Kolkata Cyber Crime: করোনা মহামারীতে পাঁচগুন বেড়েছে সাইবার অপরাধ, চিন্তায় কলকাতা পুলিশ
Kolkata Cyber Crime: পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৮ সালে কলকাতায় সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত ৩২টি এফআইআর নথিভুক্ত হয়েছিল। ২০২০-তে সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৭২টি। সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রে বেঙ্গালুরু (৮,৮৯২) আর হায়দরাবাদের (২,৫৫২) তুলনায় কলকাতার সামনের সারিতে উঠে আসাটা তাৎপর্যপূর্ণ।
কলকাতা: করোনা মহামারীর গত দু বছরে কলকাতায় বেড়েছে সাইবার অপরাধ। বিশেষত মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ে অনলাইনে মানুষের ব্যস্ততা বাড়ায় কলকাতায় সাইবার অপরাধ বেড়েছে প্রায় পাঁচ গুণ। এমনটাই মনে করছে কলকাতা পুলিশ। তাদের একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৮ সালে কলকাতায় সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত ৩২টি এফআইআর নথিভুক্ত হয়েছিল। ২০২০-তে সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৭২টি। সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রে বেঙ্গালুরু (৮,৮৯২) আর হায়দরাবাদের (২,৫৫২) তুলনায় কলকাতার সামনের সারিতে উঠে আসাটা তাৎপর্যপূর্ণ।
পুলিশের মতে, কলকাতায় সাইবার অপরাধের সংখ্যা বাড়ার কারণ মানুষ এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি সময় ব্যয় করে অনলাইনে কাজ, ব্যাঙ্কের লেনদেন এবং সামাজিক মাধ্যমে। অনলাইন ব্যাঙ্কিং বাড়ার ফলে সাইবার জালিয়াতি অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। অন্যদিকে অনলাইনে সামাজিক মাধ্যমে যোগাযোগ বাড়ানোর ফলে প্রতারণা, অশ্নীলতা এবং অন্যান্য অপ্রীতিকর ঘটনায় বেশি ঘটছে। এছাড়াও পুলিশের খাতায় ১১১টি ভুয়ো খবরের মামলাও রয়েছে, যা হায়দরাবাদ (১১২) এবং চেন্নাইয়ের (১১৪) পর তৃতীয় সর্বোচ্চ। NCRB-র পরিসংখ্যান চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সাইবার জালিয়াতি মামলার তদন্ত দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। কারণ এই ধরনের অপরাধে অপরাধীরা দেশের অন্যান্য শহর থেকে অপরাধ সংগঠিত করে এবং পুলিশকে এদের নাগাল পেতে বিভিন্ন সাইবার বিশেষজ্ঞ কোম্পানি, এজেন্সিদের সাহায্য নিতে হয়। কলকাতা পুলিশের খাতায় এখনও প্রায় ৪৯৮টি মামলা রয়েছে যার তদন্ত করা এখনও বাকি রয়েছে।
২০২০-তে এখনও পর্যন্ত পুলিশ মোট ১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে সাইবার অপরাধে যুক্ত থাকার কারণে, কিন্তু এখনও পর্যন্ত তারা দোষী সাব্যস্ত হয়নি। এর মধ্যে ৯টি মামলায় পুলিশ নিশ্চিত ছিল যে অভিযুক্ত অপরাধে জড়িত ছিল, কিন্তু উপযুক্ত তথ্য প্রমাণের অভাবে তারা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনও চার্জশিট তৈরি করতে পারেনি। ২০২০-তে কলকাতায় নথিভুক্ত ১৭২টি অপরাধের মামলার পেছনে উদ্দেশ্য বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে এর মধ্যে, ৫৪টি অপরাধ ব্যক্তিগত শত্রুতার প্রতিশোধ নিতে, ৫৬টি অপরাধ ইচ্ছাকৃত জালিয়াতি করার উদ্দেশ্যে, ৯টি অপরাধ তোলাবাজির এবং তিনটি অপরাধের পেছনে ছিল অশ্লীলতা।
পুলিশে এখন সাইবার অপরাধ সনাক্ত করতে নিজেদের প্রশিক্ষিত করার পাশাপাশি এই অপরাধ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় সতর্ক থাকার বার্তাও প্রচার করা শুরু করেছে। গত সেপ্টেম্বর মাসেই আমেরিকা এবং ইংল্যান্ডের ডোমেইন বিশেষজ্ঞদের সাহায্যে কলকাতা পুলিশের তরফে শিশুদের যৌন শোষণের উপর অনলাই প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিক এ ব্যাপারে বলেন, ‘আমরা সাইবার বুলিংয়ের প্রচুর অভিযোগ পাচ্ছি, যা আমাদের কাছে নতুন। এছাড়াও এই ধরণের কেসে আমাদের প্রাথমিক পরামর্শেরও প্রয়োজন রয়েছে। এই প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য ছিল আমাদের সচেতনতা বাড়ানো।’
এছাড়াও পুলিশকর্মীদের নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি, এথিক্যাল হ্যাকিংয়ের কোর্স করার পাশাপাশি কম্পিউটার হ্যাকিং, ফরেন্সিক, এবং এই ধরণের অপরাধের তদন্ত করার প্রশিক্ষণ নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ৪৫জন পুলিশ কর্মীকে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এবং অন্য ১৫০-র বেশি পুলিশকর্মীকে কম গুরুত্বপূর্ণ সাইবার সিকিউরিটি সচেতনতার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে বলা যেতে পারে, যেভাবে শহরে সাইবার অপরাধ বাড়ছে, তা যথেষ্ট মাথাব্যাথা বাড়িয়েছে পুলিশের।