আগামী ৮ জুলাই ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ভোট পশ্চিমবঙ্গে। শুরু হয়ে গিয়েছে মনোনয়নপর্ব। আজ মঙ্গলবার তার চতুর্থদিন। তৃতীয়দিনে লাঠালাঠি, রক্তারক্তির ছবি দেখা গিয়েছে বর্ধমানের বরশুল থেকে মুর্শিদাবাদের ডোমকলে। চতুর্থদিন অশান্তি সামাল দিয়ে মনোনয়নপর্ব চলবে নাকি সোমের পুনরাবৃত্তি মঙ্গলেও, সেদিকেই দিনভর নজর থাকবে। অন্যদিকে কমিশনের ভোট ঘোষণার পাঁচদিন পর আজ সর্বদল বৈঠক। বিকেল ৪টেয় এই বৈঠক হবে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দফতরে এই বৈঠক হবে। রাজ্যের সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলকে এই বৈঠকে ডাকা হয়েছে। সমস্ত দলেরই প্রতিনিধি থাকবেন বলে সূত্রের খবর।
সকাল থেকেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল ভাঙড়। সেই ভাঙড়েই ‘নবজোয়ার’ কর্মসূচিতে পৌঁছলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে এক ঝলক দেখার জন্য রাস্তার দু’পাশে ভিড় জমে যায় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের।
পশ্চিম মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, মুর্শিদাবাদের পর এবার উত্তর দিনাজপুর। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান প্রায় ১০০ জন কর্মীর। এদের মধ্যে রায়গঞ্জ ব্লকের শীতগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ও স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যরাও রয়েছেন বলে খবর। মঙ্গলবার দুপুরে রায়গঞ্জে জেলা পার্টি অফিসে যোগদানকারীদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন বিজেপির জেলা সভাপতি বাসুদেব সরকার। দলবদলু নেতা কর্মীদের বক্তব্য, চাকরি-সহ একাধিক দুর্নীতির কারণে ‘চোর চোর’ স্লোগান শুনতে হয় তাঁদের। সেই কারণে তাঁরা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন।
বিস্তারিত পড়ুন: Panchayat Elections 2023: চোর শুনতে-শুনতে বীতশ্রদ্ধ, বসতে পারছেন না চায়ের দোকানেও! একঝাঁক তৃণমূলী পদ্মফুলে
মনোনয়নকে কেন্দ্র করে গোটা রাজ্যে যখন গোলমালের ছবি প্রতিদিনই উঠে আসছে, ঠিক তখনই অন্য ছবি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনিতে। এ দিন বিডিও অফিসে যান দিলীপ ঘোষ। ঠিক তখনই তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা তাঁকে ডাবের জল, ওআরএস খাওয়ান।
মনোনয়ন পর্বে একদিকে যেমন জেলাগুলি থেকে উঠে আসছে অশান্তির খবর, ঠিক তেমনই নির্বাচন যত সামনে আসছে তত বাড়ছে দলবদলুদের সংখ্যা। শাসকদল ছেড়ে কেউ যোগ দিচ্ছেন বিজেপি-সিপিএম-কংগ্রেসে। কেউ আবার বিরোধী দল ছেড়ে তুলে নিচ্ছেন ঘাসফুলের পতাকা। শুধু তাই নয়, পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী হতে পারবেন না শুধুমাত্র এই আশঙ্কা থেকেই আবার শাসকদল ছেড়ে নির্দলে নাম লেখাচ্ছেন কর্মীরা। এই আবহে ফের সামনে এল দলবদলের খবর। এবারের ঘটনাস্থল বীরভূমের নলহাটি। সেখানে তৃণমূল ছেড়ে সিপিএম-এর ঝান্ডা তুলে নিলেন ৪০ জন কর্মী সমর্থক।
একটা গোটা চিত্রপট। মনোনয়ন ঘিরে ব্যাপক বোমাবাজি, গুলি, পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি, পরিস্থিতি সামলাতে টিয়ার গ্যাসের সেল, আক্রান্ত পুলিশ, বিপর্যয়ের সামনে পিছু হটতে বাধ্য প্রশাসন, দোকানের ত্রিপলের আড়ালে লুকোনার প্রয়াস -অগ্নিগর্ভ ভাঙড়ে প্রথমার্ধের দৃশ্যটা ছিল খানিকটা এরকম। দ্বিতীয়ার্ধে দৃশ্যটা পুরোই আলাদা। এবার পুলিশ আবারও নিজ ফর্মে। একেবারে মনোনয়ন কেন্দ্রের ভিতরেই ঢুকে পড়ে পুলিশ। মনোনয়ন জমা দিতে আসা আইএসএফ কর্মীদের একেবারে জামার কলার ধরে টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে তোলার অভিযোগ। আইএসএফ কর্মীদের অভিযোগ, তাঁরা কাগজ দেখানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কোনও কথাই শুনতে চায়নি পুলিশ। গলা ফাটিয়ে চেঁচিয়েছেন তাঁরা, কিন্তু অভিযোগ, পুলিশ ঘাড় ধাক্কা দিয়েই গাড়িতে তুলেছে। মনোনয়ন ঘিরে গোটা দিনের চিত্রপট খানিকটা এরকম।
বিস্তারিত পড়ুন: প্রথমার্ধে ‘ব্যাকফুটে’, দ্বিতীয়ার্ধে বিডিও অফিসের ভিতর থেকে ISF প্রার্থীদের কলার ধরে টেনে গাড়িতে তুলল পুলিশ!
‘ভাঙড়’ (Bhangar), স্রেফ এই একটা এলাকাই আজ চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল বাংলার পঞ্চায়েত নির্বাচনের নিরাপত্তায় আদৌ রাজ্য পুলিশই যথেষ্ট কিনা। মনোনয়নকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সকাল থেকে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ভাঙড়ের বিজয়গঞ্জ বাজার এলাকা। বিডিও অফিসের সামনেই পড়তে থাকে মুড়িমুড়কির মতো বোমা। সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় ধরা পড়ে সেই ছবি। মূলত, আইএসএফ-সিপিএমের অভিযোগ, মনোনয়ন দিতে বাধা দেওয়ায় তৃণমূল এলাকায় বোমাবাজি করে। আইএসএফ কর্মীদের লক্ষ্য করে বোমা, এমনকি গুলি চালানো হয় বলেও অভিযোগ। পাল্টা প্রতিরোধ গড়লে অগ্নিগর্ভের চেহারা নেয় ভাঙড়। বিডিও অফিসের ১০০ মিটার রেডিয়াসের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই চলতে থাকে বোমাবাজি।
বিস্তারিত পড়ুন: ‘মহারণের’ বিপন্নতা দেখাল ‘ভাঙড়’, আক্রান্ত উর্দিধারীরাই! আদৌ কি বাংলার পঞ্চায়েত- নিরাপত্তায় রাজ্য পুলিশই যথেষ্ট?
ভাঙড়ের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ রাজ্য নির্বাচন কমিশনের। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসককে ফোন নির্বাচন কমিশনারের। দ্রুত ভাঙড়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বোমার গর্জন বিডিও অফিসে, চলল ‘গুলি’, পুলিশ ছুড়ল টিয়ার গ্যাস
মঙ্গলবারও উত্তপ্ত ভাঙড়। মনোনয়ন নিয়ে তুমুল উত্তেজনা ভাঙড়-২ ব্লকে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে মনোনয়ন জমা না দিতে দেওয়ার অভিযোগ তুলে কেঁদে ভাসালেন এক আইএসএফ কর্মী। তাঁর অভিযোগ, তৃণমূলের লোকেরা গুলি চালাচ্ছে। প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে দেয়নি। বিডিও অফিসের সামনে থেকে বোমার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে বলেও অভিযোগ।
এদিন নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “যেখানেই ভোট হবে হারবে ওরা। নো ভোট টু মমতা। চোরেদের লোক সাফ করবে।”
পঞ্চায়েত ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। আগামী ৮ জুলাই বাংলায় পঞ্চায়েত নির্বাচন। নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশের পর নির্বাচন বিধি বলবৎ হলে সরকারি জায়গায় রাজনৈতিক দলের হোর্ডিং, ব্যানার রাখা যায় না। সমস্ত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করে সেসব খুলে নেওয়ার কথা জানানো হলেও, যারা এখনও তা খোলেনি, তাদের তা খুলে নেওয়ার কাজ শুরু করে দেওয়া হল পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলে। জেলা প্রশাসনের কর্তারা উপস্থিত থেকে সেগুলি খোলার কাজ শুরু করেছে।
মুর্শিদাবাদের রানিনগর-২ ব্লকে চলছে মাইকিং। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে মাইকিং পুলিশের। সোমবার মনোনয়ন ঘিরে রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল রানিনগর।
সোমবার মনোনয়নপত্র দাখিল করাকে কেন্দ্র করে সিপিএম ও তৃণমূলের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেফতার। ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে শক্তিগড় থানার পুলিশ। ঘটনায় শক্তিগড়ের ওসি-সহ তিনজন পুলিশ কর্মী আহত হন। এছাড়াও সিপিএম ও তৃণমূলের বেশ কয়েকজন আহত হন। শক্তিগড় থানার পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে।
আজ আইএসএফ কর্মীরা ভাঙড়ে মনোনয়ন জমা দেবেন। তার আগে ১০ হাজার কর্মী সমর্থক নিয়ে মিছিল করবেন তাঁরা। থাকবেন নওশাদ সিদ্দিকীও।
প্রার্থী বাছাইকে কেন্দ্র করে আলিপুরদুয়ারের বিবেকানন্দ-২ অঞ্চল তৃণমূল কার্যালয়ে দুই গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব। পরিস্থিতি সামলাতে বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে।
এক তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীর বাড়িতে হামলার অভিযোগ আইএসএফের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ভাঙড়ের চালতাবেড়িয়া এলাকায়। তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীর নাম কুতুবউদ্দিন আলি মোল্লা।
নন্দীগ্রাম-১ ব্লকে মঞ্চ তৈরি করে নির্দল হিসাবে মনোনয়ন বিক্ষুব্ধ তৃণমূল সমর্থকদের। তাঁদের অভিযোগ, হিটলারি কায়দায় দল চলছে। যারা দীর্ঘদিন দল করে এসেছে তাদের প্রার্থী করা হয়নি এবারের নির্বাচনে বলেও অভিযোগ।
আজ সকাল ১০ টায় নন্দীগ্রাম-২ ব্লকে বিজেপি প্রার্থীদের মনোনয়নপর্ব। থাকবেন শুভেন্দু অধিকারী। নন্দীগ্রাম রেয়াপাড়া পেট্রোল পাম্প থেকে ৩০০ মিটার পদযাত্রা করে রেয়াপাড়া ব্রিজ পর্যন্ত যাবেন। তবে এরপর ১৪৪ ধারা থাকায় ব্রিজ থেকে টোটোয় চেপে বিডিও অফিস পর্যন্ত গিয়ে মনোনয়ন জমা দেবেন প্রার্থীরা। সেখানেও থাকার কথা নন্দীগ্রামের বিধায়কের।