RG Kar Hospital: নাক-মুখ দিয়ে রক্ত পড়া বৃদ্ধাকেও ফেরাল আরজিকর, কেউ পেল ‘সান্তনা পুরস্কার’ স্যালাইনের বোতল
Protest at RG Kar: গত ৯ অক্টোবর থেকে চলছে হবু চিকিৎসকদের এই আন্দোলন। সে দিন থেকেই কমতে শুরু করেছে রোগীর সংখ্যা।
কলকাতা: পুজো কেটে গেলেও এখনও অচলাবস্থা জারি আরজি করে (RG Kar)। আন্দোলনকারী আর স্বাস্থ্য ভবনের মধ্যে চিঠি-চাপাটি চললেও অচলাবস্থা কাটার কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি এখনও পর্যন্ত। হবু চিকিৎসকেরা (Doctor) অনশনে বসেছেন। আর তার জেরে চিকিৎসা না পেয়ে হাসপাতাল (Hospital) থেকে ফিরে যেতে হচ্ছে রোগীদের (Patients)। মুমুর্ষু রোগীকেও ফিরিয়ে দিচ্ছে হাসপাতাল। তাঁদের পরিবারকে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, ডাক্তাররা অনশনে বসেছেন, তাই রোগীকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এক বৃদ্ধার চোখ-মুখ থেকে রক্ত পড়ছে। সেই অবস্থাতেই তাঁকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে। এমনকি বারাসাত হাসপাতাল থেকে আরজিকরে রেফার করা সত্ত্বেও সেই রোগীকে ভর্তি নেওয়া হয়নি হাসপাতালে। কারও কারও হাতে স্যালাইনের বোতল ধরিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গত ৯ অক্টোবর থেকে চলছে হবু চিকিৎসকদের এই আন্দোলন।
রোগীদের আত্মীয়রা বলছেন, ‘আমরা মরি-বাঁচি তাতে কারও কিছু যায় আসে না। শুধু রাজনীতি চলছে।’ চরম অমানবিকতার অভিযোগ তুলছেন তাঁরা।
শনিবারের পর রবিবারেও দেখা গিয়েছে একই ছবি। হাসপাতাল থেকে ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা। কার্যত দিশেহারা রোগীর পরিজনেরা। হাসপাতালের গায়ে লাগানো রয়েছে পোস্টার, যাতে লেখা রয়েছে, ‘হাসপাতাল চলছে’। কিন্তু হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়ালে দেখা যাবে একেবারে অন্য ছবি।
বারাসাতের বাসিন্দা নারায়ণ বাবু স্ট্রোকে আক্রান্ত। তাঁর ডান দিক অকেজো হয়ে গিয়েছে। বৃদ্ধের আত্মীয়রা জানিয়েছেন বারাসাত হাসপাতাল থেকে আরজিকরে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু আরজি করে আসার পর তাঁদের কয়েকটি ওষুধ দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আবার অ্যাম্বুলেন্সে চাপিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যান আত্মীয়রা। নারায়ণ বাবুর এক আত্মীয় জানান, হাসপাতালে আসতেই অনশন চলছে বলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁদের। লিখে দেওয়া হয়েছে কিছু ওষুধ আর ফিজিওথেরাপি করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এতে মন শান্তি পায় না হাসপাতালে, চিকিৎসা করাতে পারলে ভালো লাগতো।’
একই অভিযোগ সন্ধ্যা দাসের পরিবারের। ৭০ বছরের বৃদ্ধার নাক মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে। চিকিৎসা করানোর জন্য কোনওরকমে টাকা জোগাড় করে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে হাসপাতাল পর্যন্ত নিয়ে এসেছিলেন তাঁর পরিজনেরা। কিন্তু সেই অবস্থাতেই তাঁকে হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। tv9 বাংলার ক্যামেরায় ধরা পড়েছে আরও এক রোগীর ছবি। গুরুতর অসুস্থ সেই রোগীকেও ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাঁর পরিজনের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে স্যালাইনের বোতল। রোগীর আত্মীয়দের কথায়, ‘সান্তনা পুরস্কার হিসেবে এই স্যালাইনের বোতল ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ তিনি জানিয়েছেন, রোগী পেটের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন কয়েকদিন ধরেই। এখনও কালো বমি করছেন তিনি। তারপরও ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁকে।
শুক্রবারই স্বাস্থ্য ভবনে স্বাস্থ্য সচিবের নেতৃত্বে ছয় সদস্যর একটি কমিটি তৈরি করা হয়। পাশাপাশি অধ্যক্ষ ও এমএসভিপি বাদ দিয়েই ছাত্র ছাত্রীদের সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য ভবনে অনশনকারী প্রতিনিধিদের সঙ্গে স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যের বৈঠক হয়। বৈঠকের পরে স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
যদিও আন্দোলনকারীরা এতে খুশি নন। তাঁদের বক্তব্য, “প্রিন্সিপ্যাল স্যার গত তিনমাস ধরে কলেজে ভয় ভীতির পরিস্থিতি তৈরি করেছেন। অগণতান্ত্রিক উপায়ে কলেজ চালিয়েছেন। আমাদের এটাই ভয়, অধ্যক্ষ যদি কলেজে থেকেই যান তা হলে এই কমিটির উপরও প্রভাব খাটাবেন।”
ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি, ‘স্বচ্ছ হাউজস্টাফশিপ কাউন্সেলিং, স্বচ্ছ স্টুডেন্ট কাউন্সিল, লেডিজ হস্টেলের ব্যবস্থা, নিরপেক্ষ হস্টেল কমিটি গঠন এগুলো তো কলেজ কর্তৃপক্ষের স্বাভাবিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।’ এখনও নিজেদের দাবিতেই অনড় রয়েছেন তাঁরা।
অথচ শুক্রবারই আরজিকরের ছাত্র ছাত্রীদের অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে অনড় থাকা নিয়ে রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান সুদীপ্ত রায়ের কড়া প্রতিক্রিয়া ছিল, ছাত্রদের অনড় অবস্থানের জন্য রোগী পরিষেবা ব্যাহত হলে তা কখনওই মেনে নেওয়া হবে না। যদিও বাস্তবে তা কতটা ফলপ্রসূ হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা শুরু।
আরও পড়ুন: NCTE 2021: প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে একাধিক বদল, বড় ঘোষণা