EXPLAINED: নির্ভয়াকাণ্ড ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’, ধারা সাজানোর মধ্যেই কি লুকিয়ে থাকে উত্তর?

Nirbhaya Case: ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বরের সেই নৃশংস ঘটনার কথা ভাবলে এখনও শিউরে ওঠেন অনেকে। শীতের রাত। নির্ভয়া ও তাঁর এক বন্ধু সিনেমা দেখে বাড়ি ফিরছিলেন। তারপর সেই নৃশংস ঘটনা। ৭ বছর ৪ মাস পর ৪ দোষী সাব্যস্তর ফাঁসি। বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা। একাধিক কঠোর ধারা প্রয়োগ। ধারার উপরই কি নির্ভর করে সাজা? পড়ুন টিভি৯ বাংলার বিশেষ প্রতিবেদন...

EXPLAINED: নির্ভয়াকাণ্ড 'বিরলের মধ্যে বিরলতম', ধারা সাজানোর মধ্যেই কি লুকিয়ে থাকে উত্তর?
পড়ুন টিভি৯ বাংলার বিশেষ প্রতিবেদন
Follow Us:
| Updated on: Jan 20, 2025 | 11:01 PM

নয়াদিল্লি: এক যুগ আগের এক নৃশংস ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা দেশকে। নৃশংসতার বর্ণনা শুনে বুক কেঁপে উঠেছিল সাধারণ মানুষের। রাস্তায় নেমেছিলেন। ২০১২ সালের নির্ভয়াকাণ্ডকে বিরলের মধ্যে বিরলতম বলেছিল আদালত। ফাঁসির সাজা হয় ৪ দোষীসাব্যস্তর। এক যুগ পর ফের রাস্তায় সাধারণ মানুষ। কলকাতার আরজি করে এক জুনিয়র ডাক্তারকে ধর্ষণ করে খুন। নৃশংস এই ঘটনার ১৬৪ দিন পর সাজা ঘোষণা করেছে শিয়ালদহ আদালত। তবে বিচারক এই ঘটনাকে বিরলের মধ্যে বিরলতম বলেননি। দোষীসাব্যস্তকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। তারপরই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, কেন এই নৃশংস ঘটনা বিরলের মধ্যে বিরলতম নয়। এই পরিস্থিতিতে ফিরে দেখা যাক, ২০১২ সালের নির্ভয়াকাণ্ডে কোন কোন ধারায় দোষীসাব্যস্তদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। কেন নৃশংস ওই ঘটনাকে বিরলের মধ্যে বিরলতম বলেছিল আদালত?

২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বরের সেই রাত-

এক যুগ কেটে গেলেও ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বরের সেই নৃশংস ঘটনার কথা ভাবলে এখনও শিউরে ওঠেন অনেকে। শীতের রাত। নির্ভয়া ও তাঁর এক বন্ধু সিনেমা দেখে বাড়ি ফিরছিলেন। প্রথমে অটো ধরে মুনির্কা বাসস্ট্যান্ডে আসেন। রাত তখন সাড়ে ৯টা। তাঁদের সামনে একটি বাস এসে দাঁড়ায়। এক নাবালক মুখ বাড়িয়ে জানতে চায়, তাঁরা কোথায় যাবেন। দ্বারকার কথা বলতেই সে জানায়, ওইপথেই বাস যাবে। বাসে ওঠেন নির্ভয়া ও তাঁর বন্ধু। চালক-সহ বাসে তখন ৬ জন। নির্ভয়ার কাছ থেকে ২ জনের ভাড়া হিসেবে ২০ টাকা নেয় কন্ডাক্টর। তখনও কিছু সন্দেহ হয়নি তাঁদের। কিন্তু, বাস অন্য রুট ধরতেই নির্ভয়ার বন্ধু চমকে উঠেন। রুট বদলানোর কারণ জানতে চান। ততক্ষণে নিজেদের আসল মূর্তি ধারণ করেছে ওই ৬ জন। বাসের দরজা বন্ধ করে দেয়। নির্ভয়ার বন্ধুকে মারধর করা হয়। তারপর শুরু হয় সেই নৃশংসতা। নির্ভয়াকে গণধর্ষণের পাশাপাশি তাঁর যৌনাঙ্গে রড ঢোকানো হয়। ৬ জনের মধ্যে সবচেয়ে নৃশংস ছিল এক নাবালক। নৃশংস অত্যাচারের পর নির্ভয়া ও তাঁর বন্ধুকে রাস্তার ধারে ফেলে রেখে পালায় তারা।

নির্ভয়ার মৃত্যু ও ৬ অভিযুক্ত গ্রেফতার-

১৩ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েছিলেন বছর তেইশের নির্ভয়া। চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরও নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। কিন্তু, শেষরক্ষা হয়নি। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে ২৯ ডিসেম্বর মৃত্য হয় নির্ভয়ার। নৃশংস এই ঘটনার পর দেশজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। রাস্তায় নামেন সাধারণ মানুষ। অভিযুক্তদের ধরতে সিট গঠন করে দিল্লি পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করা হয় বাসটি। প্রথমে তদন্তকারীদের জালে ধরা পড়ে বাসচালক রাম সিং। তারপর একে একে আরও পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। ৬ জনের মধ্যে একজন নাবালক ছিল। নৃশংস এই ঘটনার সময় তার বয়স ছিল ১৭ বছর। বাকি ৪ জন হল মুকেশ সিং(২৬), বিনয় শর্মা(২০), পবন গুপ্তা (১৯) এবং অক্ষয় ঠাকুর(২৮)।

নির্ভয়াকাণ্ডে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোন কোন ধারায় মামলা?

নির্ভয়াকাণ্ডে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা করা হয়। সেইসময় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৬৫, ৩৬৬, ৩৭৬(২)(জি), ৩০২, ৩৮৬, ৩৯৬ ধারায় মামলা দায়ের হয়। এছাড়া ৩৯৭, ২০১, ৪১২ ও ১২০বি ধারায় মামলা হয়।

ভারতীয় দণ্ডবিধির পরিবর্তে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে দেশে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা কার্যকর হয়েছে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৬৫ ধারা হয়েছে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৪০(৩) ধারা। কাউকে আটকে রাখার উদ্দেশ্য অপহরণের ক্ষেত্রে এই ধারা দেওয়া হয়।

ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৬৬ ধারা হয়েছে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৮৭। খুন কিংবা মুক্তিপণ আদায়ের জন্য অপহরণের ক্ষেত্রে এই ধারা দেওয়া হয়। নির্ভয়াকাণ্ডে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬(২)(জি) ধারা দেওয়া হয়। ধর্ষণ ও নারকীয় অত্যাচারের জন্য এই ধারা দেওয়া হয়। নির্ভয়ার মৃত্যুর জেরে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ৩০২ ধারা দেওয়া হয়। ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় যা ১০৩(১) ধারা। এই ধারায় খুনের ক্ষেত্রে সাজা হয়।

নির্ভয়াকাণ্ডে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৮৬ ধারা দেওয়া হয়। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার যা ৩০৮(৫) ধারা। খুনের হুমকি দিয়ে কিংবা আঘাত করে জুলুমবাজির অভিযোগে এই ধারা দেওয়া হয়।

খুন করে ডাকাতির ধারাও দেওয়া হয়েছিল নির্ভয়াকাণ্ডে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৯৬ ধারা দেওয়া হয়েছিল। ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় যা এখন ৩১০(৩) ধারা। খুনের চেষ্টা কিংবা গুরুতরভাবে জখম করে ডাকাতির অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৯৭ ধারাও দেওয়া হয়েছিল নির্ভয়াকাণ্ডে। যা এখন ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৩১১ ধারা।

প্রমাণ লোপাট ও অপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টার অভিযোগে নির্ভয়াকাণ্ডে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ২০১ ধারা দেওয়া হয়েছিল। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার যা এখন ২৩৮ ধারা।

নির্ভয়াকাণ্ডে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪১২ ধারা দেওয়া হয়েছিল। যা এখন ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৩১৭(৩) ধারা। ডাকাতিতে যুক্ত থেকে চুরি করা সম্পত্তি গ্রহণের ক্ষেত্রে এই ধারা দেওয়া হয়।

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০বি ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। যা এখন ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬১(২) ধারা। অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের ক্ষেত্রে এই ধারা দেওয়া হয়।

নির্ভয়াকাণ্ডে যেসব ধারা দেওয়া হয়েছিল, নিম্ন আদালত সেইসব ধারায় অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করে। নির্ভয়াকাণ্ডকে বিরলের মধ্যে বিরলতম বলে। শুধু তাই নয়, দিল্লি হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টও সেইসব ধারা বজায় রাখে। এবং দোষীসাব্যস্তদের মৃত্যদণ্ড বহাল রাখে।

আত্মহত্যা এক অভিযুক্তের, ফাঁসি চার জনের-

তিহার জেলে রাখা হয়েছিল নির্ভয়াকাণ্ডে অভিযুক্তদের। ঘটনার মাস তিনেক পর সেখানে আত্মহত্যা করে অভিযুক্ত বাসচালক রাম সিং। কয়েক মাস পর নাবালক অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে জুভেনাইল জাস্টিট বোর্ড (JJB)। অভিযোগ, নির্ভয়ার উপর বর্বরোচিত হামলায় সবচেয়ে নৃশংস ভূমিকা নিয়েছিল এই নাবালক। তবে সাবালক না হওয়ায় তাকে তিন বছরের জন্য সংশোধনাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় জেজেবি। ২০২০ সালের ১৭ জানুয়ারি বাকি চার দোষীসাব্যস্তের প্রাণভিক্ষার আর্জি খারিজ করে দেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। নৃশংস ঘটনার ৭ বছর ৪ মাস পর ২০২০ সালের ২০ মার্চ মুকেশ, বিনয়, অক্ষয় ও পবনকে ফাঁসি দেওয়া হয়।

বাংলাকে নাড়িয়ে দেয় আরজি কর কাণ্ড-

২০২৪ সালে ৯ অগস্ট আরজি করের সেমিনার হল থেকে জুনিয়র ডাক্তার ‘তিলোত্তমা’-র দেহ উদ্ধার হয়। রাস্তায় নামে সাধারণ মানুষ। ১৬৪ দিন পর সোমবার দোষী সাব্যস্ত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রাইকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে শিয়ালদহ আদালত। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪, ৬৬ ও ১০৩ (১) ধারায় সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। ধর্ষণের ক্ষেত্রে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ ধারা দেওয়া হয়। ধর্ষণ ও খুনের ক্ষেত্রে ৬৬ ধারা দেওয়া হয়। এবং ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১০৩(১) ধারা দেওয়া হয় খুনের অভিযোগের ক্ষেত্রে।

তিলোত্তমাকাণ্ড বিরলের মধ্যে বিরলতম নয় বলেও পর্যবেক্ষণ বিচারক অনির্বাণ দাসের। যা নিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে বিভিন্ন মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যাবে রাজ্য।

আজও পড়েছে ইনফোসিস, বাজারে ঝড় তুলেছে ব্যাঙ্কগুলো!
আজও পড়েছে ইনফোসিস, বাজারে ঝড় তুলেছে ব্যাঙ্কগুলো!
ঘরেই ছিলেন, ছেলের যাবজ্জীবনের সাজা শুনে দোর আটকেই রইলেন সঞ্জয়ের মা
ঘরেই ছিলেন, ছেলের যাবজ্জীবনের সাজা শুনে দোর আটকেই রইলেন সঞ্জয়ের মা
চাকরি পেয়েই বাড়ি, গাড়ি! এই ভুল আপনিও করেছেন?
চাকরি পেয়েই বাড়ি, গাড়ি! এই ভুল আপনিও করেছেন?
সর্বনাশা স্যালাইন? প্রসূতির প্রাণের বিনিময়ে সামনে এল আরও এক দুর্নীতি!
সর্বনাশা স্যালাইন? প্রসূতির প্রাণের বিনিময়ে সামনে এল আরও এক দুর্নীতি!
ইনফোসিসের পতনে নারায়ণমূর্তির পরিবারের লস কত হয়েছে জানেন?
ইনফোসিসের পতনে নারায়ণমূর্তির পরিবারের লস কত হয়েছে জানেন?
জেলাশাসকের মাথায় ‘প্রভাবশালী শাশুড়ি’র হাত, ফের কোটি কোটির দুর্নীতির অ
জেলাশাসকের মাথায় ‘প্রভাবশালী শাশুড়ি’র হাত, ফের কোটি কোটির দুর্নীতির অ
এবার পাতালঘরে ঢুকে গেল বাংলাদেশের বাজার!
এবার পাতালঘরে ঢুকে গেল বাংলাদেশের বাজার!
রেলের শেয়ারেরই দিন, চড়চড়িয়ে বাড়ল ইরকন ইন্টারন্যাশনাল থেকে আরভিএনএল!
রেলের শেয়ারেরই দিন, চড়চড়িয়ে বাড়ল ইরকন ইন্টারন্যাশনাল থেকে আরভিএনএল!
অভিষেককে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর জন্য মমতাকে পরামর্শ সুকান্তর
অভিষেককে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর জন্য মমতাকে পরামর্শ সুকান্তর
১ দিনেই ৮০ শতাংশ লাফ, আপনার আছে নাকি এই শেয়ার?
১ দিনেই ৮০ শতাংশ লাফ, আপনার আছে নাকি এই শেয়ার?