ভাইফোঁটা শেষ হতে না হতেই বেজে গিয়েছে জগদ্ধাত্রী পুজোর বাজনা। আর জগদ্ধাত্রী পুজো শুনলেই প্রথম আমাদের মাথায় আসে চন্দননগরের কথা। বিশাল বিশাল উঁচু প্রতিমা। ঘাড় কাত করে দেখতে হয় মা'কে।
কোনও পুজোর বয়স পেরিয়েছে ৩০০ বছর তো কোনও পুজোর বয়স পেরিয়েছে ২৫০ বছর। দেবী কোথাও পরিচিত 'রানিমা' নামে তো কোথাও আবার 'বুড়িমা' নামে। তেমনই এক পুজো হল ভদ্রেশ্বরের সুপ্রাচীন তেঁতুলতলা বারোয়ারি জগদ্ধাত্রী পুজো। এ পুজোর অনেক কাহিনি, যা শুনলে চমকে উঠবেন আপনিও।
দেখতে দেখতে পার হয়ে গিয়েছে ২৩১ বছর। তবু আজও সমান জৌলুসের সঙ্গে পালিত হয় তেঁতুলতলার জগদ্ধাত্রী পুজো। সকলে অবশ্য দেবীকে 'বুড়িমা' বলে ডাকেন। এই পুজোর সঙ্গে যোগ রয়েছে নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রেরও। শোনা যায় তাঁর দেওয়ানের হাত ধরেই শুরু হয়েছিল এই পুজোর।
রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের দেওয়ান ছিলেন দাতারাম সুর। গৌরহাটিতে ছিল তাঁর বাস। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের বাড়িতে জগদ্ধাত্রী পুজো দেখে নিজের বাড়িতে মাতৃ আরাধনার ইচ্ছে হয় দাতারাম সুরের কন্যাদের। কৃষ্ণচন্দ্রের অনুমতি নিয়েই দুই বিধবা কন্যা বাড়িতেই শুরু করেন জগদ্ধাত্রী পুজো।
পরে দাতারাম সুরের আর্থিক অবস্থা খারাপ হলে সেই বাড়ির পুজো বেড়িয়ে আসে রাস্তায়। হয়ে ওঠে বারোয়ারি পুজো। এদিকে তখন পর্দা প্রথার যুগ। বাড়ির মেয়েরা বাইরে এলেও থাকতে হত পর্দার আড়ালে।
ঘোমটা তুলে লোক সমক্ষে বাড়ির মহিলাদের আসায় ছিল কড়া নিষেধাজ্ঞা। তাহলে মায়ের পুজোর কাজকর্ম করবে কারা? সবচেয়ে বড় কথা পুজোর শেষে দশমীতে মা'কে বরণ করবেই বা কে? বরণ ছাড়া তো আর বিসর্জন সম্ভব নয়! মহাবিপদে পড়ল পুজোর উদ্যোক্তরা।
অগত্যা এগিয়ে এলেন পুরুষরাই। পুরুষরাই গায়ে তুললেন শাড়ি। তাঁরাই মহিলা সেজে বরণ করেন দেবীকে। সেই থেকে আজ অবধি এই প্রথা মেনেই চলে দেবীর বরণ। ১৩ জন পুরুষ শাড়ি পরে, মাথায় ঘোমটা দিয়ে সারেন পুজোর জোগার থেকে মেয়ের বরণ।
কথিত 'বুড়িমা' নাকি খুবই জাগ্রত। শুদ্ধ মনে দেবীর কাছে পুজোর সময় কিছু চাইলে পূরণ হয় মনস্কামনা। আজও বহু মানুষ প্রত্যেক বছর ভিড় জমান এই পুজোয়। (সব ছবি - Getty Images)