Alliance: সঙ্গী-জট কাটছে না, কেন বারবার জোটসঙ্গী ‘খুঁজতে’ হয় সিপিএমকে?

Alliance: পাঁচ জেলার ছয় আসনে উপনির্বাচন। একুশের নির্বাচনে এই ৬টি আসনের মধ্যে দুটি আসনে লড়েছিল সিপিএম। সেখান থেকে তারা একটি আসন এবার ছাড়ল সিপিআই(এমএল) লিবারেশনকে। একটি আসনেই লড়ছে সিপিএম। চব্বিশের নির্বাচনে জোট না হলেও উপনির্বাচনে হাড়োয়ায় আইএসএফকে সমর্থন করছে বামফ্রন্ট। কেন বারবার জোটসঙ্গী বদল? পড়ুন টিভি৯ বাংলার বিশেষ প্রতিবেদন।

Alliance: সঙ্গী-জট কাটছে না, কেন বারবার জোটসঙ্গী 'খুঁজতে' হয় সিপিএমকে?
কী বলছে সিপিএম?
Follow Us:
| Updated on: Oct 26, 2024 | 10:20 PM

একুশে সঙ্গে কংগ্রেস ও আইএসএফ। চব্বিশে সঙ্গে কংগ্রেস। ছিল না আইএসএফ। আবার আসন্ন ৬ আসনে উপনির্বাচনে সঙ্গে নেই কংগ্রেস। রয়েছে আইএসএফ। আবার উপনির্বাচনে অতি বাম সিপিআই(এমএল) লিবারেশন সঙ্গে রয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, কেন বারবার জোটসঙ্গী খোঁজার চেষ্টা করে চলেছে সিপিএম? পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল-বিজেপি বিরোধিতায় কি একা লড়ার শক্তি হারিয়েছে সিপিএম? কেন বারবার তাদের জোটে-জট দেখা দিচ্ছে?

২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতা হারানোর পর থেকে বাংলায় বামেদের আসন ক্রমশ কমেছে। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে আইএসএফ ও কংগ্রেসের হাত ধরেছিল বামফ্রন্ট। কিন্তু, এই জোট করেও বিধানসভায় একটাও আসন পায়নি সিপিএম। আবার চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে আইএসএফ বাম-কংগ্রেস জোটে শামিল হয়নি। লোকসভা নির্বাচনেও শূন্য বামেরা।

চব্বিশের উপনির্বাচনে নতুন সঙ্গী সিপিএমের-

এই খবরটিও পড়ুন

রাজ্যের পাঁচ জেলার ৬টি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন ১৩ নভেম্বর। উপনির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের জোট হবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা চলছিল। কারণ, কিছুদিন আগেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বদল হয়েছে। অধীর চৌধুরীর জায়গায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হয়েছেন শুভঙ্কর সরকার। অধীর চৌধুরী ঘোর তৃণমূল কংগ্রেস বিরোধী হিসেবে পরিচিত। সেখানে নতুন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি কী করবেন, তা নিয়ে জল্পনা বাড়ছিল। শেষপর্যন্ত বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট হয়নি।

আর তার জায়গায় সিপিএম জোট করল অতি বাম সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের সঙ্গে। একইসঙ্গে চব্বিশের নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোটে সামিল না হওয়া আইএসএফ-ও কার্যত ফিরে এল উপনির্বাচনের জোটে। যে ৬টি আসনে উপনির্বাচন হচ্ছে, তার একটিতে লড়ছে সিপিএম। বাকি পাঁচটি আসনে লড়ছে তাদের জোটের পাঁচটি দল।

রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, একুশের নির্বাচনের দিকে নজর দিলে দেখা যাবে, এই ৬টি আসনের মধ্যে দুটি আসনে লড়েছিল সিপিএম। সেখান থেকে তারা একটি আসন এবার ছাড়ল সিপিআই(এমএল) লিবারেশনকে।

একুশের নির্বাচন ও উপনির্বাচনে জোটের কোন দল কোথায় প্রার্থী দিয়েছে-

একুশের বিধানসভা নির্বাচনে হাড়োয়ার আসনটি আইএসএফ-কে ছেড়েছিলেব বিমান বসুরা। এবং প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন আইএসএফ প্রার্থী। এবারও হাড়োয়ায় আইএসএফ-কে সমর্থন জানিয়েছে বামফ্রন্ট। একুশের নির্বাচনে নৈহাটি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল সিপিএম। সেই আসনটি এবার তারা ছাড়ল সিপিআই(এম-এল) লিবারেশনকে।

মাদারিহাট আসনে ২০২১ সালে প্রার্থী দিয়েছিল বামফ্রন্টের শরিক দল আরএসপি। উপনির্বাচনেও এই আসনে লড়ছে আরএসপি। সিতাই বিধানসভা আসনটি একুশের নির্বাচনে কংগ্রেসকে ছেড়েছিল বামফ্রন্ট। এবার তাদের সঙ্গে জোট হয়নি। উপনির্বাচনে এই আসনে প্রার্থী দিয়েছে ফরওয়ার্ড ব্লক। মেদিনীপুর বিধানসভা আসনে একুশের নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছিল সিপিআই। উপনির্বাচনেও তারাই এখানে প্রার্থী দিচ্ছে। আর একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বাঁকুড়ার তালডাংরা আসনে প্রার্থী দিয়েছিল সিপিএম। বামফ্রন্টের সবচেয়ে বড় শরিক এবারও এই আসনে প্রার্থী দিয়েছে। উপনির্বাচনে এই একটি আসনেই প্রার্থী দিয়েছে সিপিএম।

বারবার কেন সিপিএম জোটসঙ্গী খোঁজার চেষ্টা করে চলেছে? কী বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা?

সিপিএমের এই জোটসঙ্গী খোঁজার চেষ্টার মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু দেখছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুভময় মৈত্র। তাঁর মতে, এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুটি দিকই রয়েছে। তাঁর কথায়, “জোটের চেষ্টা রাজনীতিতে অবাক করার মতো বিষয় নয়। বৃহত্তর বাম ঐক্যের চেষ্টা করে চলেছে সিপিএম। কিছুটা পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে ইন্ডিয়া জোটের চেষ্টা। বৃহত্তর তৃতীয় পক্ষের চেষ্টা। এটা ইতিবাচক।”

আর নেতিবাচক? রাজনৈতিক এই বিশ্লেষক বলেন, “নেগেটিভ বলতে, এই রাজ্যে সিপিএম ছাড়া জোটের অন্য শরিকদের ভোট প্রায় নেই। ফলে সিপিএম সমর্থকরা আশাহত হচ্ছেন। তাঁদের বিভিন্ন জায়গায় অন্য দলকে ভোট দিতে হচ্ছে।” একইসঙ্গে তিনি বলেন, “তৃণমূল-বিজেপি সেটিংয়ের অভিযোগ উঠলেও তৃণমূল বিরোধী মানুষ বিজেপিকে ভোট দিচ্ছেন। আবার বিজেপি বিরোধী মানুষ তৃণমূলকে ভোট দিচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে বৃহত্তর বাম ঐক্যের পরীক্ষা করছে সিপিএম। তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে একটা তৃতীয় ফ্রন্ট।” উপনির্বাচনে সিপিএমের জোট নিয়ে তিনি বলেন, “বাম গণতান্ত্রিক জোটের চেষ্টা তো রয়েছে। এর সঙ্গে এবার যোগ হয়েছে অতি বাম দল।”

কী বলছে তৃণমূল?

বামফ্রন্ট উপনির্বাচনের প্রার্থীতালিকা প্রকাশের পর তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, “সিপিএমের প্রার্থীতালিকা। বাম-অতি বাম আঁতাত প্রমাণ হয়েই গেল।” সিপিএমের জোটসঙ্গী নিয়ে খোঁচা দিয়ে তিনি বলেন, “সিপিএম কোনও কালেই একা লড়েনি। ৩৪ বছর ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্টের একাধিক দলের শক্তির উপর। তারপর কখনও কংগ্রেস, কখনও আইএসএফ-কে ধরেছে।”

সিপিএমের সঙ্গে উপনির্বাচনে জোট না হওয়ার কারণ নিয়ে বিশেষ কিছু বলতে চাইলেন না প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার। কিন্তু, তৃণমূলের বিরোধিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই উপনির্বাচনে কংগ্রেস ৬টা আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। সারা দেশে যে ইন্ডিয়া জোট তৈরি হয়েছে, সেই জোটে এই রাজ্যের দুটি দল রয়েছে। আমরা ইন্ডিয়া জোটের শরিকদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলতে চাই। কিন্তু, কোনও শরিক অন্যায় করলে মানুষ যদি তার প্রতিবাদ করে, তবে কংগ্রেস সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতিবাদে সামিল হবে।”

কেন এই বারবার জোটসঙ্গী খোঁজার চেষ্টা? কী বলছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম?

উপনির্বাচনে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন ও আইএসএফকে আসন ছাড়ার বিষয়টি ঠিক জোট বলতে রাজি নন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। তিনি বলেন, “এটা জোট নয়। জোট হয়েছে কে বলল? এটা আসন রফা। এটা উপনির্বাচন। উপনির্বাচন আর সাধারণ নির্বাচন সব সময় আলাদা। সাধারণ নির্বাচনে যা আছে তাই থাকবে। উপনির্বাচনে আমরা একটি আসনে লিবারেশন ও একটি আসনে ISF-কে সমর্থন করেছি। ওরাও বাকি সব আসনে আমাদের সমর্থন করেছে।”

উপনির্বাচনে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনকে আসন ছাড়াকে জোট বলে মানতে রাজি নন সেলিম। কিন্তু, নৈহাটির সিপিএম সমর্থকদের লিবারেশনকে ভোট দিতে হবে। বারবার এভাবে অন্য দলকে ভোট দেওয়ায় কি বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে না কর্মী-সমর্থকদের মনে? প্রশ্ন উঠছে। সেই প্রশ্ন রেখেই বাম-বিজেপির বিরোধিতায় ভবিষ্যতে ফের নতুন কোনও জোটসঙ্গীর সঙ্গে সিপিএম হাত মেলায় কি না, সেটাই দেখার।