কলকাতা: কেন্দ্রে জোটে থাকলেও, রাজ্য়ে সিপিএমের বিরোধীই তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপিকে কেন্দ্র থেকে গদিছাড়া করতে কংগ্রেস, সিপিএম সহ একাধিক বিরোধী দলের সঙ্গে জোট বাধলেও, সিপিএম-কে নিয়ে যে ‘খারাপ লাগা’ রয়েছে, তা TV9 বাংলাকে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। TV9 বাংলার এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন যে ইন্ডিয়া জোটে সিপিএম কেন মুখপাত্র হবে, তা নিয়ে আপত্তি রয়েছে তাঁর।
TV9 বাংলার কনসাল্টিং এডিটর অনির্বাণ চৌধুরীকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান যে যদি ইন্ডিয়া জোট কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসে, তবে তৃণমূল কংগ্রেসের সেই সরকারের অংশ হতে কোনও আপত্তি নেই। ইন্ডিয়া জোটে কোনও সমস্য়া হবে না, যদি না সিপিএম নাক গলায়।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সর্বভারতীয় স্তরে ইন্ডিয়া জোটে কোনও অন্তরায় তৈরি হবে না যদি না সিপিএম নাক গলায়। আমার একটাই খারাপ লাগে, ইন্ডিয়া জোটে সব কিছু ঠিকঠাক চলছে, আমি ওদের সাপোর্টও দিই। কিন্তু সিপিআইএম এদের সম্পূর্ণ মনিটরিং করছে। সিপিএম কেন মুখপাত্র হবে, আমার এটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। প্রত্যেকটা আঞ্চলিক দলের নিজস্ব সম্মান রয়েছে। সবার সঙ্গে কথা বলে যেটা হয়, সেটা জোট। জোট মানে সবাইকে নিয়ে চলা। কাউকে বাদ দিয়ে নয়। কাউকে গায়ের জোরে বাদ দেওয়া-সেটা হয় না।”
সিপিএমের নাক গলায়, মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ার জবাবে সিপিএম নেতা তথা লোকসভা নির্বাচনে দমদমের প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী কার্যত স্বীকার করে নিলেন যে সিপিআইএম যদি মনিটরিং না করে, তাহলে উনি সব ম্য়ানেজ করে নেবেন। কিন্তু বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সিপিএম মনিটরিং করছে বা সিপিআইএম দায়িত্ব নিয়ে সবাইকে একজোট করছে, এটা উনি স্বীকার করে নিলেন। সিপিআইএম-কে দেখা যায় না, সেখানেই জাতীয়স্তরে ওঁকে বারবার সিপিআইএমের কথাই বলতে হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “মোদীজি যখন বলছিলেন ৪০০ সিট, তখন উনিই সবার আগে বলেছিলেন যে কংগ্রেস ৪০-র কম আসন পাবে। তার মানে ওনার কথা অনুযায়ী ইন্ডিয়া জোটের কোনও গল্প নেই। উনি মোটামুটি এমনভাবে চলবেন, যাতে বিজেপি ৪০০ পেলে, সেদিকে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারবেন। এখন যেই বুঝে গিয়েছেন বিজেপি ৪০০ পাবে না, তখন বলছেন সারা দেশে কী হবে,তা নিয়ে বলতে পারবেন না। মল্লিকার্জুন খাড়্গে যেমন বলেছেন যে ইন্ডিয়া ২৯৫ আসন পাবে, সীতারাম ইয়েচুরী বলেছেন ২৯৫ পাবে, দুটি সর্বভারতীয় দল বলেছে, কিন্তু উনি বলতে পারছেন না। যদি বিজেপির সুবিধা হয়ে থাকে, তাহলে ওদিকে ঝাঁপ দেবেন, নাহলে উল্টোদিকে ঝাঁপ মারবেন।”
সুজন চক্রবর্তী আরও বলেন, “উনি নিজেই বলছেন, বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ওঁর লড়াই। অর্থাৎ শুধু বিজেপির বিরুদ্ধে নয়, সিপিএম-কংগ্রেসের বিরুদ্ধেও লড়ছেন উনি। এই মানসিকতা নিয়েই চলছেন। বিজেপির বিরুদ্ধে, ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে সিপিএম লড়বে।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন আঞ্চলিক দলগুলি ভাল ফল করবে। এ প্রসঙ্গে সুজন চক্রবর্তী বলেন, “আঞ্চলিক দলগুলি ভাল ফল করবে, এটা তো কেউ অস্বীকার করছে না। তারা ইন্ডিয়া জোটে রয়েছেন, তারা তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো ট্রেন থেকে নেমে পড়েননি। স্ট্যালিনের কথা বললেন, তারা ট্রেন থেকে নেমে পড়েননি, অখিলেশ এখনও নেমে পড়েনি। ট্রেন থেকে দু’জন নেমে পড়েছেন। এক, নীতীশ কুমার, তিনি সরাসরি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। আর একজন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি ফেন্সে দাঁড়িয়ে দেখছেেন, কোনদিকে গেলে ওনার ধান্দাটা ভাল হয়। তামিলনাড়ু, কেরলে কংগ্রেস, সিপিএম, ডিএমকে একসঙ্গে লড়ছে। বাংলায় কংগ্রেস, সিপিএম একসঙ্গে লড়ছে, তৃণমূল আলাদা লড়ছে।”
প্রসঙ্গত, লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হারাতেই তৈরি হয়েছে ইন্ডিয়া জোট। বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার শরিক তৃণমূল কংগ্রেস। যদিও ভোটের আগেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ইন্ডিয়া জোটকে বাইরে থেকে সমর্থন করবেন। পরে যদিও বলেন, “আমিই জোটের নামকরণ করেছি। ইন্ডিয়া জোটে আমি সবরকমভাবে রয়েছি। আমার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্য়া করা হয়েছে।”