোটার। প্রোমোটারই তাঁদের সবটা দেখে নেওয়ার আশ্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু তলে তলে যে এই প্যাঁচ চেলে রেখেছিলেন প্রমোটার, তা ঘুনাক্ষরেও টের পাননি আবাসিকরা। উল্টে তাই আবাসিকদের বিরুদ্ধে নেতাজিনগর থানায় দায়ের হয়েছে এফআইআর। একে ঘর ভেঙেছে, সমস্ত পুঁজি হারিয়েছেন, উল্টে আবার আইনি লড়াই। আবাসনের এক বাসিন্দা শিউলি বক্সী বলেন, “প্রোমোটার শুধু আমাদের বলেছিল, তোমাদের কিছু করতে হবে না। আমি দেখে নেব। আমাদের আইডিয়াও ছিল না, যে পৌরসভাকে জানাতে হবে! আমাদের নলেজে এটা তো প্রথম। লিফটিংয়ের জন্য টাকা নেননি প্রোমোটার, পুরোটাই নিজে দিচ্ছে।”
এ প্রসঙ্গে ফ্ল্যাটের এক আবাসিক বলেন, “আমরা যখন জানতে পেরেছি, আমরা যাঁরা ফ্ল্যাট টাকা খরচা করে কিনেছি, তাঁদের বিরুদ্ধেই নাকি থানায় এফআইআর দায়ের হয়েছে। আমরাও আইনি পথে হাঁটব। আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলব। প্রতারণা করা হয়েছে।” এখন সব হারিয়ে নিঃস্ব তাঁরা।