Chief Secretary: নির্বাচন কমিশনের তলব, বুধ সকালেই দিল্লি উড়ে যাচ্ছেন মুখ্যসচিব পন্থ
Chief Secretary: ওই চিঠিতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সময় বেঁধে দেয় কমিশন। সোমবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত সময় দেওয়া হয় রাজ্যকে। রাজ্যের তরফে এক অফিসার ও ডেটা এন্ট্রি অপারেটরকে নির্বাচন সংক্রান্ত প্রক্রিয়া থেকে সরানো হয়। বাকি তিনজনের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। রাজ্যের তরফে কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, এটা প্রাথমিক পদক্ষেপ। রাজ্যের ব্যাখ্যা হল, জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয়।

কলকাতা: ৪ অফিসারকে সাসপেন্ডের নির্দেশ না মানায় বাংলার মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে তলব করেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। বুধবার বিকেল ৫টায় দিল্লিতে কমিশনের দফতরে ডাকা হয়েছে। নবান্ন সূত্রে খবর, দিল্লি যাচ্ছেন মুখ্যসচিব। বুধবার সকালে দিল্লি রওনা দেবেন তিনি। কমিশনের দফতরে নির্দিষ্ট সময়েই উপস্থিত হবেন।
রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের এখনও ৮-৯ মাস বাকি। তার আগেই নবান্নের সঙ্গে কমিশনের সংঘাত ক্রমশ বাড়ছে। ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্তির ক্ষেত্রে অনিয়মের জেরে রাজ্যের চার সরকারি আধিকারিককে সাসপেন্ড করার কথা বলে গত ৫ অগস্ট মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়েছিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। চার অফিসার ও এক ডেটা এন্ট্রি অপারেটরের বিরুদ্ধে এফআইআরেরও সুপারিশ করে। কিন্তু, রাজ্যের তরফে এই নিয়ে কোনও জবাব না পেয়ে ফের চিঠি দেয় কমিশন।
ওই চিঠিতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সময় বেঁধে দেয় কমিশন। সোমবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত সময় দেওয়া হয় রাজ্যকে। রাজ্যের তরফে এক অফিসার ও ডেটা এন্ট্রি অপারেটরকে নির্বাচন সংক্রান্ত প্রক্রিয়া থেকে সরানো হয়। বাকি তিনজনের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। রাজ্যের তরফে কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, এটা প্রাথমিক পদক্ষেপ। রাজ্যের ব্যাখ্যা হল, জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয়। তার পাশাপাশি থাকে ইলেকটোরাল রোল সংক্রান্ত কাজ। এই অবস্থায় বিস্তারিত অনুসন্ধান ছাড়া অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে অন্যদের উপর প্রভাব পড়তে পারে।
রাজ্যের এই চিঠি পাওয়ার পরই মুখ্যসচিবকে বুধবার বিকেল ৫টায় দিল্লিতে কমিশনের দফতরে ডেকে পাঠানো হয়। জানা গিয়েছে, কমিশনের তলবের পরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যসচিব। তারপরই ঠিক হয়, কমিশনের দফতরে যাবেন মনোজ পন্থ। বুধবার সকালেই তিনি দিল্লি রওনা দেবেন।
নির্বাচন কমিশনের এই পদক্ষেপ নিয়ে তৃণমূল নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, “সংবিধান যাঁরা তৈরি করেছিলেন, তাঁরা এই বিষয়টা মাথায় রেখেই বলেছিলেন, নির্বাচনকালীন সময় ছাড়া নির্বাচন কমিশনের কোনও সরকারের উপর কোনও কর্তৃত্ব নেই। কিন্তু, এখন দেখছি, এরা সমস্ত রীতি নীতি লঙ্ঘন করে উড়েপড়ে লেগেছে যে বিজেপির নির্দেশে কাজ করব, বিজেপির স্বার্থে কাজ করব। যেখানে ডবল ইঞ্জিন সরকার নেই, সেখানে ক্রমাগত হয়রানি করব। এই ব্যবস্থা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। ভারতের রাজনৈতিক দলগুলি ও জনগণ এটা মেনে নেবে না।”
রাজ্যের শাসকদলকে তোপ দেগে বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, “আপনি সাসপেন্ড করলেন না। আপনিই তদন্ত কমিটি গঠন করলেন। এই ইআরও-রা যে লগইন-পাসওয়ার্ড শেয়ার করে দুর্নীতি করেছেন, এ তো আপনারা করিয়েছেন। আপনি যাঁদের দিয়ে এ কাজ করিয়েছেন, তাঁদের সাসপেন্ড করলে চাপে পড়ে যাবেন। নির্বাচন কমিশনের কাছে আমাদের আর্জি, কড়া শাস্তি দেওয়া হোক।”
মুখ্যসচিবকে নির্বাচন কমিশনের তলব নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত বলেন, “নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে রাজ্য সরকার যেহেতু তাদের আধিকারিকদের বিরুদ্ধে কোনও এফআইআর বা সাসপেন্ডের নির্দেশ কার্যকর করেনি, তাই নির্বাচন কমিশনের সেই সাংবিধানিক এবং আইনি ক্ষমতা রয়েছে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে এফআইআর করার। সে ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের ওই আধিকারিকদের বিরুদ্ধে সুয়োমটো এফআইআর করতে পারে নির্বাচন কমিশন।”
এরপরই হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের তলবে রাজ্যের মুখ্যসচিব দিল্লি যাচ্ছেন। যেখানে গিয়ে দু’পক্ষ আলোচনায় বসবেন। আলোচনায় যদি সমাধান সূত্র বের হয়, তাহলে ভাল। নইলে নির্বাচন কমিশনের সেই সাংবিধানিক ক্ষমতা রয়েছে রাষ্ট্রপতিকে সরাসরি রাজ্যের বিরুদ্ধে নিজেদের বক্তব্য পেশ করার। এমনকি, নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রপতিকে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতেও আবেদন করতে পারে। তবে আরও একটি বিষয়, সুপ্রিম কোর্টে দু’পক্ষের যাওয়ার পথ খোলা থাকছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত যা বলবে, তা মানতে বাধ্য থাকবে দু’পক্ষই।”

