Nandadulal Mohanto: প্রয়াত মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রথম পিএইচডি গবেষক

Matua Community: স্বাধীনতা সংগ্রামী পরিবার থেকে উঠে আসা নন্দদুলাল মোহন্ত নিজের গোটা জীবনটা উৎসর্গ করেছিলেন দলিত জাগরণ ও হরিচাঁদ ঠাকুর, গুরুচাঁদ ঠাকুরের অবদানকে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাখ্যার কাজে। যুক্ত ছিলেন শিক্ষা আন্দোলন ও উদ্বাস্তু আন্দোলনের সঙ্গে। বিজ্ঞান চেতনায় উদ্বুদ্ধ নন্দদুলালবাবু আজীবন মতুয়া ধর্ম আন্দোলনকে ব্যাখ্যা করে গিয়েছেন সমাজ চেতনার আলোকেই।

Nandadulal Mohanto: প্রয়াত মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রথম পিএইচডি গবেষক
প্রয়াত নন্দদুলাল মোহন্তImage Credit source: TV9 Bangla
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Mar 29, 2024 | 11:53 PM

কলকাতা: প্রয়াত ডঃ নন্দদুলাল মোহন্ত। নিঃশব্দে চলে গেলেন মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রথম পিএইচডি গবেষক। শুক্রবার রাত ৯টা ৪০ মিনিট নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি। ভর্তি ছিলেন কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে। আজ রাতে সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। স্বাধীনতা সংগ্রামী পরিবার থেকে উঠে আসা নন্দদুলালবাবু অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের সভাপতিও ছিলেন এককালে।

Nanda Dulal Mohanto with Indira Gandhi

ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে গ্রুপ ছবিতে নন্দদুলালবাবু

স্বাধীনতা সংগ্রামী পরিবার থেকে উঠে আসা নন্দদুলাল মোহন্ত নিজের গোটা জীবনটা উৎসর্গ করেছিলেন দলিত জাগরণ ও হরিচাঁদ ঠাকুর, গুরুচাঁদ ঠাকুরের অবদানকে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাখ্যার কাজে। যুক্ত ছিলেন শিক্ষা আন্দোলন ও উদ্বাস্তু আন্দোলনের সঙ্গে। বিজ্ঞান চেতনায় উদ্বুদ্ধ নন্দদুলালবাবু আজীবন মতুয়া ধর্ম আন্দোলনকে ব্যাখ্যা করে গিয়েছেন সমাজ চেতনার আলোকেই। প্রমথ রঞ্জন ঠাকুরের ঘনিষ্ঠ নন্দদুলাল মোহন্ত সারা জীবন নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন শিক্ষার প্রসারে। পেশায় ছিলেন স্কুল শিক্ষক। যুব সম্প্রদায় যাতে হাতেকলমে কারিগরি শিক্ষার সুযোগ পায়, সে জন্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একটি আইটিআই কলেজও। রাজ্য সরকারের দলিত সাহিত্য একাডেমির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি।

Nanda Dulal Mohanto With BoroMa

বড় মা’র সঙ্গে নন্দদুলাল মোহন্ত

এককালে মতুয়া মহাসংঘের সভাপতি থাকলেও, কোনওদিন ক্ষুদ্র সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি মতুয়া আন্দোলনকে দেখেননি। ব্যাখ্যাও করেননি। ‘দলাদলি’, ‘গুরুগিরি’ এসবের থেকে আজীবন নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন তিনি।

বর্তমান সময়ে মতুয়া ধর্মমত যখন অনেকের কাছে রাজনীতির পুঁজি, আবার অনেকে ব্রাহ্মণ্যবাদ বিরোধী এই ধর্মমতে সংযোজন করেছেন ‘মতুয়া পুরোহিত’… এসবের ঘোর বিরোধী ছিলেন শিক্ষানুরাগী নন্দদুলালবাবু। তিনি বলতেন, ‘ব্রাহ্মণ্যবাদের হাত থেকে বেরিয়ে আবার নতুন ব্রাহ্মণ্যতন্ত্র কেন হবে’। আবার রাজনীতির দলাদলি, কচকচানি… তাতেও জড়াতে চাননি তিনি। বড়মা বীণাপাণি দেবীর যখন ১০০ বছরের জন্মদিন পালনের অনুষ্ঠান হয়েছিল, তখন সেখানে অন্যতম মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন নন্দদুলাল মোহন্ত। কিন্তু, পরবর্তী সময়ে ঠাকুরবাড়ির রাজনৈতিক আবহাওয়া থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছিলেন।

Nanda Dulal Mohanto with Mamata

বড় মা’র ১০০ তম জন্মদিবসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে নন্দদুলাল মোহন্ত

নন্দদুলালবাবুর জীবনের শেষ অধ্যায়টা কেটেছিল বাগুইআটিতে তাঁর ছেলের কাছেই। মৃত্যুর আগে তিনি পুত্র নীলাদ্রিদেব মোহন্ত ও কন্যা সুনন্দা মোহন্তকে জানিয়ে গিয়েছেন, ব্রাহ্মণ্য মত কিংবা নবোদিত মতুয়া পৌরহিত্য মত… কোনও মতেই যেন তাঁর শেষকৃত্য না করা হয়। আগামিকাল, শনিবার তাঁর নিথর দেহ কলকাতা থেকে নিয়ে যাওয়া হবে বনগাঁয়। তাঁর কর্মভূমিতে। সেখানেই হবে মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রথম পিএইচডি গবেষকের শেষকৃত্য। মৃত্যুকালে পরিবারের কাছে তাঁর শেষ ইচ্ছা হিসেবে নন্দদুলালবাবু জানিয়ে গিয়েছে, তাঁর দেহাবশেষ যেন গঙ্গায় বিসর্জন দেওয়া হয়।