‘এই ক’টা টাকা মাইনে, এ ভাবে বদলি করে দিলে চলে?’, SSK শিক্ষিকাদের যন্ত্রণার বারমাস্যা
প্রাথমিক স্কুল শিক্ষকদের তুলনায় এদের সুযোগ সুবিধা নগন্য। কিন্তু কাজে বিশেষ হেরফের নেই।
যে বেতন পরিকাঠামোর বদল এবং দুমদাম বদলি রুখতে চেয়ে বিকাশ ভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়েছিলেন এই শিক্ষিকারা, তাঁদের বেতন মাসে ১০ হাজার টাকা। অবসরের পর এককালীন ৩ লক্ষ টাকা দেয় সরকার। পেনশনের কোনও সুবিধা এখানে নেই। এমন সমস্ত শর্ত মেনেই কাজ করেন এসএসকে, এমএসকে’র শিক্ষিকারা। কিন্তু এতে কি সত্যি দিন চলে?
প্রাথমিক স্কুল শিক্ষকদের তুলনায় এদের সুযোগ সুবিধা নগন্য। কিন্তু কাজে বিশেষ হেরফের নেই। তারকেশ্বর পুরসভার এসএসকে শিক্ষিকা মঞ্জু দে জানালেন, কচি কাঁচাদের পড়াচ্ছেন কয়েক বছর হয়ে গেল। তাঁর হাত ধরে উজ্জ্বল আগামীর স্বপ্ন দেখে অনেক ক্ষুদে চোখই। কিন্তু তাঁর ঘরেই অন্ধকারের ছায়া।
মঞ্জু দে’র কথায়, “কোনও সরকারি সাহায্য আমরা স্কুল থেকে তেমন পাই না। একটা মানুষ ১০ হাজার টাকা পায়। তাতে কি চলে? প্রাইমারির সমান সমান না হোক কিছু বাড়ালে তাও ভাল। আমাদের স্কুলে দু’টো ঘর। বাচ্চা অনেক। ওরা ঠিকমতো বসতে পর্যন্ত পারে না।”
সরকার পরিকাঠামো উন্নতিতে নজর দিক, চান তারকেশ্বরের এই শিক্ষিকা। সঙ্গে দাবি, এসএসকে শিক্ষিকাদের যত্রতত্র বদলি বন্ধ হোক। এত কম মাইনেতে অন্য কোথাও থাকা খাওয়া মোটেই সম্ভব নয়। এসএসকে শিক্ষিকা হিসাবে চাকরি পাওয়ার সময় ৪ হাজার টাকা বেতন ছিল মঞ্জুদেবীর। এখন পান ১০ হাজার টাকা। যতটুকু মাইনে বেড়েছে, সবটাই আন্দোলনের জেরে। বদলি রুখতেই সেই পথেই হাঁটতে চান তাঁরা। তবে এ ক্ষেত্রে গলায় বিষ ঢেলে দেওয়ায় সমর্থন নেই মঞ্জুদেবীর।
তাঁর কথায়, “সংগ্রাম করতে গেলে সংগ্রাম করাটাই ভাল। কিন্তু বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টাকে কখনওই আমি সমর্থন করি না।”
অন্যদিকে হরিপাল ব্লকের এসএসকে শিক্ষিকা মুক্তি বারিকের কথায়, “গ্যাসের দাম বলুন বা জিনিস কেনা। বাজারহাট করতে গেলে এই টাকার কোনও মূল্য আছে? কাঠ এনে কোনও রকমে রান্না করি। অনেক দূরে স্কুলে যাই। যাতায়াতেরও তো খরচ রয়েছে। এই বেতনে হয়? কোনও মতেই সম্ভব না। বাড়িতে কারেন্টটা রয়েছে। তার বিলটা তো আমাদের দিতে হয়। বাড়িতে অসুস্থ হলে তার চিকিৎসা আছে। আমার নিজেরও তো বয়স হয়েছে।” নিজেদের ভোগান্তির পাশাপাশি মু্ক্তিদেবীর গলায় পরিকাঠামো নিয়েও ক্ষোভ। মুক্তি বারিকের কথায়, “শিক্ষিকা নেই। এতগুলো বাচ্চা পড়ে। বেশির ভাগ স্কুলেই একজন করে শিক্ষিকা।”
বহু প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়ে দিন গুজরান মঞ্জু দে, মুক্তি বারিকদের। তবু তাঁরা লড়ে যাচ্ছেন। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় কেউ কেউ একটু বেশিই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তবে সে সব ছাপিয়ে লড়াই চলবে বলেই দাবি এই এসএসকে শিক্ষিকাদের। আরও পড়ুন: ‘কোয়াক’দের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ‘ব্যবহার’ মেনে নেওয়া হবে না! আন্দোলনের হুঁশিয়ারি ডক্টর্স ফোরামের