CBI Power Explained: পুলিশকে কি গ্রেফতার করতে পারে CBI? কতটা ক্ষমতা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে?
CBI Investigation: কোনও মামলার তদন্তে সিবিআই যদি কোনও সাংসদ বা বিধায়ককে গ্রেফতার করে, তবে নিয়ম অনুযায়ী তাদের উপরাষ্ট্রপতি বা বিধানসভার অধ্যক্ষের অনুমতি নিতে হয়। একইভাবে সরকারি আমলা বা পুলিশ অফিসারকে গ্রেফতারির ক্ষেত্রে সিবিআইয়ের রাজ্যের অনুমতি নেওয়া উচিত। তবে আরজি কর কাণ্ডের তদন্তে টালা থানার প্রাক্তন ওসি-কে গ্রেফতারির ক্ষেত্রে কলকাতা পুলিশ বা রাজ্য সরকারের অনুমতি নেয়নি সিবিআই।
এক মাস কেটে গিয়েছে, এখনও সুবিচারের আশায় তিলোত্তমা। ঘটনার তদন্তভার ইতিমধ্যেই কলকাতা পুলিশের হাত থেকে নিয়ে সিবিআই-র হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ৯ অগস্টের ওই ঘটনায় পুলিশ গ্রেফতার করেছিল এক সিভিক ভলেন্টিয়ারকে। তিলোত্তমার ধর্ষণ-খুনে মূল অভিযুক্ত এই সিভিক ভলেন্টিয়ার, এমনটাই অনুমান। এর মধ্যেই আরজি কর কাণ্ডে বড় মোড়। চিকিৎসক-পড়ুয়াকে ধর্ষণ করে খুনের মামলায় সিবিআইয়ের হাতে হলেন গ্রেফতার টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডল। গ্রেফতার হয়েছেন আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ডঃ সন্দীপ ঘোষও। সিবিআই সূত্রে খবর, তথ্য প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা এবং তদন্তকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগেই গ্রেফতার করা হয়েছে আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ও টালা থানার প্রাক্তন ওসি-কে। অভিজিৎ মণ্ডলের এই গ্রেফতারির পরই অনেকের মনে প্রশ্ন, রাজ্যের অধীনে থাকা পুলিশকে কি গ্রেফতার করতে পারে সিবিআই?
উত্তরটা হল হ্যাঁ। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা কোনও তদন্তের স্বার্থে সরকারি পদাধিকারীদেরও গ্রেফতার করতে পারে। তবে সিবিআই চাইলেই কোনও মামলায় হস্তক্ষেপ বা গ্রেফতারি করতে পারে না। তাদের একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনেই কাজ করতে হয়। বিশেষ কয়েকটি ক্ষেত্রেই পুলিশের হাত থেকে সিবিআইয়ের হাতে তদন্তভার তুলে দেওয়া হতে পারে। কী কী সেই পদ্ধতি?
মূলত তিনটি পথে পুলিশের হাত থেকে কোনও মামলার তদন্ত গ্রহণ করে সিবিআই।
প্রথমত, যদি রাজ্য সরকার নিজে থেকেই সিবিআই তদন্তের সম্মতি দেয়। কোনও বড় ঘটনা, যার প্রভাব বৃহত্তর ক্ষেত্রে পড়তে পারে বা স্পর্শকাতর বিষয়, সেক্ষেত্রে রাজ্য চাইলে সিবিআই-র হাতে তদন্তভার তুলে দিতে পারে। এক্ষেত্রে রাজ্যকে কেন্দ্রের কাছে আবেদন জানাতে হয়। কেন্দ্র এরপরই সিবিআই-র হাতে তদন্তভার তুলে দিতে পারে। আরজি কর কাণ্ডেও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিবিআইয়ের হাতে তদন্তভার তুলে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।
দ্বিতীয়, যদি সুপ্রিম কোর্ট সরাসরি সিবিআই-কে তদন্তভার দেয়।
তৃতীয়, যদি কোনও রাজ্যের হাইকোর্ট মামলার তদন্ত সিবিআই-র হাতে তুলে দেয়। সুপ্রিম কোর্ট বা হাইকোর্ট যদি সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়, সেক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের অনুমতি বা সম্মতির প্রয়োজন পড়ে না বলেই জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অশোক ধামিজা।
রাজ্য সম্মতি না দিলে?
সিবিআই কেন্দ্রীয় সংস্থা। তবে কোনও রাজ্যে গিয়ে অপরাধের তদন্তের জন্যে সিবিআই-কে সেই রাজ্যের সম্মতি নিতে হয়। দিল্লি স্পেশাল পুলিশ এসট্যাবলিসমেন্ট আইন, ১৯৪৬-র ৬ ধারা অনুযায়ী সিবিআই-কে এই সম্মতি নিতে হয়। এটিকে জেনারেল কনসেন্ট বলা হয়। যদি কোনও রাজ্য সম্মতি না দেয়, তবে সরাসরি তদন্তে হস্তক্ষেপ করতে পারে না সিবিআই।
পশ্চিমবঙ্গ, পঞ্জাব, তেলঙ্গানা, তামিলনাড়ু, ঝাড়খণ্ড, কেরল, রাজস্থান, মেঘালয় সহ ১০টি রাজ্য সিবিআই তদন্তে জেনারেল কনসেন্ট প্রত্যাহার করেছে। গত বছরই লোকসভায় এই তথ্য জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। সেই সময় কেন্দ্রের তরফে এও বলা হয়েছিল যে কিছু রাজ্য সরকার জেনারেল কনসেন্ট বা সম্মতি প্রত্য়াহার করে নেওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ তদন্তে সিবিআইয়ের কাজ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।
তবে এই জেনারেল কনসেন্টের ক্ষেত্রেও বিশেষ নিয়ম রয়েছে। নতুন কোনও মামলার তদন্তের ক্ষেত্রেই সিবিআই-কে রাজ্যের কনসেন্ট নিতে হয়। পুরনো কোনও মামলা, যা ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তের অধীনে রয়েছে, সে ক্ষেত্রে রাজ্য কনসেন্ট বা সম্মতি না দিলেও, তদন্ত করতে পারে সিবিআই। ১৯৯৪ সালে কাজি লেনদুপ দোরজি বনাম সিবিআই মামলায় এই পর্যবেক্ষণ রেখেছিল সুপ্রিম কোর্ট।
এছাড়া রাজ্যের বাইরে যদি কোনও মামলার এফআইআর দায়ের হয়, তবে সেক্ষেত্রেও রাজ্যের সম্মতি ছাড়া তদন্ত করতে পারে সিবিআই।
গ্রেফতারির ক্ষেত্রে নিয়ম-
কোনও মামলার তদন্তে সিবিআই যদি কোনও সাংসদ বা বিধায়ককে গ্রেফতার করে, তবে নিয়ম অনুযায়ী তাদের উপরাষ্ট্রপতি বা বিধানসভার অধ্যক্ষের অনুমতি নিতে হয়। একইভাবে সরকারি আমলা বা পুলিশ অফিসারকে গ্রেফতারির ক্ষেত্রে সিবিআইয়ের রাজ্যের অনুমতি নেওয়া উচিত। তবে আরজি কর কাণ্ডের তদন্তে টালা থানার প্রাক্তন ওসি-কে গ্রেফতারির ক্ষেত্রে কলকাতা পুলিশ বা রাজ্য সরকারের অনুমতি নেয়নি সিবিআই। এমনটাই জানা গিয়েছে বিশ্বস্ত সূত্রে।
সিবিআই-কে আটক করেছিল কলকাতা পুলিশ!
পুলিশের তুলনায় সিবিআইয়ের ক্ষমতা অনেক বেশি হলেও, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেই এমন ব্যতিক্রমী ঘটনা রয়েছে, যেখানে সিবিআই আধিকারিকদের আটক করেছিল কলকাতা পুলিশ। রোজভ্যালি ও সারদা মামলার তদন্তে ২০১৯ সালে সিবিআইয়ের টিম যখন তৎকালীন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাড়িতে হাজির হয়েছিল, তখন সিবিআই আধিকারিকদেরই আটক করে পুলিশ। ২ ঘণ্টা পর যদিও তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।
রাজ্যের এই পদক্ষেপ সম্পূর্ণ অবৈধ ছিল কারণ সুপ্রিম কোর্ট ২০১৪ সালে সারদা মামলার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিয়েছিল। সেক্ষেত্রে রাজ্যের সম্মতি না থাকলেও, তদন্তে অবাধ স্বাধীনতা এবং শক্তির সম্পূর্ণ প্রয়োগের অধিকার ছিল সিবিআইয়ের।