EM Bypass: হাত তুলেছে কেএমডিএ, মুখ্যমন্ত্রীর ‘রোষানল’ থেকে বাঁচতে বাইপাস সংস্কারের দায়িত্বে কলকাতা পুরনিগম

EM Bypass: পরিকাঠামোর অভাবে ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস সংস্কারে অপারগ কেএমডিএ। গোটা রাস্তার দায়িত্বে এবার কলকাতা পুরনিগমর।

EM Bypass: হাত তুলেছে কেএমডিএ, মুখ্যমন্ত্রীর ‘রোষানল’ থেকে বাঁচতে বাইপাস সংস্কারের দায়িত্বে কলকাতা পুরনিগম
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 25, 2022 | 10:26 PM

সায়ন্ত ভট্টাচার্য 

কলকাতা: হাওড়ার ফোরশোর রোডের বেহাল অবস্থা নিয়ে সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Chief Minister Mamata Banerjee) রোষানলে পড়েন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের অবস্থা ফোরশোর রোডের তুলনায় অনেকটাই খারাপ। চারপাশে খানাখন্দ এবং ধুলোর ঝড়। ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের (Eastern Metropolitan Bypass) সংস্কার যে কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটির পক্ষে সম্ভব নয় তা কার্যত স্বীকার করে নিয়ে সংশ্লিষ্ট রাস্তাটিকে কেএমডিএ-র হাত থেকে কলকাতা পুরনিগম (Kolkata Municipality) নিজের হাতে তুলে নিল। প্রশাসনিক মহলের কর্তাদের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের উপর দিয়ে কলকাতা বিমানবন্দরে যান। নতুন করে আর মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভের মুখে পড়তে চাইছেন না রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)। যে কারণে এবার আর মেট্রো প্রকল্পের উপর দায় না দিয়ে তিনি সরাসরি বলেই দিলেন, কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটির হাত থেকে ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের যাবতীয় রক্ষণাবেক্ষণ এবং সংস্কারের দায়িত্ব কলকাতা পুরনিগমকে তুলে দেওয়া হল। 

কী বলছেন ফিরহাদ? 

উল্লেখ্য, কেএমডিএ’র চেয়ারম্যান খোদ ফিরহাদ হাকিমই। তিনি আজ স্পষ্ট ভাষায় বললেন, “কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটির কাছে সেই পরিকাঠামো নেই, যা দিয়ে ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের সংস্কার সম্পূর্ণ করা সম্ভব।” অর্থাৎ আগামী দিন ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের ভাল-মন্দের দায়িত্ব থাকবে কলকাতা পুরনিগমর উপরে। হাওড়া পুরনিগমর অন্তর্গত ফোরশোর রোড যেমন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি শহরের বুকে অন্যতম রাস্তা হচ্ছে ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস। যে রাস্তা দিয়ে নিত্যদিন হাজার হাজার গাড়ি যায়। কিন্তু, সেই রাস্তার বেহাল অবস্থা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্কে ছিল কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি। নিউ গড়িয়া থেকে কলকাতা বিমানবন্দর পর্যন্ত যে মেট্রো রেল করিডরের কাজ চলছে, সেই কাজের জন্য বাইপাসের অবস্থা খারাপ হচ্ছে এই কারণ দেখিয়ে দিনের পর দিন নিজেদের দায় এড়িয়ে গিয়েছে কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী রাস্তার অপরিচ্ছন্নতা এবং সংস্কার নিয়ে যে ক্ষোভ দেখিয়েছেন, তারপর আর ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের সংস্কারের বিষয়টি শুধুমাত্র অজুহাত দেখিয়ে ফেলে রাখা যে সম্ভব নয় তা বুঝতে পেরেছেন প্রশাসনের কর্তারা। 

কেন হাত তুলল কেএমডিএ? 

স্বাভাবিকভাবেই আর দেরি করতে চাননি কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটির কর্তারা। গতকাল পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরে উচ্চপর্যয়ের বৈঠক হয়। সেই বৈঠকেই মেয়রের তরফে প্রস্তাব উঠে আসে ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসকে কলকাতা পৌরসভার হাতে তুলে দেওয়ার ব্যাপারে। সেখানে বিষয়টিতে সিলমোহর দেওয়া হয় বলে কেএমডিএ সূত্রে খবর। এরপর শুক্রবার ‘টক টু মেয়রের’ শেষে মেয়র ফিরহাদ হাকিম স্পষ্ট করে দেন, কেএমডিএর হাতে যে পরিমাণ ইঞ্জিনিয়ার রয়েছে এবং পরিকাঠামো রয়েছে তা দিয়ে ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের সংস্কার করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে কলকাতা পুরনিগময় যাবতীয় দায়িত্ব সামলাতে পারবে। রাজনৈতিক মহলের মতে, শহরের এই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা নিয়েই সব থেকে বেশি মাথাব্যথা কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট কর্তাদের। 

প্রতি বছর সংস্কারে খরচ কোটি কোটি টাকা 

কলকাতায় বর্তমানে যেক’টি রাস্তা রয়েছে, তার মধ্যে ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের প্রতিবছর সংস্কারের ক্ষেত্রে খরচ হয় কোটি কোটি টাকা। কেএমডিএ’র নির্দিষ্ট বাজেটের তুলনায় তা ছাপিয়ে যায়। তা নিয়ে চিন্তা বাড়ছিল কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটির কর্তাদের। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে রাস্তা নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন, ই এম বাইপাসের ক্ষেত্রে সেই একই হাল ভবিষ্যতে হতে পারে বলেই আশঙ্কিত তাঁরা। কলকাতা পুরনিগমর হাতে চলে আসায় সেই আশঙ্কা কিছুটা হলেও দূর হবে বলে মনে করছেন প্রশাসনের কর্তারা।

ফরশোর রোড নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর তোপেই কাজ?

ফরশোর রোড নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর তোপের মুখে রাজ্যের মন্ত্রী পড়তেই সংশ্লিষ্ট রোডটির সংস্কার এবং পরিচ্ছন্নতা নিয়ে তৎপর হয়ে ওঠে প্রশাসন। গত শতকের আশির দশকের গোড়ায় উল্টোডাঙা থেকে ইএম বাইপাসের নির্মাণ শুরু হয়ে যায়। এরপর ঢালাই ব্রিজ পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটারের বাইপাস তৈরি হয়েছে। ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের উপরে গাড়ির চাপ আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই রাস্তাটি মাঝেমধ্যে ভেঙেছে এবং খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। সেটিকে মেরামত করা হয়েছে। কিন্তু সেই মেরামত করার উপকরণ কতটা ঠিক ছিল তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছেই।

যদিও কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথোরিটির কর্তারা বলছেন, রাস্তাটির অবস্থা জানতে কখনও সবিস্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়নি বলেই দাবি। যে কোনও বড় রাস্তারই নির্দিষ্ট সময় অন্তর রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়। যখন কোনও রাস্তা তৈরির নকশা করা হয়, তখন খেয়াল রাখা হয় ওই রাস্তায় কত যানবাহন চলবে, আগামী দিনে কত যানবাহন বাড়তে পারে। রাস্তা তৈরির পরে একটা রুটিন রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। পাঁচ বছর অন্তর এই রক্ষণাবেক্ষণকে ‘পিরিয়ডিক্যাল মেন্টেন্যান্স’ বলে। সেই কাজের সময়ে রাস্তার উপরের স্তর, অর্থাৎ যে অংশ দিয়ে গাড়ি চলাচল করে, সেটি সম্পূর্ণ তুলে ফেলা হয়। তবে ভিতরের স্তরগুলি পাল্টানোর প্রয়োজন পড়ে না।

বাইপাসে আরও বাড়বে যান চলাচল 

‘মা’ উড়ালপুল থেকে উল্টোডাঙার দিকে নামার পরের অংশে কিছু সমস্যা রয়েছে। বৃষ্টির সময় এই অংশে জল জমার অভিযোগ সব থেকে বেশি থাকে। ফলে রাস্তা ভেঙ্গে যায়, খানাখন্দ বেরিয়ে পড়ে। উড়ালপুল থেকে নামার পরেই রাস্তাটি ঢেউ খেলানো। সেই অংশ সমান করতে হবে। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্বের রাস্তার অবস্থা মোটের উপরে একই রকম। কলকাতা পুরনিগমর সড়ক বিভাগ এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আধিকারিকদের মতে, কামালগাজি উড়ালপুল থেকে নেমে বারুইপুর-পদ্মপুকুর পর্যন্ত সাদার্ন বাইপাস এলাকা আগের তুলনায় অনেকটাই উন্নত হয়েছে। এর ফলে রুবি থেকে ঢালাই ব্রিজ পর্যন্ত যানবাহনের সংখ্যা আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে বলে মনে করছে কলকাতা পুলিশের ট্রাফিকের কর্তারা। ফলে আগেভাগে রাস্তার অবস্থা আরও ভাল করা প্রয়োজন। তাই মেট্রোপলিটন মোড় থেকে ঢালাই ব্রিজ পর্যন্ত বাইপাস পুনর্নির্মাণ জরুরি। সে ক্ষেত্রে কলকাতা পুরনিগম ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের স্বাস্থ্য ফেরাতে আগামীদিনে কি পদক্ষেপ করে, সেটাই এখন দেখার।