বাঙালির সঙ্গে দুর্গাপুজোর ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে কতগুলি শব্দ। তা হল ‘ঐতিহ্য’, ‘পরম্পরা’, ‘খাওয়া-দাওয়া’, ‘উৎসব’, ‘সংস্কৃতি’। আর এই সব শব্দের সঙ্গে নবতম সংযোজন পুজোর অর্থনীতি।
দুর্গাপুজোকে ঘিরে সারা বছর আশায় বুক বাঁধে বহু মানুষ। কুমোরপাড়ার মৃৎ শিল্পী, ঢাকি, থেকে শুরু করে পুজোর সময় রাস্তার ধারে স্টল দেওয়া লোকটা, হকাররা এই তালিকা শেষ হওয়ার নয়। এমনকি পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির জন্যও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই দুর্গাপুজোই। গত বছর দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে প্রায় ৮৪,০০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে। যা রাজ্যের জিডিপির ২.৫৮ শতাংশই।
তবে দুর্গাপুজো কেন রাজ্যের অর্থনীতির জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ?
আসলে এই পুজোকে কেন্দ্র করে প্রকৃতপক্ষে নানা ধরনের আর্থিক পরিসর তৈরি হয়। বাজার অর্থনীতির যাকে বলে ‘মানি সার্কুলেশন’। কোনও রাজ্য বা দেশের অগ্রগতির জন্য এই জিনিসটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি কোভিদের পরে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতেও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া এই ‘মানি সার্কুলেশন’-এর উপরে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল। আবার ‘মানি সার্কুলেশন’ বাড়ানোর জন্য কনজিউমারকে আকৃষ্ট করতে নানা ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ছাড় দেওয়া হয়েছিল।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২০ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এই বিষয়ে ব্রিটিশ কাউন্সিল একটি গবেষণা করে। যেখানে দেখা যায় কম-বেশি প্রত্যেক বছর উৎসবের অর্থনীতি রাজ্যের মোট জিডিপির ২.৫৮ শতাংশ।
সেই রিপোর্ট অনুসারেই দেখা যায় পুজোর অর্থনীতিতেও সবচেয়ে বেশি অবদান থাকে খুচরো বা রিটেল সেক্টরের। পুজোর মরসুমে নানা অফার, ডিসকাউন্ট, সেলের পণ্য বিক্রি, সাহিত্য প্রকাশনা, ফিল্ম রিলিজ এই সবকিছুই পুজোর অর্থনীতির অংশ। তাই আর্থিক দিক থেকেও যে দুর্গাপুজোর অর্থনীতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝা যায় এই থেকেই।
তবে সেই অর্থনীতির আকাশে এবারে যেন ঘুরে বেড়াচ্ছে কালো মেঘ। রাজ্যে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিকতম কিছু ঘটনার প্রভাব পড়েছে বাজারেও। তাই এই বছর কতটা ব্যবসা হবে আর তার প্রভাব কতটা রাজ্যের অর্থনীতির উপরে পড়বে সেটা বলবে সময়।