Kanchanjunga Express Accident: মালগাড়ির চালকদের দায়ী করলেও জয়েন্ট অবজারভেশন কমিটির রিপোর্টে বিস্ফোরক তথ্য সামনে
Kanchanjunga Express Accident: রিপোর্ট বলছে, TA 912 ফর্ম না দিয়ে TD 912 ফর্ম দিয়ে ট্রেন চালানো উচিত ছিল। অর্থাৎ রাঙাপানি থেকে চটেরহাটের মধ্যে অ্যাবসলিউট ব্লক সিস্টেমে (ABS) ট্রেন চালানো উচিত ছিল। যা স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং ব্যবস্থা চালুর আগে ব্যবহার করা হতো। অ্যাবসলিউট ব্লক সিস্টেমেই দীর্ঘদিন ভারতীয় রেল চলেছে।
কলকাতা: কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা নিয়ে চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট টিভিনাইন বাংলার হাতে। সেই জয়েন্ট অবজারভেশন কমিটির রিপোর্টে একাধিক চাঞ্চল্যকর বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে। রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে, পেপার ক্লিয়ারেন্স সিগন্যাল দেওয়ার ক্ষেত্রেই ছিল পদ্ধতিগত ভুল। অথচ পেপার ক্লিয়ারেন্স সিগন্যালেই চলছিল ট্রেন। মালগাড়ির চালকের হাতেও ছিল সেই পেপার ক্লিয়ারেন্স।
কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার পর থেকে একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে, যখন চটেরহাট স্টেশনের কিছুটা আগে ওই এক্সপ্রেস ট্রেন দাঁড়িয়ে রয়েছে, কীভাবে ওই একই লাইনে মালগাড়ি গিয়ে পৌঁছল? জানা গিয়েছিল, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের চালক এবং মালগাড়ির চালককে TA 912 ফর্ম ইস্যু করা হয়েছিল। যার মূল বক্তব্য, অটোমেটিক সিগনালিং সিস্টেমে কিছু সমস্যা রয়েছে। তার ফলে ওই দুই ট্রেনের চালক নির্দিষ্ট গতিসীমা মেনে সিগনাল ভেঙে এগিয়ে যেতে পারেন।
আর এখানেই সবথেকে বড় গলদ রয়েছে বলে মনে করছে জয়েন্ট অবজারভেশন কমিটির রিপোর্ট। রিপোর্ট বলছে, TA 912 ফর্ম না দিয়ে TD 912 ফর্ম দিয়ে ট্রেন চালানো উচিত ছিল। অর্থাৎ রাঙাপানি থেকে চটেরহাটের মধ্যে অ্যাবসলিউট ব্লক সিস্টেমে (ABS) ট্রেন চালানো উচিত ছিল। যা স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং ব্যবস্থা চালুর আগে ব্যবহার করা হতো। অ্যাবসলিউট ব্লক সিস্টেমেই দীর্ঘদিন ভারতীয় রেল চলেছে।
অ্যাবসলিউট ব্লক সিস্টেমের অর্থ, এক স্টেশন থেকে আরেক স্টেশনের মাঝখানে একটি লাইনে (লাইনটিকে একটি ব্লক ধরা হলে) একসঙ্গে দু’টি ট্রেন কখনওই চলাচল করবে না। অর্থাৎ যতক্ষণ না চটেরহাট স্টেশন পেরিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা এগিয়ে যাচ্ছে, ততক্ষণ কোনওভাবেই মালগাড়িটি রাঙাপানি স্টেশন থেকে যেতে পারত না।
জয়েন্ট অবজারভেশন কমিটির বক্তব্য, ঘটনার দিন ভোর ৫টা ৫০ মিনিট থেকে অটোমেটিক সিগন্যালিং সিস্টেম বন্ধ রয়েছে বা বিকল হয়ে রয়েছে। সেই পরিস্থিতিতে অ্যাবসলিউট ব্লক সিস্টেমে যাওয়া উচিত ছিল স্টেশন ম্যানেজারের। অর্থাৎ রাঙাপানি স্টেশন ম্যানেজারের TD 912 ফর্ম ইস্যু করা উচিত ছিল।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং কাজ না করলে যে পদ্ধতি অনুসরণ করে ট্রেন চালান উচিত, সেই নিয়ম মেনে ট্রেন চালাননি মাল গাড়ির দুই চালক। রিপোর্টে প্রাথমিক ভাবে মালগাড়ির দুই চালক এবং ট্রেন ম্যানেজারকে দায়ী করা হয়েছে। কিন্তু সেই সঙ্গে চিফ লোকোমোটিভ ইন্সপেক্টর, যিনি এই যৌথ পরিদর্শন দলের অন্যতম হাতে লিখে তার মতামত জানিয়েছেন, সেখানে সিএলআই ওমপ্রকাশ শর্মা লিখেছেন, “আমি মেনে নিতে পারছিনা ওই দিন RNI ( রাঙাপানি) এবং CAT ( চটের হাট) স্টেশনের মধ্যে সমস্ত স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল বিকল ছিল। বিশেষ করে রাঙাপানি স্টেশনের ডাউন লাইনের স্টার্টার এবং এডভ্যান্স স্টার্টার সিগন্যাল। সেক্ষেত্রে অ্যাবসলিউট ব্লক সিস্টেমে ট্রেন চালানো উচিত ছিল।
অর্থাৎ, মালগাড়ি চালকদের প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করলেও, রাঙাপানি স্টেশনের স্টেশন মাস্টারের ভূমিকা সঠিক ছিল না, এটাও স্পষ্ট রিপোর্টে। মাত্র এক বছর আগে এই লাইনের আমবাড়ি থেকে আলুয়াবাড়ি পর্যন্ত স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং ব্যবস্থা চালু হয়। সিগন্যালিং ব্যবস্থা পরিবর্তন হলে, ট্রেনের চালক থেকে ট্রেন চলাচলের সঙ্গে সংযুক্ত সমস্ত কর্মীদের দফায় দফায় প্রশিক্ষণ প্রয়োজন হয়। উত্তর পূর্ব রেলের কর্মীদের বড় অংশের দাবি, সেই প্রশিক্ষণ আদৌ তাঁরা পাচ্ছেন না। ফলে কোন পরিস্থিতিতে কী করা উচিৎ, সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না।
স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং ব্যবস্থায় ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রে রেলের কন্ট্রোল রুমের বড় ভূমিকা ছিল। সেদিনসকাল ৫টা ৫০ মিনিট থেকে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল খারাপ থাকার পর কন্ট্রোল রুম কীভাবে TA 912 ফর্ম দিয়ে ট্রেন চালানোর অনুমতি দিল, সেটাও এখন তদন্তের বিষয়।